পর্ব ১ঃ পায়ের তলায় সর্ষে
সেদিন বিকেলের মূল উদযাপন ছিল কফি আর চানাচুরে। কল্পনাদি সবে ধোঁয়া ওঠা চারটে গরম কফির কাপ নামিয়ে রেখে গেছে। আমাদের সান্ধ্য আড্ডাও জমে উঠেছে বেশ। কথা হচ্ছিল কাছে পিঠে কোথাও ঘুরে আসা যায় কিনা, সেই নিয়ে। অর্থাৎ আমাদের চিরায়ত দী-পু-দার বাইরে ঘণ্টা দু-তিনেক, কি খুব বেশি হলে ঘণ্টা চার-পাঁচেকের রাস্তা। মন্দারমণি, ঝাড়গ্রাম কিংবা মেরেকেটে পড়শি রাজ্যের সারান্ডা ফরেস্ট আর নয়তো সাতকোশিয়ার জঙ্গল। এভাবে হাতে গুনে লিস্ট্ করতে গিয়ে মন্দারমণির নাম একেবারে প্রথমেই বাদ পড়ে গেল। কারণ, বার বার গিয়ে এমনিতেই সে জায়গা আমাদের পাশের পাড়া হয়ে উঠেছে। তায় আবার সমুদ্র আর সমুদ্র, বঙ্গোপসাগরের সেই এক কালো ঘোলা জল, আর সেই লাল কাঁকড়ার ঝাঁক। কাঁহাতক আর ওসব ভাল্লাগে। একবার, দুবার, নাহয় পাঁচবার। কিন্তু তারপর? জঙ্গল আর টিলার মধ্যে জোর ডিবেট হচ্ছিল, মধ্যিখানে আমি বোমাটা ফাটালাম। কিছুক্ষণ নীরবতার পর সবাই একযোগে হই হই করে উঠল। মজাকি হো রাহা হ্যায়? ইউরোপ যাওয়া কি আর চাট্টিখানি কথা? কত সব ঝক্কি ঝামেলার ব্যাপার বলো দেখি। ডিটেলে প্ল্যানিং করো রে, হিসেব করো রে, আর তারপর টিকিট কাটো রে। কোথায় নাকি কেষ্টপুরের খাল আর কোথায় সে কৃষ্ণসাগরের অতল নীল জল। মধ্যিখানের দূরত্ব যোজন খানেক মাইল; সেটা কি আর এখানে নাকি যে, ইচ্ছে হল তো পিঠের উপর সুতির ছোট্ট কালো ব্যাগটা টুক করে চাপিয়ে নিলাম। আর তারপর চল্ রে ভোলা, বলে সটান বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির থেকে। তাছাড়া, বাজেটেরও তো একটা ব্যাপার আছে, নাকি?
তবে আমার এই ইউরোপ ভ্রমণের ইচ্ছেটা কিন্তু একেবারে নতুন নয়। অনেকেরই অনেক কিছু স্বপ্ন থাকে। আমিও এই ইচ্ছেটাকে নিয়ে বহুদিন মনের ভেতর সযত্নে গোপন বাগান করে বসে আছি। যারা জানে তারা জানে, মাঝে মাঝেই আমার মাথায় পোকাটা কেমন যেন ছটফট টনটন করে ওঠে। তখন দেশ বিদেশ ঘোরার নেশাটাও ঘাড়ে চেপে বসে; আর সে বাগানে নিত্য নতুন ফুলের চাষ হয়। অবসর সময়ে দেশ বিদেশের ম্যাপ ঘাঁটা আমার একরকম নেশা। বছর পাঁচ হল, অন্তত গোটা পাঁচেক আলাদা আলাদা ইউরোপ ট্রিপের রাফ প্ল্যান আমার তৈরি করাই আছে; কেউ পড়া জিজ্ঞেস করলে গড়গড় করে তার সব ডিটেলস বলে দিতে পারি। সেই যে সেবার কাজের তাগিদে সপ্তাহ তিনেকের জন্য জার্মানি গেছিলাম, তখন থেকেই এই মহাদেশটির প্রতি আমার গভীর আকর্ষণ। তখন ভেবেছিলাম আজ নাহয় কাল, আমরা ছ'জন মিলে একবার একটা বিদেশে ট্রিপ করবই। তারপর সে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। মাঝখানে কোভিড এসে আমাদের প্রায় তিন তিনটে বছর গৃহবন্দী করে ফেলল। আমরাও পারিবারিক দিক থেকে ইতিমধ্যে ছজন থেকে চারে নেমে এসেছি। তখন যে উদ্যোগ নিই নি এখন সেসব ভেবে খুব আক্ষেপ হয়। কিন্তু সে আক্ষেপ আরো গভীর, আরো বিস্তৃত হয়ে শেকড়-বাকড় মেলে ধরার আগে কিছু তো একটা করতেই হত।
সুতরাং ঝুলি থেকে ধীরে ধীরে বেড়াল বের করলাম। প্রথমে কেউই রাজি হয় নি, কিন্তু পরে খাতা পেন নিয়ে বসা হল। আমার হাতে গোটা পাঁচেক অপশন ছিল, সেতো আগেই বলেছি। সেগুলো নিয়ে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ হল। অনেক আলাপ-আলোচনা, আর মাথা চুলকনোর পর ঠিক হল বিদেশ যদি যেতেই হয়, এবং সেই বিদেশ যদি ইউরোপে হয় তাহলে আমাদের গন্তব্য হওয়া উচিত, হয় ইটালি, আর তা না হলে জার্মানি। এই দুই দেশই সৌন্দর্য্য আর ইতিহাসের মিশেলে ইউরোপের অন্যতম সেরা আকর্ষণ। এখানে একটা জিনিস বলা দরকার, একসাথে গোটা ইউরোপ ভ্রমণ করা কিন্তু আমার কখনওই খুব বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় নি। অনেকে যায় (মূলত বিভিন্ন প্যাকেজ ট্যুরে), কিন্তু আমার মনে হয় তারা কিছুই সেভাবে দেখে না বা অনুভব করে না। খালি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গা অন্যের অঙ্গুলিহেলনে ছুটে ছুটে বেড়ায়। কেউ হয়ত দিকনির্দেশ করে কিছু দেখাল, আর তারাও মনে মনে ভাবল, ঠিক তাই তো। ওই তো ওখানে আইফেল টাওয়ার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, আরে ওই তো ওইখানে লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ। তারা অন্যের চোখেই বিদেশ দেখে, নিজেরা চোখ মেলে না। নিজেদের অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করে না। আসল বেড়ানোর মজা কিন্তু শুধু গন্তব্যে নয়, বরং তার প্ল্যানিংয়ে। বই পড়ে, ইন্টারনেটের বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে, আর তারপর বিছানার উপর ম্যাপের পর ম্যাপের বিছিয়ে বসে যা মজা, সেসব তারা উপভোগ করতে পারে না। আমার মতে কোনো নতুন জায়গা সম্বন্ধে জানতে হলে, পড়াশোনার পাশাপাশি সেসব জায়গায় গিয়ে প্রচুর সময়ও দিতে হয়। শুধু ওই একটা দুটো শহর ঘুরলে বা কোনো গন্তব্যে পৌঁছে এক দুঘণ্টা সময় কাটালে সেই দেশ বা সেই জায়গা সম্বন্ধে স্পষ্ট কোনো ধারণা জন্মায় না। আর শুধু তাই নয়, সেখানকার অধিবাসী, বা অন্য কোনো বিদেশি ট্যুরিস্ট, তাদের সাথে অন্তরঙ্গ ভাবে মেলামেশা করাটাও খুব জরুরি। তাদের সঙ্গে একত্রে বসে গল্পগুজব কি হাসি-মশকরা করলে সেই সব দেশের নিজস্ব সভ্যতা-সংস্কৃতি, রীতিনীতি, ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক রকম অজানা তথ্য জানতে পাওয়া যায়। বিদেশের মানুষের সাথে ভাব বিনিময়, এও কিন্তু এক অন্য রকমের আনন্দ। নিজেদের দেশ সম্বন্ধে আমরা সকলেই কম বেশী ওয়াকিবহাল, কিন্তু গোটা দুনিয়ার হাল হকিকত সম্পর্কে আমরা কতটুকুই বা খবর রাখি? মনে রাখতে হবে বিদেশে বেড়ানোর ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা সকলেই বিশ্ব নাগরিক, বৃহৎ বিশ্বের বাসিন্দা। শুধুমাত্র ভারতীয় বা বাঙালি নই। দেশবিদেশের মানুষের সাথে আলাপ পরিচয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া এই এতবড় বিশ্বে আমাদের স্থান কোথায়, বা আমাদের চিন্তাভাবনা ও মতাদর্শের গুরুত্বই বা ঠিক কতটুকু তাও অনুভব করা যায় এই সব আলাপচারিতায়। এখানে আরো একটা জিনিস বলবার আছে। তা হল আমি মনে করি, বেড়াতে বেড়িয়ে সবসময় সেখানকার নিজস্ব খাবার-দাবার, ইংরেজিতে যাকে বলে লোকাল কুইজিন চেখে দেখা উচিত। মনে রাখতে হবে, খাবারদাবারও কিন্তু সেদেশের লোক সংস্কৃতিরই একটা অংশ। আর তাছাড়া ইউরোপের দেশগুলোতে সেখানকার লোকেরা খাবারের মান সম্পর্কে ভীষণ ভাবে সচেতন। লোকাল কুইজিন বা আঞ্চলিক খাবার তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভারতীয় রেস্তোরাঁর খাবারের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর এবং টাটকা। তার পরেও অনেকেই বিদেশে গিয়ে দেশীয় খাবারের খোঁজ করেন। বিদেশে গিয়ে যদি পনীর মাখানি আর তন্দুরি রুটিই খেতে হয়, তাহলে আর বিদেশে যাওয়া কেন বাপু?
কাজের সূত্রে পশ্চিম জার্মানির একটা ছোট্ট অংশ, (কোলোন, প্যাডারবর্ণ, আখেন সহ আরো বেশ কিছু জায়গা) আমি আগেই ঘুরে দেখেছি। সুতরাং, জার্মানির পথঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাবারদাবার এবং মানুষজন সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ একটা ধারণা আমার আগের থেকেই ছিল। অস্বীকার করব না, প্রাথমিক ভাবে তাই ইটালি নয়, বরং জার্মানি যাওয়ারই পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম সময়ের সাথে বাড়ির লোকজনের ইচ্ছের পাল্লা ক্রমশ এবং ক্রমশ ইটালির দিকেই ভারী হয়ে চলেছে, তখন নিজের মত পরিবর্তন করতে একপ্রকার বাধ্য হলাম। অবশ্য মত পরিবর্তনের অন্যান্য কিছু কারণও ছিল। এখানে একবার তার পর্যালোচনা করা যাক। সারা বিশ্ব জুড়েই পর্যটকদের কাছে ইটালির আকর্ষণ এক কথায় অমোঘ। যেসব পাঠকের সময়ের অভাবে বা অন্য কোনো কারণে এখনো ইউরোপের সাথে আত্মিক পরিচয়টা করে উঠতে পারেননি, তাদের অবগতির জন্য জানাই প্রকৃতিগত ভাবে ইউরোপ এমনিতেই ভীষণ রকমের সুন্দর; একবার তার ছোঁয়া লাগল কি লাগল না, তার দিক থেকে আর দৃষ্টি ফেরানো যায় না, কেমন যেন ঘোর লেগে থাকে। কাব্যিক ভাষা অনুসরণ করলে বলা যেতে পারে যে প্রকৃতি তার সমস্ত রূপ, রস, আর সুধা ঢেলেছে এই মহাদেশের বুকে। আর ইউরোপের মধ্যে যে জায়গাগুলি সবথেকে সুন্দর, তার অন্যতম হল ইটালি। একদিকে যেমন তার ভূমধ্যসাগর, অ্যাড্রিয়াটিক সাগর বা টিরেনিয়ান সমুদ্রের সমাহার, সুনীল জলরাশির সীমাহীন সৌন্দর্য্য, তেমনি আবার অন্যদিকে তার বরফে মোড়া ইটালিয়ান আল্পস, সাথে সবুজে সবুজ ডলোমাইটসের উদাত্ত আহ্বান। এই দেশেরই পশ্চিমে রয়েছে দিগন্ত বিস্তৃত টাসকানির মালভূমি অঞ্চল, যার সাইপ্রাস সম্বলিত ঢেউ খেলানো সৌন্দর্য্যে বিশ্বের তাবড় কবি সাহিত্যিক বাঁধা পড়েছেন। এই দেশের উত্তরেই রয়েছে লেক কোমো, যার কাকচোখা জলে লুকোচুরি খেলে মেঘ আর বরফে মোড়া আল্পসের পাহাড়চূড়ার ছায়াছবি। আর শুধুই সে কি প্রকৃতি! সেই যে কোন সুপ্রাচীন কাল থেকে ইতিহাস ওতপ্রোত ভাবে জড়িত হয়ে আছে দেশটির সাথে। বরং বলা যেতে পারে, ইতিহাসই হাঁটি হাঁটি পা পা করে তার প্রথম দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে এই দেশের বুকে। প্রাচীন রোমান সভ্যতার কথা তো আমরা সবাই শুনেছি। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও বিজ্ঞানী তাদের বিচার বিশ্লেষণে জানিয়েছেন এই সভ্যতার বয়স প্রায় তিনহাজার বছর; বিশ্ব ইতিহাসের সময়সারণিতে যা প্রাচীন গ্রিক, মিশরীয় বা সুমেরীয় সভ্যতার সমসাময়িক। এই অতি প্রবীণ সভ্যতার অজস্র নিদর্শন এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদেশের পথে প্রান্তরে। রোম, নেপলস, পম্পেই, বা হারকিউলেনিয়ামের মত শহরগুলো এখনো সেই ভুলে যাওয়া সময়ের স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে। রোমান সভ্যতার পতনের পর থেকে, ধীরে ধীরে খ্রিষ্টধর্মের উত্থান, (যার ইতিহাসও কম রোমাঞ্চকর নয়) আর তারপরে অবশ্যই ক্রুসেড, রেনেসাঁ বা আধুনিক সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, সমাজতান্ত্রিক চেতনার উত্থান ও পতন, এক কথায় সারা বিশ্বের ইতিহাস আবর্তিত হয়েছে এই ছোট্ট দেশটিকে ঘিরেই। রেনেসাঁ ও পরবর্তী সময়ের শিল্পকলা বা স্থাপত্যর শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলি যার অধিকাংশই বিশ্ববন্দিত, সংগৃহীত রয়েছে, এখানকার জাদুঘরে ও আর্ট গ্যালারিতে। এত সব কিছুর যৌথ আকর্ষণ উপেক্ষা করা তো সত্যিই বড় কঠিন।
*
যাব যাব করে বেশ কিছুদিন সময় কাটল। এবার তাহলে আমাদের ভ্রমণসূচি বা আইটেনারি গুছিয়ে নেওয়ার পালা। মনে রাখতে হবে, এই ভ্রমণসূচি কিন্তু পরে আমাদের ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের কাজে লাগবে। সুতরাং শুরু থেকেই এই সূচি বানানোর বিষয়ে আমাদের যত্নবান হতে হবে। ইটালির ভৌগোলিক বৈচিত্র্য, তার সুপ্রাচীন ইতিহাস এবং অবশ্যই শিল্প নিদর্শনের প্রাচুর্য্যর কথা মাথায় রেখে আমাদের এই গোটা ভ্রমণকে মোট ছয়ভাগে ভাগ করে নিলাম। এই বিভাজন আমাদের পরবর্তী ডিটেলিংয়ের কাজে অনেক সুবিধে করে দেবে। বিশেষত আমরা কোথায় থাকব আর কোথায় থাকব না, তা ঠিক করার ক্ষেত্রে এই বিভাজনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের আগামী সফরের প্রত্যেকটি ভাগ নিয়ে পরে বিশদে আলোচনা করব। তবে পাঠকের সুবিধার্থে খুব ডিটেলে না গিয়ে একটি ছক আমি এখানে করে দিলাম। এই ছক থেকে আমার প্ল্যানিংয়ের একটা সাধারণ ধারণা আয়ত্ত করা নিশ্চয়ই সম্ভব হবে।
মোটামুটি এই হল আমাদের সম্পূর্ণ ভ্রমণসূচি। এখানে অভিজ্ঞ পাঠক প্রশ্ন করতেই পারেন যে, আমরা এই পর্যন্ত যা যা প্ল্যান করলাম, এটাই কি সবটুকু? আমাদের এই কদিনের সফরে আমরা কি ইটালির সমস্ত দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসতে পারছি? উত্তর হল না, পারছি না। সব ভ্রমণেই, সে ছোট হোক বা বড়, কিছু না কিছু জায়গা বাদ পড়াটাই কিন্তু দস্তুর। আর তাছাড়া একবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়লে পুরো ছক কষে আইটেনারি মিলিয়ে সব জায়গা পর পর বেড়ানোও যায় না। ছক ভাঙাটাই তখন ছক হয়ে দাঁড়ায়। যেমন এবারের এই সফরে আমাদের সিসিলি বা জেনোয়া শহর দেখা হবে না। তুরিনও যাওয়া হবে না। সত্যি কথা বলতে ডলোমাইটস বা লেক কোমোর জন্যও আলাদা করে আর একটু সময় দিতে পারলে খুব ভাল হত। তবে সেগুলো নাহয় ভবিষ্যতের জন্যই তোলা থাক। বিশেষ করে কুখ্যাত ইটালিয়ান মাফিয়াদের দেশ সিসিলির জন্য আমার আলাদা একটা ফ্যাসিনেশন আছে। কিন্তু বিধি বাম। সব মিলিয়ে হিসেব কষে দেখলাম, এইটুকু ভ্রমণেই আমাদের সময় যাবে পাক্কা উনিশ দিন। আমাদের এই কর্পোরেট অফিসে যেখানে গুনে গুণে ছুটির দিন খরচা করতে হয়, সেখানে এর থেকে বেশী ছুটি নিলে নিশ্চিত বিরাট হট্টগোল শুরু হয়ে যাবে। সে-রিস্ক নেওয়া সমীচীন হবে না।
*
আইটেনারির পর্ব মিটল। যদিও এখানে যত সহজে এসব লিখছি, কাজটা কিন্তু মোটেই তত সহজ ছিল না। বিভিন্ন জায়গা নিয়ে খুঁটিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে, আর তা করতে গিয়ে কত কিছু নতুন তথ্য যে আবিষ্কার করেছি, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। সেসব আর এখানে উল্লেখ করলাম না। এরপর বিভিন্ন জায়গা নিয়ে যখন আলাদা করে লিখব তখন সেসব তথ্য দেওয়ার অবশ্যই চেষ্টা করব। এবার তাহলে আসল প্রস্তুতি পর্বের শুরু। প্রথমেই প্লেনের টিকিট কাটতে হবে, আর তারপর আমাদের বাসস্থান খুঁজে নিতে হবে এই দীর্ঘ উনিশ দিনের যাত্রাপথের জন্য। আমাদের যাত্রা শুরু যেহেতু রোম থেকে, কলকাতা থেকে রোমের কানেকটিভিটির খোঁজ শুরু করলাম। কিন্তু ঘটনা হল, কলকাতা থেকে রোম কেন, ইউরোপের কোনো শহরেই এখন আর ডায়রেক্ট যাওয়া যায় না। কোভিড আসার কিছুদিন আগে অবধিও কলকাতা থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টের একটা ডায়রেক্ট ফ্লাইট ছিল (লুফত্হানসা চালাত), কিন্তু বহুদিন সেটা বন্ধ হয়ে আছে। কবে কিভাবে সে ফ্লাইট রিজিউম হবে তা এখন প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতার বাঁধনে বাঁধা। এবং ভবিষ্যতে আদৌ সে ফ্লাইট রিজিউম হবে কিনা তারও কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। সুতরাং, আমাদের মাঝখানে কোথাও না কোথাও একটা লে-ওভার নিতে হবে। এখানে বেশ কিছু অপশন আছে। এবং প্রথম অপশন অবশ্যই দিল্লি। কিন্তু তার একটা অসুবিধে হচ্ছে, ভায়া দিল্লি অধিকাংশ ফ্লাইটই মাঝখানে আরো একটা স্টপ নেয়, সুতরাং জার্নির সময়টা বেড়ে যায় ভীষণভাবে। সেক্ষেত্রে অন্য একটা অপশন হল, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ হয়ে যাওয়া। ঠিক করলাম, আমরা যাব ভায়া আবু ধাবি। সেক্ষেত্রে আমাদের টোটাল জার্নির সময় নেমে আসবে মাত্র চোদ্দ ঘণ্টায়। কিন্তু ফেরার পথে আমাদের আর অন্য কোনো উপায় রইল না। দেখলাম ভেনিস থেকে কলকাতা ফিরতে গেলে মাঝে অন্তত দুটো স্টপ দেওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে ঠিক হল আমরা প্রথমে ভেনিস থেকে যাব তুরস্কের রাজধানী শহর ইস্তানবুল। আর সেখান থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতা ফিরব।
টিকিটের ব্যবস্থা তো হল। এরপর হোটেল। এদিকে হোটেল খুঁজতে বসে তার ভাড়া দেখে আমাদের তো চক্ষু চড়কগাছ। আমরা ইটালি যাচ্ছি জুন মাসে। সেটা গরমের সময়। আর সামার সিজনে ইটালিতে বিশ্বের তাবড় প্রান্ত থেকে লোকেরা এসে ভিড় জমায়। আর তাই সেসময় হোটেলের ভাড়াও থাকে অত্যন্ত বেশী। সেক্ষেত্রে অন্য একটা উপায় হতে পারে এয়ারবিএনবি ঠিক করা। এ প্রসঙ্গে বলি, বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে এই এয়ারবিএনবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ওয়েবসাইট। কারণ, এয়ারবিএনবিতে হোটেল নয়, বিভিন্ন ভ্যাকেশন রেন্টালের খোঁজ পাওয়া যায়। ব্যাপারটা ঠিক কিরকম একটু বুঝিয়ে বলি। ধরা যাক আমরা 'ক' নামের কোনো এক জায়গায় বেড়াতে যাব। তাহলে আমরা যে জায়গায় বেড়াতে যাব, (এক্ষেত্রে 'ক') সে জায়গার নাম সিলেক্ট করে, কবে থেকে কবে আমরা সেখানে থাকব এবং কতজন মিলে থাকব সেইটুকু বলে দিলেই এয়ারবিএনবি লিস্ট করে দেবে আমাদের জন্য ওই সময়ে ঠিক কি কি ভ্যাকেশন রেন্টাল খালি আছে। এখানে ভ্যাকেশন রেন্টাল কিন্তু কোনো বড় হোটেল নয়, বরং সাধারণ মানুষের নিজস্ব বসতবাড়ি যা তারা ট্যুরিস্টদের জন্যই সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে। অনেকেই তার নিজের বাড়ির একটা কি দুটো রুম ছেড়ে দেয়, নিজেরা অন্য অংশে সংসার পেতে থেকে। আবার অনেকে পুরো বাড়িটাই, (এক্ষেত্রে সাধারণত ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট) টুরিস্টদের জন্য খালি করে দেয়। এসব বাড়ির মজা হল, নিজের বাড়ির মত করেই এদের ব্যবহার করা চলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব বাড়িতে ছোটখাটো একটা কিচেন থাকে; ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ, চিমনির মত ইকেকট্রনিক সব উপকরণ থাকে, ওয়াইফাই থাকে, জামা কাপড় কাচার ব্যবস্থা থাকে; এমনকি বইয়ে ঠাসা বুক শেলফ, টিভি আর মিউজিক সিস্টেমও থাকে। অনেক বাড়ির মালিকই ট্যুরিস্টদের সুবিধার্থে রান্নাঘরে বাসন-কোসন, কাটলেরি তো বটেই, তার সাথে দুধ, কফি, চা-পাতা, এমনকি মশলা পাতিও সব সাজিয়ে রাখেন। তার জন্য আলাদা কোন চার্জ নেয় না। বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে, যদি নিজেরা একটু হাত-পা মেলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে হয়, কিংবা নিজেরা রান্না খাওয়া করে থাকার ইচ্ছে থাকে তাহলে এয়ারবিএনবির বিকল্প কিছু নেই। আর একটা সুবিধা হল, কোন বাড়িতে কি অ্যামেনিটিস রয়েছে সেটাও আগে থেকেই এয়া বিএনবিতে ছবি সহ লিস্ট করে দেওয়া থাকে। বছর পাঁচেক আগে যেবার মালয়েশিয়া গেছিলাম, সেবারই প্রথম এয়ারবিএনবিতে থাকার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। দিন দশেক নিজেদের সংসার পেতে বসেছিলাম। এখন তো শুনি আমাদের দেশেও এয়ারবিএনবির ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। এবারেও ইটালির প্ল্যানিং করতে গিয়ে হোটেলের পরিবর্তে আমরা সেই এয়ারবিএনবিরই আশ্রয় নিলাম।
আমি মনে করি, কোথাও বেড়াতে গেলে সর্বত্র ব্যাগ কাঁধে ছোটাছুটি না করে বরঞ্চ বেশ কয়েকটা দিন নির্দিষ্ট কোনো জায়গায় থেকে যাওয়া বেশি সুবিধাজনক। তাহলে হাতে কিছুটা সময় নিয়ে তার চারপাশের অঞ্চলগুলো ঘুরে দেখা যায়। তাতে পরিশ্রমটাও হয় কম। আবার ঘোরাটাও হয় অনেক মসৃণ। প্রসঙ্গত, বিদেশে নিজের বাসস্থান খুঁজে নেওয়া কিন্তু খুব সহজ কাজ নয়। আগ্রহী পাঠকের অবগতির জন্য জানাই, এক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু অলিখিত নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রথমত, বিদেশে আমাদের বাসস্থান ঠিক করতে হবে এমন এলাকায়, যেখান থেকে কাছাকাছি দ্রষ্টব্য স্থানগুলো খুব সহজেই ঘুরে দেখা যায়। পায়ে হাঁটা দূরত্ব হলে সবথেকে ভালো। এর মাধ্যমে অতিরিক্ত ট্রাভেল কস্ট সাশ্রয় করা যাবে। মনে রাখতে হবে, ইউরোপের দেশগুলিতে এক ইউরোর সাশ্রয়ও কিন্তু ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় নব্বই টাকার সাশ্রয়ের সমান। তাই এই দিকে নজর রাখাটা বাঞ্ছনীয়। দ্বিতীয়ত, লক্ষ্য রাখতে হবে গন্তব্যে পৌঁছে যাতে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়। অর্থাৎ, প্রয়োজনে ট্যাক্সি বা অ্যাপ ক্যাব পাওয়া যাবে, আর তা নাহলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, যেমন বাস, ট্রেন কিংবা মেট্রো ধরার সুবিধে থাকবে। তৃতীয়ত, (এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ) যেহেতু আমরা হোটেলে থাকছি না, তাই কাছাকাছির মধ্যে রেস্টুরেন্ট বা গ্রসারি স্টোর আছে কিনা সেটা দেখে নেওয়াটাও জরুরি। ইউরোপের দেশগুলিতে গ্রসারি স্টোরে নানা ধরণের রেডিমেড ব্রেকফাস্ট বিক্রি হয়। আর তা ছাড়া পাঁউরুটি, বিস্কুট, ডিম, চিজ, মাখনের মত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনতে পাওয়া যায় এইসব দোকানে। সবসময় বাইরের খাবার খেতে ইচ্ছে না করলে এগুলো দিয়ে দিব্যি কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়। মেট্রো সিটি, যেমন রোম বা মিলানের মত শহরে থাকার জায়গা খোঁজা তুলনামূলক ভাবে সহজ। গোটা শহর জুড়েই বিভিন্ন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যেমন, বাস, ট্রাম, ট্রেন, এবং মেট্রোর যৌথ নেটওয়ার্ক। তাছাড়া, প্রয়োজনে উবের আর তা না হলে ট্যাক্সি পাওয়া যায়। কাছাকাছি ছোট বড় রেস্টুরেন্টেরও কোনো অভাব নেই। সমস্যায় পড়লাম বেড়ানোর দ্বিতীয় ভাগ অর্থাৎ ক্যাম্পানিয়া অঞ্চলে থাকার জায়গা খুঁজতে গিয়ে। এই অঞ্চলে নেপলস বা নাপোলি হল সবচেয়ে বড় শহর। ইটালির অন্যতম বৃহৎ সমুদ্র বন্দরও এই নাপোলি। কিন্তু নাপোলির অবস্থান ক্যাম্পানিয়ার এক প্রান্তে। সেখান থাকলে এই অঞ্চলের অন্য জায়গাগুলোয় ট্রাভেল করতে বেশি সময় লেগে যাবে। আমাদের দরকার ছিল এমন একটা জায়গা যেখান থেকে ভিসুভিয়াস, পম্পেই বা হারকিউলেনিয়ামের মত শহরগুলো সহজে ঘোরা যাবে। আবার কেপ্রি আইল্যান্ড বা অ্যামালফি কোস্টের মত সমুদ্র সৈকতগুলোও খুব দূর হবে না। শেষ পর্যন্ত ম্যাপ ঘেঁটে যে জায়গায় থাকব বলে আমরা ঠিক করলাম, তার নাম - টোরে ডেল গ্রেকো। ক্যাম্পানিয়া সমুদ্র উপকূলের ছোট্ট এই জায়গাটাকে শহর বলা খুবই অন্যায় হবে, তবে তা নিতান্ত গ্রামও নয়। বস্তুত, টোরে ডেল গ্রেকো হল এক ছোট্ট শান্ত জনপদ, পরিবেশ পরিস্থিতিতে যা এক্কেবারে আমাদের মফস্বল শহরের সাথে তুলনীয়। এই নিঝুম জনপদের যেখানেই দাঁড়াও না কেন, মাথা তুললেই উত্তরে ভিসুভিয়াসের চূড়া দেখা যায়। সে চূড়ায় যেন সবসময় মেঘ ভিড় করে থাকে। এই টোরে ডেল গ্রেকোর যাত্রাপথ নিয়েও বেশ কিছু মজার অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলি যথাস্থানে লিখব। তবে এখানে আরো একটা জায়গার উল্লেখ না করলেই নয়। ইটালিয়ান রিভিয়েরা অঞ্চলে আমরা থাকার প্ল্যান করেছিলাম লা স্পেজিয়া নামের এক শহরে। এই শহরটিকেও সিলেক্ট করার একমাত্র কারণ ছিল তার সেন্ট্রাল লোকেশন। কিন্তু এবার এয়ারবিএনবি বুক করতে গিয়ে পড়লাম বেজায় মুশকিলে। দেখা গেল, মূল শহরের মধ্যে থাকার জায়গা আর একটিও অবশিষ্ট নেই। সব বুকড। অনেক খোঁজা খুঁজির পর শেষ পর্যন্ত শহরের একটু বাইরে, পাহাড়ের উপরদিকে একটা ভালো অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া গেল। আমরাও আর উপায়ান্তর নেই দেখে চোখ বুজে সেটাই রিজার্ভ করে নিলাম। তখনই আন্দাজ করেছিলাম, একটু রিমোট লোকেশন হওয়ার দরুণ এই অ্যাপার্টমেন্টের ধারে কাছে কোনো রেস্টুরেন্ট বা গ্রসারি স্টোর থাকবে না। পরে অবশ্য সে জায়গায় পৌঁছে আমাদের কোনরকম কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় নি। আসলে লা স্পেজিয়া পৌঁছানোর আগেই আমরা ঘরে বসে কিভাবে অনলাইনে খাবার অর্ডার করতে হয় তা শিখে গেছিলাম। এই ফুড ডেলিভারি অ্যাপগুলো বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেক সহায়তা দিয়েছে। এখানে এটাও উল্লেখ্য, প্রাথমিক ভাবে সামান্য দ্বিধা থাকলেও লা স্পেজিয়ার সেই অ্যাপার্টেমেন্ট কিন্তু আমাদের এই সফরের অন্যতম সেরা অ্যাকমোডেশন ছিল। এবং তার ঘর লাগোয়া খোলা বারান্দা থেকে রাতের শহরের দৃশ্য, সে অভিজ্ঞতাও ভোলার নয়।
মিলানের রাস্তায় ট্রাম
থাকার জায়গা ঠিক করার পরের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ট্রান্সপোর্ট, অর্থাৎ শহর থেকে শহর যোগাযোগের মাধ্যম ঠিক করা। ইটালিতে আমরা থাকছি মোট সাত জায়গায়। যথাক্রমে রোম, টোরে ডেল গ্রেকো, সিয়েনা, ফ্লোরেন্স, লা স্পেজিয়া, মিলান আর ভেনিস; মোট দিনের নিরিখে সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। আর তাছাড়া বিদেশযাত্রা মানেই হল সঙ্গে যাবে প্রচুর লটবহর, বড় বড় ব্যাগ আর পেটমোটা স্যুটকেস। যাওয়ার সময় সে ব্যাগ বা স্যুটকেস যদি কোনো অজ্ঞাতকারণে খালি থেকেও থাকে, ফেরার সময় নৈব নৈব চ। আমি আজ পর্যন্ত কোথাও এর কোনো ব্যতিক্রম দেখি নি। সে ফ্রাঙ্কফুর্টের এয়ারপোর্টই হোক কি আমাদের জয়পুরের। পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে বাঙালি তো বটেই, ইউরোপ, আমেরিকা এমনকি আফ্রিকার লোকেদের ক্ষেত্রেও দেখেছি এই ঢাউস ঢাউস ব্যাগ তাদের বিদেশ যাত্রার একটা প্রধান সম্বল আর দূর থেকে ট্যুরিস্ট চেনার সবথেকে ভালো উপায়। আমার অফিসের এক আমেরিকান সাহেব একবার কলকাতায় ঘুরতে এসে মোট নব্বই কেজি লাগেজ নিয়ে প্লেন থেকে নেমেছিলেন। সেখানে আমরা তো নস্যি, নগণ্য মাত্র।
যোগাযোগের মাধ্যম ঠিক করার ক্ষেত্রে এই বিপুল পরিমাণ মাল এক প্রধান সমস্যা। কে টানবে, কোথায় রাখা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশে যেমন গাড়ি ভাড়া করা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার, বিদেশে কিন্তু মোটেও সেরকম নয়। ইউরোপে গাড়িভাড়া খুব বেশি, আর নিজে ড্রাইভিং না জানলে গাড়ি ভাড়া নিয়েও খুব একটা সুবিধে হয় না। কারণ, ড্রাইভারের সংখ্যা অপ্রতুল এবং তারা সাংঘাতিক দর হাঁকে। তবে, ইউরোপের অধিকাংশ দেশই ট্রেনের মাধ্যমে যাকে বলা যায় ভীষণভাবে ওয়েল কানেক্টেড। প্রত্যেকটা বড়, মাঝারি, কিংবা ছোট শহর থেকে শহরের মধ্যে ট্রেন চলাচল করে। এমনকি ট্রেন সফর করে এক দেশ থেকে অন্য দেশেও খুব সহজে এবং অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। তাতে খরচও হয় কম আর তাছাড়া ট্রেনে লাগেজেরও কোন আপার লিমিট থাকে না। এখানে বলে রাখি, ইটালির বিভিন্ন স্টেশনে সামান্য টাকার বিনিময়ে লাগেজ জমা রাখার আলাদা ব্যবস্থা আছে। এই লাগেজ স্টোরেজে নিজেদের মাল পত্র জমা রেখে, স্বচ্ছন্দে শহরগুলো সারাদিন সময় নিয়ে ঘুরে ফিরে দেখে তারপর অন্য গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়া যায়।
গোটা ইউরোপের রেল ব্যবস্থাই এখন বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জার্মানিতে যেমন ডয়েশ-বাহন্, ইটালিতে তেমনই ট্রেনইটালিয়া আর ইটালো। এই দুটি কোম্পানিই গোটা ইটালির রেল ব্যবস্থার দায়িত্বে রয়েছে। আমাদের ভারতীয় রেলে যেমন ট্রেনের নানারকম ভাগ রয়েছে, শহর ভেদে বা অঞ্চল ভেদে যেমন নানা ধরনের ট্রেন চলে, ওদের দেশেও কিন্তু তেমনি। এদের মধ্যে কোনোটা দূরপাল্লার ট্রেন, তো কোনটা আবার রিজিওনাল বা লোকাল ট্রেন; তারও কোনোটা একতলা, আবার কোনোটা দোতলা। দূরপাল্লার ট্রেনগুলো আবার দুই ধরনের - ফ্রেচারোসা (হাই স্পিড, সব স্টেশনে থামে না), আর ইন্টারসিটি। রিজিওনাল ট্রেনের মধ্যে কোনোটা শুধুমাত্র সাধারণ প্যাসেঞ্জারের জন্য, আবার কোনটায় লোকজন রীতিমত পিকনিকের মেজাজে সাইকেল-বাইক বা প্যারাম নিয়ে উঠে পড়ে। রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার জন্য আবার অন্য ধরণের ট্রেন, ইন্টারসিটি নটে। তবে তার সংখ্যা দিনের ট্রেনের তুলনায় খুব বেশি নয়। আসলে এখানে খুব সহজেই দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘন্টা ছয় সাতের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। এমনকি কাছাকাছি দেশের বাইরের শহরগুলো, যেমন জুরিখ বা ভিয়েনা, পৌঁছতেও সাধারণত ঘণ্টা দশ বারোর বেশি সময় লাগে না। আর একটা জিনিসও এখানে চোখে পড়ার মত। এই ট্রেনগুলোর প্রায় প্রতিটিই বাতানুকূল, আর সাথে তার পরিচ্ছন্নতাও এককথায় অসাধারণ। সিটের কোণা হোক বা জানলার ধার, কোথাও ছিটেফোঁটা এক টুকরো ময়লাও চোখে পড়ে না। এমনকি বাথরুম যে বাথরুম, সেও ঝকঝকে পরিষ্কার। সব ট্রেনেই নানা ধরণের বসবার ব্যবস্থা থাকে, তার মাঝখানে মাঝখানে আবার মাল রাখার নির্দিষ্ট জায়গা, সেখানে বড় বড় ব্যাগ নিয়ে রাখা যায়। আমাদের দেশের ট্রেনে যেমন নানারকম শ্রেণি সংরক্ষণের সুবিধা থাকে এখানেও সেরকম। আমাদের প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণির মত এদেরও ফার্স্ট ক্লাস, বিজনেস ক্লাস, সাইলেন্ট বিজনেস ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস ইত্যাদি নানারকম ভাগ রয়েছে। মোটামুটি সব দূরপাল্লার ট্রেনেই একটা করে ছোট প্যান্ট্রি বা বার থাকে, সেখান থেকে সহজেই ইচ্ছামত খাবার বা পানীয় সংগ্রহ করা যায়। তবে ভারতীয় রেলের সাথে ইউরোপীয় রেলের একটা প্রধান পার্থক্য হল ট্রেনের স্পিড বা গতিবেগ। আমাদের দেশে যেখানে সবে বন্দেভারতের মত মাঝারি মানের হাই স্পিড ট্রেন চলা শুরু হয়েছে, সেখানে এই সব দেশে সাধারণ লোকাল ট্রেনের স্পিডই ঘণ্টায় প্রায় দেড়শো কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়, আর দূরপাল্লার ট্রেনগুলো তো গড়ে আড়াইশো থেকে তিনশো কিলোমিটার স্পিডে চলে। ইউরোপের দেশগুলোতে যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে আলাদা ভাবে নজর দেওয়া হয়। ট্যুরিস্টদের সুবিধার্থে ইটালির ট্রেনে গতিবেগ সহ আরো নানারকম প্রয়োজনীয় তথ্য, যেমন ট্রেনের কারেন্ট পজিশন, ম্যাপ, বা পরের স্টেশনের দূরত্ব, পৌঁছানোর সময়, এমনকি সেখানকার টাইমটেবল ইত্যাদিও কামরার ভেতরেই ডিসপ্লে বোর্ডে দেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে যারা ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার বা যাদের কোনো স্টেশনে নেমে ট্রেন বদল করার দরকার থাকে তারা তাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য ট্রেনের ভেতর এই ডিসপ্লে বোর্ড থেকেই পেয়ে যায়, স্টেশনে নেমে খোঁজ খবর করার দরকার পড়ে না।
ফ্রেচারোসা - ইটালির ট্রেন
ট্রেনইটালিয়া আর ইটালোর নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। এই ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা যায়। আমরা আমাদের ট্রেনের বুকিং সব কলকাতা থেকেই করে নিয়ে গেছিলাম। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গার যা সব মূল দ্রষ্টব্য বা আকর্ষণ সেগুলোর বুকিংও অনলাইনে কলকাতা থেকেই করেছি। এর একটা বিরাট বড় সুবিধা হচ্ছে শেষ মুহূর্তে আর টিকিট কাটার জন্য দৌড়াতে হয় না। বিশেষত ইটালিতে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড ভিড় হয়। বিশ্বের সমস্ত প্রান্ত থেকে ট্যুরিস্ট এসে জড়ো হয় ইটালির শহরগুলোতে। মূল দ্রষ্টব্যগুলোর টিকিটের জন্য লম্বা লাইন পড়ে। সে লাইন কখনো কখনো এতটাই লম্বা হয় যে, লাইনে দাঁড়িয়েই ঘণ্টা দুই তিন সময় কেটে যায়। এছাড়াও আবার কিছু কিছু জায়গায় নির্দিষ্ট কোটায় টিকিট ছাড়া হয়। এসব ক্ষেত্রে লাইন লম্বা হলে টিকিট হাতছাড়া হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। তবে অনলাইনে টিকিট কাটলেই যে সব সমস্যার সমাধান হবে তারও কোনো ঠিক নেই। অনলাইনেও অনেক সময় টিকিটের অভাব থাকে। ডোমেন রেস্ট্রিকশনের কারণে কিছু কিছু ওয়েবসাইট আমাদের দেশ থেকে সরাসরি খোলাও যায় না। সেক্ষেত্রে অন্য বিকল্প ওয়েবসাইটের সন্ধান করতে হয়। যেমন, মিলান নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে জানতে পারলাম, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম 'দ্য লাস্ট সাপার' মিলান শহরে সংরক্ষিত রয়েছে। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি আমার কাছে একরকম এনিগমা। একাধারে তিনি শিল্পী, আবার বিজ্ঞানী। রেনেসাঁ ইটালির সময়ে দাঁড়িয়ে তার অতুলনীয় শিল্প কীর্তিগুলো কিভাবে সম্ভব হয়েছে সেটা ভাবলেও অবাক হতে হয়। আর 'দ্য লাস্ট সাপার' তো চরম বিতর্কিত একটি শিল্প কর্ম। এই ছবিটাকে নিয়ে কত রকম কত লেখা, কত কনস্পিরেসি থিওরি পড়েছি বিভিন্ন গল্প উপন্যাসে। ড্যান ব্রাউন আমার খুব প্রিয় একজন লেখক, তার বিখ্যাত উপন্যাস 'দ্য ভিঞ্চি কোড' -এর একটা অংশ এই ছবিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে। এই ছবির সামনে গিয়ে দাঁড়ানো আমার স্বপ্ন। কিন্তু 'দ্য লাস্ট সাপার'-এর জন্য টিকিট বুক করতে গিয়ে দেখি আগামী তিন মাস তার একটি টিকিটও আর অবশিষ্ট নেই। অতঃকিম্? এই সমস্যারও সমাধান করেছিলাম। খোঁজ নিয়ে দেখলাম মিলান শহরে একটি গ্রুপ প্রতিদিন ওয়াকিং সিটি ট্যুরের আয়োজন করে। অর্থাৎ পায়ে হেঁটে গোটা শহর ভ্রমণ। 'দ্য লাস্ট সাপার' এই ট্যুরেরই একটা অংশ হিসেবে প্রদর্শন করা হয়। আর কি? সেটাও সম্পূর্ণ বুক হয়ে যাওয়ার আগে চারটে টিকিট কেটে ফেললাম। তাতে আমার চারগুণ বেশি খরচ হয়ত পড়ল, কিন্তু এইরকম বিশ্ববন্দিত এক শিল্পকর্মের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ কি আর মিস করা যায়? ঘটনাটা এই প্রসঙ্গেই অবতারণা করা যে, সব সময় সব প্ল্যান কিন্তু কাজ করে না। সেক্ষেত্রে প্ল্যান বি খুঁজে বার করার জন্য প্রচুর পড়াশোনা আর নেট ঘাঁটাঘাঁটির দরকার পড়ে। হ্যাঁ, জিনিসটা হয়ত সময় সাপেক্ষ, কিন্তু এর একটা আলাদা মজাও আছে; যে হাতে-কলমে প্ল্যানিং নিয়ে বসবে না, সে এই আনন্দ কখনোই উপভোগ করতে পারবে না।
যেকোনো বিদেশযাত্রার প্ল্যানিংয়ের শেষ পর্যায় (এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়) হল সে দেশের ভিসার অ্যাপ্লিকেশন। এক্ষেত্রে বলা প্রয়োজন, ইটালি, জার্মানি সহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলি ভ্রমণের জন্য এখন আর আলাদা আলাদা করে কোনো ট্যুরিস্ট ভিসা হয় না। গোটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের একসাথে একটাই ভিসা করতে হয়। এই ভিসার নাম হল সেনজেন ভিসা। নামটা শুনতে চিনা মনে হলেও আসলে সেনজেন কিন্তু লুক্সেমবার্গের অন্তর্গত একটি ছোট্ট গ্রাম। এই গ্রামেই ১৯৮৫ সালে সেনজেন এগ্রিমেন্ট ও ১৯৯০ সালে সেনজেন কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপের মোট সাতাশটি দেশ (যেমন ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, স্পেন, ইটালি, সুইজারল্যান্ড ইত্যাদি) পারস্পরিক বর্ডার কন্ট্রোল অবলুপ্ত করে এবং নিজেদের মধ্যে পাসপোর্টের ব্যবহারও বন্ধ করে দেয়। সেনজেন ভিসার মাধ্যমে এখন এই সবকটা দেশ একসাথে ভ্রমণ করাও সম্ভব। যখন সেনজেন ভিসা নিয়ে প্রথমবার জার্মানি গেছিলাম, আমার কিন্তু প্যাডারবর্ন থেকে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম ঘুরতে যাওয়ার একটা পরিকল্পনা ছিল, যদিও সেটা বিভিন্ন কারণে সেসময় আর বাস্তবায়িত হয় নি। প্রসঙ্গত, বেড়ানোর ক্ষেত্রে সেনজেন ভিসা পাওয়া এখন অপেক্ষাকৃত সহজ। আর সে কারণেই বিভিন্ন ট্যুর কোম্পানিগুলো আজকাল সম্পূর্ণ ইউরোপ ভ্রমণের বিভিন্ন প্যাকেজ বিক্রি করে। সেনজেন ভিসার অ্যাপ্লিকেশনের জন্য সরাসরি সে দেশের কনস্যুলেটে যোগাযোগ করা যায়। তবে অ্যাপ্লিকেশনের সহজতম উপায় হচ্ছে ভিএফএস গ্লোবালের সাহায্য নেওয়া। এই কোম্পানিটি ইন্ডিয়া সহ বিভিন্ন গভর্মেন্টের ভিসা প্রসেসিং করে থাকে। কলকাতার কসবাতে ভিএফএসের অফিস রয়েছে। ভুটান, বাংলাদেশ সহ গোটা পূর্ব ভারতের ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম এখন এই অফিস থেকেই হয়। আর একটা কথা, যেকোনো ভিসা অ্যাপ্লিকেশনের জন্যই এখন প্রচুর ডকুমেন্টেশনের প্রয়োজন পড়ে। ডকুমেন্টেশনের ডিটেলস লিখে সবাইকে বোর করব না, তবে কয়েকটা থাম্বরুল এখানে না উল্লেখ করলেই নয়। প্রথমত, ভিসা অ্যাপ্লিকেশন হাতে সময় নিয়ে করা ভালো। অ্যাপ্লিকেশনের সময় পাসপোর্ট জমা নিয়ে নেওয়া হয় আর সেটা হাতে ফেরত আসতে অন্তত সপ্তাহ তিনেক সময় লাগে। দ্বিতীয়ত, অবস্থা বিশেষে ভিএফএসের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতেও প্রায় একমাস কি দুমাস সময় লেগে যায়। সুতরাং, জার্নির দু থেকে তিন মাস আগেই ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করে ফেলা দরকার। আমরা যেমন মাত্র দুমাস আগে ভিসা অ্যাপ্লাই করতে যাওয়ায় হাতে সময় পেয়েছিলাম খুব কম। প্লেনে ওঠার মাত্র দু সপ্তাহ আগে আমাদের হাতে ভিসা এসে পৌঁছায়।
ভেনিস থেকে সূর্যাস্ত
ব্যস, এবার তাহলে গোছগাছ শুরু। জামাকাপড় থেকে কাঁচি সাবান, ওষুধপত্র, কি ম্যাগির প্যাকেট সব কিছুই এবার গুছিয়ে গাছিয়ে প্যাক করে নেওয়ার পালা। সমস্ত বাড়ি জুড়ে জিনিসপত্রের স্তূপ হয়ে আছে। আলগোছে তোলপাড় তোলো রে, এদিকে এখানে ওখানে সব কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছত্রাখান। মোজাটা এবার গোঁজো রে। ওইখানে জ্যাকেটটা এবার ঢোকাও রে। জুন মাসের ভ্যাপসা গরমে আমরা চারজন পেটমোটা ছ'টা ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ার জন্য এক্কেবারে প্রস্তুত। স্বপ্নের মত লাগলেও ইটালি আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তার সুদীর্ঘ ইতিহাস, শিল্পকর্মের নান্দনিকতা, সৌন্দর্য্য নিয়ে সে যেন আমাদেরই প্রতীক্ষায় দিন গুনছে। চোখ বুজলেই শুনতে পারছি ভূমধ্যসাগরের ঢেউয়ের আওয়াজ, তার অসীমের ইঙ্গিত।
*******
18 January, 2024
Fantastic. Very smooth flowing language . Lucid and picturesque.Eagerly waiting for the next part. Heartiest congratulations Rajarshi .
19 January, 2024
কোনো ভ্রমণের প্রস্তুতি পর্বের বিবরণ এত সুন্দর এবং বিস্তারিত হতে পারে ধারণা ছিল না।মূল পর্ব গুলিও নিশ্চয়ই এমনি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।
19 January, 2024
খুব ভালো এবং নিঁখুতভাবে ফুটিয়ে তোলা দৃশ্য। অজানা কতকিছু জানতে পারলাম।
20 January, 2024
ভ্রমণের প্রস্তুতি পর্বের অসাধারণ বিবরণ। আশা করি পরবর্তী পর্বও অসাধারণ হবে।