ভাষা ও চিত্রে অশ্লীলতার প্রতিফলন: শিক্ষার্থীদের চিন্তার অবক্ষয়

লিখেছেন:বিক্রমজিৎ চট্টোপাধ্যায়

ভূমিকা

ভাষা এবং চিত্র কেবল প্রকাশের মাধ্যম নয়; এটি মানুষের মনোজগতের প্রতিফলন, যা তার চিন্তা, মূল্যবোধ, এবং সংস্কৃতির গভীরে প্রবাহিত। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভাষা ও চিত্র হয়ে ওঠে তাদের আত্ম-অন্বেষণ, কল্পনা, এবং সৃজনশীলতার দর্পণ। কিন্তু যখন এই দুই মাধ্যমেই অশ্লীলতার ছাপ পড়তে থাকে—যেমন অপভাষার ব্যবহার বা অশ্লীল চিত্রায়ণ—তখন তা তাদের মানসিকতা ও সামাজিক প্রভাবের এক উদ্বেগজনক প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই প্রবণতা তাদের মনের অবদমিত কৌতূহল, সীমাবদ্ধতার প্রতি প্রতিবাদ এবং সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির অনিয়ন্ত্রিত প্রভাবেরই এক রূপ।

অপভাষা ও অশ্লীল চিত্রের প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ শুধু তাদের ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি নয়; বরং এটি সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি, শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এবং সাংস্কৃতিক সংকটকেও তুলে ধরে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতার প্রসার, এবং কিছু ক্ষেত্রে পরিবার ও শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় এই পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এমনকি প্রথাগত মূল্যবোধের বাইরে গিয়ে নিজেদের প্রমাণ করার এক প্রবল আকাঙ্ক্ষা থেকে শিক্ষার্থীরা অপভাষা ও অপচিত্রের আশ্রয় নিচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ মূল্যবোধ ও সমাজের গঠনশীলতার ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রবাহমান নিবন্ধে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপভাষার ব্যবহার এবং অশ্লীল চিত্রায়ণের প্রবণতা নিয়ে দুটি পর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কিভাবে অপভাষা ও অপচিত্র শিক্ষার্থীদের মনোজগতে এক গভীর ছাপ ফেলছে এবং তাদের সৃজনশীলতা ও নৈতিক মানসিকতাকে বিকৃত করছে। প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, এবং পারিবারিক ও শিক্ষাগত সীমাবদ্ধতা কীভাবে শিক্ষার্থীদের এই অশুদ্ধতায় প্রলুব্ধ করছে তারও অনুসন্ধানের চেষ্টা করা হয়েছে। এই অশ্লীলতার প্রতিফলন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধকে আঘাত করছে না; বরং এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ মানসিক ও সামাজিক বিকাশে একটি অন্ধকার ছায়া বিস্তার লাভ করছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সমাজের দায়িত্বশীল অংশীদারদের সচেতন ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা একটি সুস্থ, সৃজনশীল ও মূল্যবোধনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে পারে আর সেই দায়িত্ববোধের প্রেরণা থেকেই বর্তমান রচনাটির সৃষ্টি।

পর্ব ১ - শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপভাষার ব্যবহার: একটি বিশ্লেষণ

অপভাষা বা স্ল্যাং বলতে কী বোঝায় - গালাগালি, অশালীনতা মিশ্রিত অসুস্থ ভাষার সংমিশ্রণকেই সাধারণত স্ল্যাং বা অপভাষা বলা হয়। ভাষাবিদ সুকুমার সেন তাঁর ‘ভাষার ইতিবৃত্ত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “যে শব্দ বা পদ ভদ্র সমাজে ব্যবহার করা হয় না এবং যার উৎপত্তি কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তির হীন ব্যবহার থেকে এসেছে, সেটিই স্ল্যাং।”

শিক্ষার্থীরা কেন স্ল্যাং ব্যবহার করে - বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা স্ল্যাং ব্যবহার করে। আনন্দ, মজা বা রসিকতার উদ্দেশ্যে, বক্তব্যকে সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক করার জন্য, হতাশা, বিরক্তি বা ক্ষোভ প্রকাশের জন্য স্ল্যাং তাদের কাছে একটি সহজ মাধ্যম। সামাজিক নিষেধাজ্ঞা থাকা বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার সময়ও অপভাষার প্রবণতা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, "আলু ভাতে", "লেডিস," "কচি খোকা," ইত্যাদি শব্দ ব্যবহৃত হয় অন্যকে হেয় করার জন্য। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে সহজভাবে মেলামেশার জন্যও অনেক সময় স্ল্যাং ব্যবহার করে।

অপভাষার ব্যবহার শুধুমাত্র অপমানজনক ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; যৌনতার বিষয়েও স্ল্যাং ব্যবহৃত হয়। যেমন- 'মাল', 'পেটি', 'গাঁড়' ইত্যাদি। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই স্ল্যাং ভাষার প্রচলন ঘটেছে। কেবল অনুকরণের মাধ্যমে অনেকেই নিজেদের মুখে অশালীন ভাষা গ্রহণ করছে।

শিক্ষার্থীদের স্ল্যাং ব্যবহারের বৈশিষ্ট্য - শিক্ষার্থীদের অপভাষা প্রয়োগের বৈশিষ্ট্যগুলি সূত্রাকারে সজ্জিত করলে দেখি- 

(১) শিক্ষার্থীরা সাধারণত তাদের নিজস্ব ছোট ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে স্ল্যাং ব্যবহার করে থাকে। 

(২) অপভাষা ব্যবহারের সময় তাদের মধ্যে যথেষ্ট পরিবেশ সচেতনতা দেখা যায়। 

(৩) সমাজের সর্বস্তর থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা তাদের মতন করে ব্যবহার করে থাকে। যেমন - ব্যক্তিগত স্ল্যাং, অপরাধ জগতের ভাষা ইত্যাদি। তবে অপভাষার উদ্ভব ও বিস্তারে ছাত্র সমাজের ভূমিকা কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। এ প্রসঙ্গে অভ্র বসু তাঁর 'বাংলা স্ল্যাং: সমীক্ষা ও অভিধান' গ্রন্থে বলেছেন - "বস্তুত, ছাত্র স্ল্যাং-ই মান্য স্ল্যাং-এর প্রাথমিক ভিত্তি। ছাত্র স্ল্যাং- এর সঙ্গে অন্যান্য বৃত্তিগত  স্ল্যাং-এর পার্থক্য এই যে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সকলেই একসঙ্গে অনেকগুলি বিষয় পড়ার কারণে কোন specialised ভাষারীতি গড়ে ওঠে না বরং তার মধ্যে সমস্ত বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন বিষয়ের ছাত্রের মধ্যে নানা জাতীয় সামান্য আগ্রহের বিষয় থাকলেও কোনো বিশেষ কাজ সংক্রান্ত ভাষারীতি গড়ে ওঠবার অবকাশ থাকে না। সেই কারণেই ছাত্র স্ল্যাং -এর পরিসর বেশ ব্যাপ্ত।"

(৪) সাদৃশ্যজাত স্ল্যাং-এর বৈচিত্র্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে দেখা যায়। যেমন- স্তনের প্রতিশব্দ হিসেবে নানাবিধ ফলের নামের ব্যবহার; রোগা লম্বা লোককে বোঝাতে 'প্যাকাটি'; তালগোল পাকানো বিষয় বোঝাতে 'খিচুড়ি' ; বিবাহিত মেয়েকে বোঝাতে 'কপাল ফাটা' ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। এসব শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকে সামাজিক এবং মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি।

(৫) শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাস স্ল্যাং একটি অভিনব বিষয়। এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সমাসের আদলে যৌনতাপূর্ণ ব্যাসবাক্য তৈরি করে। এই স্ল্যাং সাধারণত অদীক্ষিতের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে থাকে যেমন - অধ্যাপক: অর্ধেক ঢুকিয়ে পকা পক; কাঁকড়া: কাকের পোঁদের ন্যাকড়া; ঘুগনি: ঘুঘুর পোঁদে অগ্নি; পুলক: পুংলিঙ্গ লক ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীদের মানসিকতার প্রতিফলন: অপভাষা শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে একটি চিত্র তুলে ধরে। তাদের কিশোরসুলভ আক্রোশ এবং সামাজিক অবদমনের প্রতিফলন এসব স্ল্যাং-এর মধ্যে থাকে। প্রচলিত সমাজের রীতি-নীতি, বঞ্চনার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা যখন প্রতিবাদ জানাতে চায়, তখন এই স্ল্যাং ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের বিরক্তি, অভিযোগ ও সমালোচনার প্রকাশ ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলকে “আন্টিনিকেতন” বলার মধ্যে সেই কটাক্ষের অভিব্যক্তি স্পষ্ট।

ছাত্রীদের গালাগালি ও পুরুষতান্ত্রিক প্রাধান্য: যদিও মেয়েদের মধ্যে অপভাষার ব্যবহার রয়েছে, তবুও স্ল্যাং-এর ক্ষেত্রটিতে ছেলেদেরই প্রাধান্য বেশি। এই ব্যবহারে একটি পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা স্ল্যাং-এর বিস্তারে পুরুষদের ভূমিকাই শক্তিশালী করে তোলে।

শিক্ষার্থীদের স্ল্যাং ব্যবহারের বিরোধিতা: স্ল্যাং-এর ব্যাপারে বাঙালি সমাজের মানসিকতা এখনো রক্ষণশীল। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ভাষাগত অবনতি রোধে তাদের মনের অন্ধকার দূর করে নীতিশুদ্ধতার আলো জ্বালানোর প্রয়োজন। তবে সমাজ পরিবর্তন না হলে এর সঠিক ফলাফল পাওয়া কিছুটা কঠিন বলেই মনে করা হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপভাষার ব্যবহার, মূলত তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং মানসিক অবস্থানের প্রতিফলন। এটা শুধু ভাষাগত অবক্ষয় নয় বরং তাদের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের একটি ভাষা, যা সমাজ এবং তাদের নিজেদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ককেও প্রকাশ করে।

 

পর্ব ২ - শিক্ষার্থীদের অশ্লীল চিত্রাঙ্কন: একটি মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক বিশ্লেষণ

প্রাথমিক প্রশ্ন: শিল্প এবং সৃজনশীলতা শিক্ষার্থীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একজন শিক্ষার্থী যখন চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে, তখন তা তার চিন্তা, অনুভূতি, এবং পরিবেশের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। কিন্তু, যখন সেই চিত্রে অশ্লীলতার ছোঁয়া ধরা পড়ে, তখন সমাজের চোখে এটি কেবল আপত্তিকরই নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ এবং সামাজিক প্রভাব সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলে। এই ধরনের চিত্রকে সহজেই অপচিত্রায়ণ হিসেবে দেখা যায়, এবং এর ফলে সমাজ শিক্ষার্থীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতে শুরু করে। তাহলে প্রশ্ন আসে, শিক্ষার্থীরা কেন অশ্লীল চিত্র আঁকে? কী কারণে তাদের চিত্রায়ণে এমন বিষয়বস্তুর অন্তর্ভুক্তি ঘটে যা সমাজের চোখে “অশ্লীল”? এই প্রবণতার মূলে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মানসিক ক্রিয়া, তাদের অবদমিত চাহিদা, পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাব, এবং কৌতূহল। মূলত শিক্ষার্থীদের মনের আদর্শহীনতা থেকেই তাদের আঁকা অপচিত্রগুলি রূপলাভ করে। এই পর্বে অশ্লীল চিত্র বা অপচিত্র বলতে আমরা সেই সকল রেখাবিন্দুর সমন্বয়কে  চিহ্নিত করব যার  ভিতরে নারী, পুরুষ বা নারী-পুরুষ উভয়ের নগ্নতা এমনভাবে চিত্রায়িত বা আভাসিত হয় যার মধ্যে শিল্প সৌন্দর্যের লেশমাত্র থাকে না বরং সেখানে আদিরসই একমাত্র উপজীব্য বিষয় হয়ে ওঠে। অপচিত্রের সঙ্গে কামান্ধচেতনা ও শিল্পহীন যৌনতার বিষয়টি যুক্ত।

শিক্ষার্থী কারা এবং তাদের অশ্লীল চিত্র অঙ্কনের উদ্দেশ্য: শিক্ষার্থী বলতে সাধারণত সেই সব কিশোর-কিশোরী বা তরুণ-তরুণীকে বোঝানো হয়, যারা জীবনের শিক্ষাগত পর্যায়ে অবস্থান করছে এবং আত্ম-অন্বেষণ ও মানসিক বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি এক ধরনের কৌতূহল এবং স্বাধীনতা প্রকাশের ইচ্ছা কাজ করে যা তাদের চারপাশের পরিবেশ দ্বারা বিশেষভাবে আন্দোলিত হয়। বিভিন্ন সামাজিক, পারিবারিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব তাদের চিন্তা ও মনোভাবের উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে এবং তারা প্রায়ই সেই প্রভাবগুলি প্রকাশের জন্য চিত্রাঙ্কনকে একটি মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন অশ্লীল চিত্রের প্রতি আকৃষ্ট হয়? এর সম্ভাব্য একাধিক কারণ থাকতে পারে। নিম্নে সে বিষয়গুলিই আলোচনা করা গেল।

শিক্ষার্থীদের অশ্লীল চিত্র আঁকার কারণসমূহ: শিক্ষার্থীদের অশ্লীল চিত্র আঁকার পেছনে একাধিক মানসিক এবং সামাজিক কারণ কাজ করে। যেমন -

১. যৌনতার প্রতি কৌতূহল: কৈশোরের কৌতূহল ও জিজ্ঞাসার কেন্দ্রে যৌনতা একটি বড় অংশ হিসেবে দেখা দেয়। তাদের অপচিত্রে নারীর আকৃতি, শারীরিক রূপের প্রতিফলন এই সুপ্ত কৌতূহল ও অনুভূতিরই বহিঃপ্রকাশ। আসলে এটি কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের সময়, যখন তাদের মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হতে থাকে। এই সময়ে, তারা যৌনতা, শারীরিক সম্পর্ক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয়বস্তুর প্রতি বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করে। কিন্তু এইসব বিষয়ে সমাজ বা পরিবার থেকে খুব কমই খোলামেলা আলোচনা হয়, বরং এসব বিষয়কে তাদের জন্য নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা অশ্লীল চিত্র আঁকার মাধ্যমে সেই চেতনার প্রকাশ ঘটাতে চেষ্টা করে, যা তারা সরাসরি আলোচনা করতে পারে না।

২. প্রতিবাদের ভাষা: শিক্ষার্থীরা যখন পারিবারিক, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বিধিনিষেধের মধ্যে আটকে থাকে, তখন তাদের মনের ভেতর জন্ম নিতে থাকে এক ধরনের একাকিত্ব, ক্ষোভ এবং অপ্রকাশিত প্রতিক্রিয়া। তারা যেসব সংকটে ভোগে, তা প্রকাশের সুযোগ না পেলে, এই অব্যক্ত অনুভূতিগুলো প্রায়ই সৃজনশীল মাধ্যমে রূপান্তরিত হয়। চিত্রকলার মাধ্যমে তারা তাদের অনুভূতিকে রঙ ও রেখার আকারে প্রকাশ করে। অশ্লীল চিত্র তাদের জন্য হয়ে ওঠে একধরনের নিঃশব্দ প্রতিবাদের মাধ্যম। এই ধরনের চিত্রগুলো কেবলমাত্র বাহ্যিকভাবে আপত্তিকর মনে হলেও, ভেতরে লুকিয়ে থাকে তাদের কষ্ট, প্রতিবাদ এবং অবদমনের এক অদৃশ্য ভাষা। এই নিঃশব্দ ভাষা তাদের মনের আঘাতগুলোকে এক অন্যরকম সৃজনশীলতার মাধ্যমে প্রকাশ করে, যা হয়তো সমাজ বোঝে না, কিন্তু এটি তাদের জন্য একটি মুক্তির জানালা হিসেবে কাজ করে।

৩. আবেগ দমনে অক্ষমতা: কৈশোরে মনোজগতের দ্বিধা ও উচ্ছ্বাস তাদের এমন কিছু অনুভূতি জাগিয়ে তোলে, যা তারা সহজে প্রকাশ করতে পারে না। অপচিত্র এই আবেগের বিকাশে মুক্তির এক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

৪. প্রযুক্তির মাধ্যমে অপসংস্কৃতি: বর্তমান প্রযুক্তির বিস্তারের ফলে শিক্ষার্থীদের সামনে যেমন জ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, তেমনি অপসংস্কৃতির প্রভাবও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতা তাদের জীবনে একদিকে সুবিধা এনে দিলেও, অন্যদিকে নানা ধরনের আপত্তিকর বা অশালীন বিষয়ের সংস্পর্শে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। এই ধরনের সামগ্রী, যা তাদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, সহজেই তাদের আকৃষ্ট করতে পারে এবং চিন্তাধারাকে বিকৃত করে তুলতে পারে। এই ধরনের অপসংস্কৃতির প্রভাবে অনেক শিক্ষার্থী তাদের সৃজনশীলতাকে অশ্লীল চিত্র আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ করতে শুরু করে। এই চিত্রগুলো বাহ্যিকভাবে আপত্তিকর মনে হলেও, গভীরে লুকিয়ে থাকে তাদের মনের অস্থিরতা, বিভ্রান্তি এবং অবদমনের অভিব্যক্তি। প্রযুক্তি-নির্ভর অপসংস্কৃতির এই প্রভাব শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্বেগজনক, কারণ এটি তাদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে। এ ধরনের অপচিত্র একদিকে তাদের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি তাদের মানসিক স্থিতিশীলতা ও সঠিক দিকনির্দেশনা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বিভ্রান্তির পথে এগিয়ে যায়, যা তাদের ব্যক্তিত্ব ও ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে শিক্ষার্থীরা এখন সহজেই ইন্টারনেট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারে। এই মাধ্যমে অনেক সময় শিক্ষার্থীরা অনুপযুক্ত বিষয়বস্তু দেখতে পায় এবং এগুলো তাদের মননে প্রভাবিত করে। এছাড়া, নিষিদ্ধ বিষয়ে জানার সহজ প্রবেশাধিকার তাদের মনে এক ধরনের কৌতূহল তৈরি করে, যা তাদের অপচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

অশ্লীল চিত্র ও অপরাধপ্রবণ মনোভাবের উত্থান: বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীদের মনে জেগে ওঠে একধরনের অপরাধপ্রবণতা, যা কখনো প্রভাবিত হয় মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বে, কখনো পারিবারিক বা সামাজিক অনাচারে। তাদের মনের আকাশে একধরনের আলো-অন্ধকারের খেলা চলে, যা তাদের ভাবনার জগৎকে গভীর অস্থিরতায় ভরিয়ে তোলে। এরই প্রভাবে শিক্ষার্থীরা চিত্রকলায় তাদের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা এবং ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটায়, যা সমাজের চোখে অপরাধপ্রবণতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

অনেকেই মনে করেন, যে সকল শিক্ষার্থী অপচিত্র আঁকে তারা অপরাধপ্রবণ মানসিকতা সম্পন্ন হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অন্যান্য কাজ বিচার করে না দেখে কেবল একটি তথাকথিত অপচিত্র দেখে তার সম্পর্কে স্থির ভাবে কোন সিদ্ধান্ত  করতে যাওয়াটা ভুল হবে।

অপচিত্রের প্রকৃতি এবং ধরণ: শিক্ষার্থীরা যে অপচিত্র আঁকে, তা বিবিধ বৈচিত্রে পূর্ণ। তাদের প্রকাশ যেন এক নিঃশব্দ বিদ্রোহ, তাদের হৃদয়ের অব্যক্ত শব্দগুলো যেন রূপ নেয় একেকটি রেখার অভিব্যক্তিতে। সেই অভিব্যক্তির প্রধান প্রবণতাগুলি যথাক্রমে - 

১. অস্পষ্টতা: তাদের আঁকা অপচিত্রের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো বিষয়বস্তুর অস্পষ্টতা। বয়ঃসন্ধির মনস্তাত্ত্বিক দুর্বোধ্যতা তাদের ছবিতেও ছায়া ফেলেছে।

২. জ্যামিতিক কাঠামো: কখনো গোল কখনোবা  ত্রিভুজের ভাঙা আকৃতিতে তারা নারী শরীরকে রহস্যময়তার ঘেরাটোপে তুলে ধরতে চায়। এর মধ্যে আবার গোল বা বৃত্তের প্রাধান্য কিছুটা বেশি। বৃত্তের রহস্যময়তা এবং নারী অঙ্গের সাদৃশ্যতা এই ধরনের জ্যামিতিক কাঠামোর মূল প্রেরণা।     

৩. কামান্ধতার বহিঃপ্রকাশ: তাদের চিত্রকর্মে যৌনতাকে কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে তুলে ধরা হয়, যেখানে তারা শিল্পের নান্দনিকতার চেয়ে প্রবৃত্তির চাহিদাকে প্রকাশ করে। এগুলি মূলত মিথুনাচারের উপাদানে পুষ্ট এবং পুরুষের ভোগের পরিপূরক রূপে চিহ্নিত।

৪. শব্দের সংমিশ্রণ: অনেক চিত্রে শব্দ সংযুক্ত থাকে যা আবেগপ্রবণ, কৌতুকপূর্ণ অথবা বিদ্রুপময়। এই শব্দগুলো যেন তাদের অন্তর্লীন অনুভূতির সীমানা ছুঁয়ে যায়।

শিক্ষার্থীদের অপচিত্রের বৈশিষ্ট্য: শিক্ষার্থীদের দ্বারা সৃষ্ট অপচিত্রের প্রবণতাগুলি  সুসংবদ্ধ করলে যে সকল বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া যায় সেগুলি নিম্নে সূত্রাকারে সজ্জিত করে দেওয়া গেল।

(ক) এই ছবিগুলি সাধারণত কিছুটা অগোছালোভাবে আঁকা। এগুলিতে ‘শিল্পী’র মনের দ্বিধা, অপরিণত মানসিকতার ভাব স্পষ্ট। ছবির  সৌন্দর্যতা সেখানে বিশেষ একটা থাকে না।

(খ) অনেক সময় এই ছবিগুলি অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে। যেমন-তেমন করে এই ছবিগুলি আঁকা হয়।

(গ) চিত্রগুলি প্রধানত সোজা আর আঁকাবাঁকা লাইনের সারি দিয়ে গড়া।

(ঘ) এতে লাবণ্য এবং কমনীয়তার ভাব থাকেনা। দৃশ্যগুলি প্রাণহীন, তীক্ষ্ণ এবং কাটাকাটা। শিক্ষার্থীরা তাদের অপচিত্র আঁকার প্রধান উপাদান হিসাবে ব্যবহার করে যথাক্রমে - কম্পাস বা অনুরূপ ছুঁচল শক্ত কোন দন্ড, চক, ইঁটের টুকরো, কলম, পেন্সিল প্রভৃতি।

(ঙ) ছবিগুলিতে রুচি বা শিল্পবোধের পরিচয় একদমই থাকেনা।  নীতিহীন ও অসংযমের ভাব সেখানে স্পষ্ট।

(চ) ক্ষেত্রবিশেষে পূর্ণাঙ্গ চিত্র অপেক্ষা এগুলি কিছু সংকেত বা প্রতীকের রূপ নেয়। অনেক ক্ষেত্রেই পূর্ণচিত্র অপেক্ষা অর্ধ চিত্রতেই ছবিটি সমাপ্ত হয়ে যায়।

(ছ) মূলত কামোত্তেজক বিষয় এবং নর-নারীর মৈথুন চিত্রের ভাব ভঙ্গিমা বা শরীরের বিশেষ গড়নটি এই সকল চিত্রের উপজীব্য বিষয়। এতে শিক্ষার্থীর মনের অবদমিত ইচ্ছার আভাসটি স্পষ্ট। 

(জ) আদর্শ নর-নারী এবং আদর্শ সৌন্দর্যের সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান না থাকায় শিক্ষার্থীরা নিছক যৌন চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে এই চিত্রগুলি অঙ্কন করে। নারী-পুরুষের গোপন জীবনের প্রতি নীতিহীন আকর্ষণ তাদের জীবন সম্পর্কে কুৎসিত প্রতিরূপ ফুটিয়ে তোলার প্রেরণা। 

(ঝ) এই ধরনের প্রতিটি ছবিই হয় নিরাবরণ এবং নিরাভরণ। বিষয়ে তীব্রতা আর উত্তেজনা সৃষ্টির জন্যই এমনটা করা হয়ে থাকে।

(ঞ) অদ্ভুত দেখতে নর-নারীর ছবিও এই সকল ক্ষেত্রে দেখা যায়। জীবন ও সৌন্দর্যের সদর্থকতার প্রতি ভারসাম্যের অভাবই এই বিকৃতির অন্যতম কারণ।

(ট) ছবিগুলি এমনভাবে আঁকা হয় যাতে তা অন্যের চোখে সহজেই ধরা পড়ে। এ ক্ষেত্রে অন্যদের মনেও আপন যৌনতার বিস্ময় সঞ্চারিত করার বাসনা শিক্ষার্থীর মানসিকতায় কাজ করে থাকে। এই অপচিত্রগুলি সাধারণত প্লাস্টার যুক্ত দেওয়ালে, পরিত্যক্ত শ্রেণিকক্ষের ব্ল্যাকবোর্ডে, গাছের গুড়িতে, প্রস্রাবাগারের দেওয়ালে প্রভৃতি স্থানে আঁকা হয়ে থাকে।

(ঠ) এই ধরনের চিত্রগুলি সাধারণত রঙিন হয় না। কারণ সেখানে বিষয়ের কাছে আর সবকিছুই গৌণ। 

(ড) অশিক্ষিত পটুতার ফলে এই ছবিগুলি একপাশ থেকে দেখা প্রোফাইলের নিদর্শন হয়ে থাকে। 

(ঢ) সরলরীতির কম্পোজিশনই এই ছবিগুলিতে ফিরে ফিরে এসেছে। ভাব, আঙ্গিক ও বিষয়বস্তুর মৌলিকতার অভাবও এখানে স্পষ্ট। 

সমাজের প্রতিক্রিয়া এবং নেতিবাচক প্রভাব: অপচিত্র সামাজিক রীতিনীতির দৃষ্টিতে এমন এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, যা সমাজের নৈতিকতা ও শৃঙ্খলাবোধকে আঘাত করে। শিক্ষার্থীদের চিন্তার এই জটিল ও বিকৃত প্রকাশ সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। যেমন-

১. নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা: এই চিত্রকর্ম সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের এক প্রতিবিম্ব হয়ে ওঠে, যেখানে তাদের আচরণকে সমাজের চোখে অপরাধী মনোভাবের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়।

২. অপরাধপ্রবণতার উত্থান: অপচিত্রে যে বিদ্রোহী মনোভাব ফুটে ওঠে, তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধমূলক চিন্তাভাবনা বাড়িয়ে তোলে এবং তারা অজান্তেই অপরাধপ্রবণতায় আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।

৩. বিদ্যালয় পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব: বিদ্যালয়ে অপচিত্রের প্রভাব বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তা এক অশুভ দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিস্থাপন করে।

সমাধানের উপায়: শিক্ষার্থীদের এই বিদ্রোহী সৃজনশীলতা যদি অপচিত্র আকারে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, তবে এর সুষ্ঠু সমাধান খুঁজতে হবে। পরিবার, সমাজ এবং বিদ্যালয়ের সহায়তায় তাদের জন্য এক সঠিক দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। এর জন্য যে পদক্ষেপগুলি নিয়ে যেতে পারে তা যথাক্রমে-

১. নৈতিক শিক্ষাদানের প্রসার: শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে, যা তাদের সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করতে সাহায্য করবে।

২. সুস্থ পরিবেশ: শিক্ষার্থীদের জন্য এক স্বাস্থ্যকর ও সমৃদ্ধ পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যেখানে তারা তাদের ভাবনা ও আবেগের সুস্থ বিকাশ ঘটাতে পারবে।

৩. শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ: ধ্যান ও যোগব্যায়ামের মাধ্যমে তাদের মানসিক শক্তি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করা, যেন তারা তাদের আবেগকে সঠিক পথে চালিত করতে পারে।

৪. সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ: যৌনতা বা নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর প্রতি ভ্রান্ত আকর্ষণ দূর করার জন্য তাদের মধ্যে জ্ঞান ও সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটাতে হবে।

৫. প্রশাসনিক সহায়তা: শিক্ষার্থীদের আচরণ বিশ্লেষণ করে তাদের সহায়তা দিতে বিদ্যালয় প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।

অপচিত্র শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা এবং মনস্তাত্ত্বিক সংকটের প্রতিফলন। সমাজে নিষিদ্ধতার সীমায় তারা এক নিষিদ্ধ আবেগের ভাস্কর্য তৈরি করে, যা তাদের মনের গভীর দুঃখবোধ, চেতনা ও বিদ্রোহকে প্রকাশ করে। এই বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে তাদের জন্য সুস্থ সৃজনশীল পরিবেশ তৈরি করলে তারা সমাজের জন্য এক ইতিবাচক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। নিষিদ্ধতার দর্পণে তাদের সৃজনশীলতাকে আবদ্ধ না করে বরং তার সুস্থ পথ খুঁজে দিতে হবে—যাতে তারা ভবিষ্যতের আলোকিত পথ ধরে হাঁটতে পারে।

উপসংহার: 

অশ্লীলতা যেন এক নীরব বিষবৃক্ষ, যা শিক্ষার্থীদের মননশীলতাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে। ভাষা ও চিত্রে অশ্লীলতার অবাধ প্রবাহ শিক্ষার্থীদের জন্য কেবল নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ নয়; এটি তাদের মানসিক বিকাশকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে তুলছে। এই প্রক্রিয়ায় তারা হারাচ্ছে সৃষ্টিশীলতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং সুস্থ্য চিন্তার পরিসর। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ভূমিকা, অভিভাবকদের সজাগ দৃষ্টি এবং সমাজের সচেতন প্রচেষ্টাই পারে শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে। নতুন প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও নির্মল চিন্তাধারার এক সুন্দর পৃথিবী গড়তে প্রয়োজন সংস্কৃতির উন্নতি, নৈতিক শিক্ষার প্রসার এবং একটি নিরাপদ সামাজিক পরিবেশ। তাই আমাদের সকলের উচিত অশ্লীলতার করাল গ্রাস থেকে শিক্ষার্থীদের চিন্তা ও চেতনাকে রক্ষা করার জন্য একসঙ্গে কাজ করা, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের অর্জিত মূল্যবোধের সত্যিকারের উত্তরাধিকারী হতে পারে।

সংযোজন: শিক্ষার্থীদের কিছু অপচিত্রের নিদর্শন (কাঠের বেঞ্চ, দেওয়াল ও বাথরুম) - 

 

 

0 Comments
Leave a reply