ফিরোজ সরকারের আদি বাড়ি শ্যামনগর। বাবা ছিলেন ইস্কুল মাস্টার। ইস্কুল মাস্টারের ছেলে ইস্কুল মাস্টার হবেন, গ্রামের লোক তেমনই ধারণা করেছিল। কিন্তু ফিরোজ আইএ পাশ করার পর মাস্টারিতে গেলেন না, বাবার জমানো টাকা নিয়ে শ্যামনগর বাজারে মুদির একখানা দোকান খুললেন। বড় দুই ভাই ফুয়াদ আর ফেরদৌস খুলনা শহরে বিএ পাশ করে কেরানির চাকরি করেন। কাকারা শ্যামনগরেই জমি বর্গা দিয়েছেন, একান্নবর্তী পরিবার সেই জমির ফসলেই চালিয়ে নেয়। ফিরোজের মুদি দোকান থেকেও বাড়িতে তেল নুন কলা বিস্কুট সাবান শ্যাম্পু আসে। গোয়ালে দুটো গাভি আছে, দুধের প্রয়োজন দুই গাভির দুধেই মেটে। বেশ নির্ঝঞ্ঝাট কাটছিল ফিরোজের জীবন, কিন্তু হঠাৎ-ই ভেঙে চুরে গেল সব। সব। পাড়ার হরিশ মণ্ডলের মেয়ে মালা মন্ডলকে ইস্কুলে যাওয়ার পথে বিরক্ত করে কিছু ইস্কুল-ফাঁকি দেওয়া ছেলে। এই খবর কয়েকদিনই কানে এসেছে ফিরোজের। হরিশ মণ্ডল ফিরোজের ন্যাংটো কালের বন্ধু। এক মাঠে বিকেলে হাডুডু ফুটবল খেলেছেন। এক ইস্কুলে সকালবেলা পড়তে গিয়েছেন। হরিশ মন্ডল এক ক্লাস নিচে পড়তেন। ক্লাসে ফার্স্ট হতেন। ফিরোজের বাবা বাড়ি ফিরে ফিরোজকে বলতেন তোরই তো বন্ধু হরিশ, ওর রেজাল্ট দেখ, আর তোর রেজাল্ট দেখ। হরিশের মতো খেটে লেখাপড়া করলে তোরও তো রেজাল্ট ভালো হতো। ফিরোজ জানতেন লেখাপড়ায় তাঁর মন নেই। আইএ থার্ড ডিভিশনে পাশ করার পর লেখাপড়ার মায়া ত্যাগ করলেন ফিরোজ। হরিশ মণ্ডল ভালো ছাত্র হয়েও বেশি দূর পড়েননি, সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। পৌরসভার অফিসে ছোট একটি চাকরি নিয়েছেন। তারপর তো ওই হলো, যা আর দশটা মানুষের জীবনে হয়। আত্মীয় স্বজন দেখে শুনে বিয়ে দিলেন হরিশের। ফুটফুটে এক মেয়ে হল। ফিরোজই রেখেছিলেন মেয়েটির নাম, মালা। এই মালা চোখের সামনে বড় হচ্ছে। ওদিকে ফিরোজের কন্যা ফৌজিয়াও বড় হচ্ছে। মালার বারো, ফৌজিয়ার সাত। ফৌজিয়া নামটি আবার হরিশই রেখেছেন। হরিশের সঙ্গে ফিরোজ যে দিন রাত পড়ে থাকেন, তা নয়। চার বাড়ি পরেই হরিশের বাড়ি। বাড়িতে আগের মতো যাতায়াত নেই, তবে মাঠে ঘাটে প্রায়ই দেখা হয়। দু’চারটে প্রয়োজনের কথাও হয়। দু’জনই জানেন যে-যার সংসার নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু যেদিন ফৌজিয়ার মা’কে হাসপাতালে নিতে হবে, কী করে নেবে, কে নেবে, এই নিয়ে ফিরোজের ভাবার আগেই গাড়ি যোগাড় করে নিয়ে এলেন হরিশ। বা হরিশের মেয়েকে ইস্কুলে ভর্তি করতে হবে, ফিরোজই এগিয়ে এলেন। কার কখন কী প্রয়োজন – তা দু’জনই আঁচ করতে পারতেন।
মালাকে নাকি টানতে টানতে এক পুকুরের কাছে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে সুজন। মোজাফফরের ছেলে সুজন। সুজনের সঙ্গে ছিল অন্য পাড়ার দু’জন। এই সুজনকে জন্মাতে দেখেছেন ফিরোজ। আর এ ছোকরা কিনা পাড়ার মেয়েদের অনিষ্ট করতে শুরু করেছে! দোকান ফেলে হনহন করে পাড়ায় চলে আসেন ফিরোজ। মোজাফফরের বাড়ি থেকে সুজনকে টেনে বের করে এমন চড় থাপড় লাগান, গাছ থেকে ডাল ভেঙ্গে সেই ডাল দিয়ে উঠোনে ফেলে এমন পেটান যে বাড়ির সবাই উঠোনে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য হতভম্বের মতো দেখেন। মোজাফফর বাড়িতে ছিলেন না। কাজটি ক’রে ফিরোজ দোকানে ফিরে যান। দোকানে বসেই তিনি ভাবেন সুজনের মুখ থেকে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছিল, হয়তো ওভাবে পেটানো তাঁর উচিত হয়নি। তিনি কি সুজনকে নিজের সন্তান ভেবে নিয়েছিলেন? পরের ছেলের গায়ে হাত তোলা বড় অন্যায়। আজকাল তো ইস্কুল কলেজেও বলা হচ্ছে, নিজের ছেলের গায়েও হাত তোলা ঠিক নয়। মোজাফফরের কাছে সুজনকে সামাল দেওয়ার জন্য বলতে পারতেন তিনি। আবার ভাবেন, উঠোনে দাঁড়িয়ে যারা ওই পেটানো দেখছিল, তারা তো কেউ তাঁকে থামাতে আসেনি। না আসার কারণ হয়তো সুজনের চরিত্র সম্পর্কে ওরা জানে, জানে যে এ ছেলে বদ ছেলে। ফিরোজ আবার ভাবেন যা হওয়ার হয়ে গেছে, মোজাফফর তো পাড়ারই লোক, অচেনা কেউ তো নয়। পাড়ার ছেলেপুলেরা বখাটে হয়ে গেলে পাড়ার বড়রাই তো শাসন করবেন।
পরদিন পুলিশ আসে। পেটে দড়ি বেঁধে ফিরোজকে থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে মার খেয়ে ভোর রাতে ঘরে ফেরেন ফিরোজ। সকালে জ্বরে গা পুড়ে যায় ফিরোজের। সীমা শিথানে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদেন, আর পৈথানে বসে ফৌজিয়া। উঠোনে উদ্বিগ্ন পায়চারি করেন ফিরোজের স্বজন পরিজন। এখানেই যদি মিটে যেত সব, তাহলে সাত দিনের দিন সুস্থ হয়ে ফিরোজ আবার দোকান খুলতেন। কিন্তু এখানেই সব মেটে না। মোজাফফর পাড়ার দশ-বারোজন দশাসই লোক নিয়ে ফিরোজের বাড়ি আসেন। উঠোনে দাঁড়িয়েই চিৎকার করে শুনিয়ে যান, ‘আমাদের ছেলেকে মেরে হাড় ভেঙেছো। হাসপাতাল থেকে প্লাস্টার লাগিয়ে আনতে হয়েছে। এখন তোমার মেয়ের ইজ্জত ক’দিন অক্ষত থাকে তা দেখে নিও। এলাকার মানুষ জানে যে হরিশের মেয়ে মালাকে বেইজ্জত করার শাস্তি ফিরোজ সুজনকে দিয়েছেন, মোজাফফরও নিশ্চয়ই জানেন তা, অথচ মোজাফফর সুজনকে না শাসিয়ে উল্টে ফিরোজের মেয়েকে হেনস্থা করার হুমকি দিচ্ছেন!
রাতে ফিরোজের ঘরে আগুন ধরিয়ে যায় কে বা কারা। বাড়ির সকলে অনুমান করেন এ মোজাফফর। আগুন নেভাতে পাড়ার অনেকে আসে। ফিরোজ ভিড়ের মধ্যে হরিশকে খোঁজেন। এত বিপদেও হরিশের টিকিটির যখন দেখা নেই, হরিশেরও নিশ্চয়ই বিপদ। বাড়ির সকলের সিদ্ধান্ত, আপাতত বাড়ি ছেড়ে কোথাও লুকিয়ে থাকুন ফিরোজ। কিন্তু কোথায়? লুকিয়ে থাকার লোক তো তিনি নন। তিনি রুখে দাঁড়ানোর লোক। শ্যামনগরের বড় মসজিদ থেকে জুম্মাহ পড়ে আসার পর কাকাদের মুখ অন্ধকার হয়ে রইলো। নামাজের পর ইমাম সাহেব ফিরোজের গুষ্ঠি উদ্ধার করেছেন। কী রকম গুষ্ঠি উদ্ধার শুনি! বলেছেন মুসলমান হয়ে হিন্দুর সঙ্গে গলাগলি করছে। এক হিন্দুর জন্য কিনা মুসলমান এক কচি ছেলেকে মেরে হাড় গুঁড়ো করে ফেললো! মুসলমান হয়ে আপনারা এই অন্যায় সইবেন? সমস্বরে সকলে বলে উঠেছে, না। আবারো বললেন, এ দেশ নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ, দেশের রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম। এ দেশে হিন্দুর অধিকার বেশি, নাকি মুসলমানের? সমস্বরে সবাই বলে উঠলো, মুসলমানের। যে মুসলমান আরেক মুসলমানের গায়ে হাত তোলে, বিশেষ করে তার জন্য, যে মূর্তি পূজক, যে মুসলমান নয়, যে আল্লাহ-রসুলে বিশ্বাস করে না – তাহলে তার কী শাস্তি হতে পারে? আবারও সমস্বরে বললো, ফাঁসি, ফাঁসি। ইমাম লোকটি ফিরোজের ফাঁসি চাইছেন! অথচ এই লোকটিকে মসজিদে ইমামের চাকরি পেতে ফিরোজই সাহায্য করেছিলেন বেশি। পৌরসভার আপিসে নিজে গিয়ে আবেদন করে এসেছিলেন। পরদিন সারাদিন মহল্লার পরিচিত লোকদের মোজাফফরের বিরুদ্ধে সংগঠিত করার জন্য ঘুরেছেন ফিরোজ। দু’জন মোজাফফরের নিন্দে করে তো পাঁচজন মোজাফফরের ভুল কিছু খুঁজে পায় না। কেউ কেউ বললো ফিরোজের ওভাবে বাচ্চাটাকে মারা ঠিক হয়নি। কেউ বলে সমস্ত নষ্টের মূলে হরিশ। ফিরোজ ভেবে পান না, কেন সমস্ত নষ্টের মূলে হরিশ! সন্ধ্যেয় বাড়ি ফিরে ফিরোজ দেখেন তাঁর স্ত্রী কন্যাকে বড় কাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন কালিগঞ্জে, স্ত্রীর বাপের বাড়ি। ফিরোজ গজগজ করেছেন কিছুক্ষণ, কেন তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। আর এত ভয় পাওয়ারই বা কী আছে! পাড়ার বদ লোকেরা বদ কাজ করবে, আর সে কারণে ভয় পেতে হবে ভালো লোকদের! বরং ভালো লোকেরা একত্র হয়ে বদ লোকদের শায়েস্তা করবে, এ-ই তো হওয়া উচিত। কিন্তু যা হওয়া উচিত, তা কি সবসময় হয়! ফিরোজ বড় কাকার ঘরে ঘুমোলেন সে রাতে। নিজের ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে কাপড় চোপড়, বিছানা বালিশ, আসবাব পত্র। উঠোন ঘিরে একেক জনের ঘর। বড় কাকার একটি, মেজ কাকার একটি, আর ফিরোজের ইস্কুল মাস্টার বাবার একটি। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে সেই ঘরটি ফিরোজের ঘর। ঘরটিকে দৈর্ঘ্যে প্রস্থে বড় করে মাঝখানে দেয়াল তুলে আরও ঘর বানিয়ে নিয়েছেন ফিরোজ। ঘরে ফুয়াদ আর ফেরদৌসেরও ভাগ আছে, কিন্তু ওঁদের আর শ্যামনগরে বসবাস, ওঁরাই জানিয়ে দিয়েছেন, হবে না। সুতরাং ফিরোজই যেন তাঁর সুবিধে-মতো ঘরের সংস্কার করে নেন। আর কাকারা যতদিন আছেন জমিজমা ভাগবাটোয়ারার প্রয়োজন কেউ দেখছেন না।
ফিরোজ যখন নতুন করে ঘর ওঠানোর পরিকল্পনা করছেন, তখন বড়কাকাই উপদেশ দিলেন কিছুদিন কালিগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকতে, এদিকের পরিস্থিতি শান্ত হলে যেন তিনি ফিরে আসেন। ঘর যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকুক। মোজাফফরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকবেন বড়কাকা।
ফিরোজ মামলার জন্য অপেক্ষা করেন না। তিনি পাড়ার লোক ডাকেন মোজাফফরকে পেটানোর জন্য। কিন্তু লোক তেমন জড়ো হয় না। পাড়ার দু’একজনের কাছ থেকে খবর পান যে, মোজাফফর প্রচুর লোক যোগাড় করেছেন ফিরোজের হাড়গোড় ভাঙার জন্য। এইসময় হরিশের হদিস নেই। কার কাছে গিয়ে দু’দণ্ড শান্তি পাবেন ফিরোজ! বিকেলের দিকে খবর এলো, তাঁর দোকান ভেঙে মোজাফফরের লোকেরা মালামাল ফেলে দিয়েছে বাইরে। ঝাঁক বেঁধে লোক এসে লুঠ করে নিয়ে গেছে সেসব। ফিরোজ নিজেই লাঠিসোঁটা জোগাড় করে বাজারের দিকে হাঁটলেন। খোঁজ পেয়ে তাঁকে থামালেন কাকারা, কাকাদের ছেলেরা। কী! দোকান গেছে! দোকান আবার হবে। জান বাঁচানো ফরজ। খুলনা থেকেও ফুয়াদ আর ফেরদৌসের ফোন এল। তাঁদের ভাষ্য, শ্যামনগর ফিরোজের জন্য নিরাপদ নয়, আজকেই যেন খুলনায় বড়-ভাইদের কাছে চলে যায়, নয়তো কালিগঞ্জে আপাতত শ্বশুর বাড়িতে আশ্রয় নেয়। তবে শ্বশুরবাড়িও নিরাপদ নয়। মোজাফফরের গুণ্ডারা কালিগঞ্জেও হামলা করতে পারে। শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা পেতে খুব অসুবিধে হবে না এদের। আসলে এদের মাথা এখন গরম, মাথা গরম থাকা অবস্থায় মানুষ ভুলভাল অনেক কিছু করে ফেলতে পারে। সুতরাং, ফিরোজ জান বাঁচাও, বাকি কী করতে হবে, সে পরে দেখা যাবে। মোজাফফর সবে কুড়ি বছর মহল্লায় বাস করছেন। টাকা পয়সা ভালো। নিজে দোতলা একখানা পাকা বাড়িও বানিয়ে নিয়েছেন। ব্যবসায় নাকি বেশ লাভ হয়। লাভ হলে অবশ্য এই হয়, ডাকলে লোক পাওয়া যায়।
ফিরোজ অগত্যা জান বাঁচালেন। ভিটে মাটি ছেড়ে আপাতত পাড়ি দিলেন কালিগঞ্জে। কালিগঞ্জে যে রাতে পৌঁছোলেন, সে রাতেই শ্বশুর বলে দিলেন ভোর হওয়ার আগেই যেন অন্য কোথাও চলে যান। তিনিই এক চেনা ট্রাক ড্রাইভারকে আসতে বললেন শেষ-রাতে। সীমা আর ফৌজিয়াকে নিয়ে শেষ রাতেই ট্রাকে চড়তে হলো ফিরোজকে। সাতক্ষীরায় থাকেন শ্বশুরের আপন শ্যালক। সেই শ্যালকের বাড়িতে উঠে একটি রাতও ফিরোজ ঘুমোতে পারেননি। ট্রেন ধরবেন খুলনায় যাওয়ার। ফুয়াদ জানিয়ে দিলেন খুলনায় যাওয়াটা ঠিক হবে না, ফিরোজ যেন ইণ্ডিয়ায় চলে যান। ইন্ডিয়ায়? হ্যাঁ ইন্ডিয়ায়। অগত্যা রাতের অন্ধকারে সীমান্ত প্রহরীর হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে ইণ্ডিয়ায়। আয়োজনটি করলেন মামাশ্বশুর সবুর। সবুরের সবুর নেই। যেদিন ফিরোজ পা দিয়েছেন সবুরের বাড়িতে, সেদিন থেকেই সবুর বলছেন, প্রতিদিনই মানুষ বর্ডার পার হচ্ছে, বর্ডার পার হওয়া রীতিমত ডালভাত। এ দেশে কোনও আশা নেই। চাকরি বা ব্যবসা করে খেতে হলে ইণ্ডিয়াই ভালো। দেশে এখন গুণ্ডাদের রাজত্ব। খুন ধর্ষণ হানাহানি রক্তপাতের কোনও শেষ নেই। সবুর শ্যামনগরের সব ঘটনা শুনেছেন। তিনিও মনে করেন শ্যামনগরের পাট ফিরোজকে চুকোতে হবে। অন্য কেউ পেছনে লাগলে ভয়ের কিছু ছিল না, কিন্তু পেছনে লেগেছে মোজাফফর। মোজাফফরের ভাইই শ্যামনগর আওয়ামী লীগের নেতা। ফিরোজের কোনও আত্মীয় নেই প্রভাবশালী। কাকারা ফসল ফলান। বড়-ভাইয়েরা শহরের কেরানি। ফিরোজের মুদির দোকানের ব্যবসা। তিন কূলে কেউ পার্টি করেনি। তিন কূলে কেউ ধনী হয়নি। ইস্কুল মাস্টারের বাড়িতে সততার চর্চা হতো। সেকালে ইস্কুলের মাস্টাররা বিদ্যাকে বিলোবার জিনিস ভাবতেন, বিদ্যা নিয়ে ব্যবসা করেননি। সবুরের বাড়িতে লুকিয়ে থাকার সময়ই খবর এলো মোজাফফর তার লোকজন নিয়ে হরিশের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছেন। হরিশ শ্যামনগর ছেড়ে তার আগেই চলে গেছেন, কোথায় গেছেন কেউ জানে না। সবুর বললেন, কোথায় আবার, ইন্ডিয়ায়! ফিরোজ হাঁফ ছাড়লেন। ইন্ডিয়ায় যদি হরিশ চলে গিয়ে থাকেন, তবে বুদ্ধির কাজই করেছেন। অতি সামান্য ঘটনার জন্য যদি বাড়ি পোড়ানো হতে পারে, তাহলে বলা যায় না সম্মান নিয়ে জীবন যাপন করতে চাইলে জীবনটাই আদৌ থাকে কিনা। পার্টির লোক হেন কুকাজ নেই যে করতে পারে না। ওরা যত খুশি ভাঙ্গুক পোড়াক, ওদের তো বিচারও হয় না।
ফিরোজ অসহায় বোধ করেন। অসহায় বোধ করলেই মানুষের আদেশ উপদেশ মাথা পেতে বরণ করেন। ফিরোজকে সীমান্ত পারের ব্যবস্থা সবুরই করে দেন। সবুর এই ব্যাপারে দক্ষ বেশ। তবে বিনে পয়সায় তিনি কিছুই করেননি। নগদ তিরিশ হাজার টাকা তাঁকে দিতে হবে। ফিরোজ তিন হাজার দিলেন। তবে বাকি টাকার জন্য কাকাদের বলে দিলেন সবুরকে এ মাসে না হলেও পরের মাসের মধ্যেই যেন টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। সবুরই বলে দিলেন ওই পারে গিয়ে কী করতে হবে।
২
নিরানব্বই সালে দেশ ছেড়েছিলেন ফিরোজ, আজ দু’হাজার উনিশ সাল। মাঝখানে কুড়ি বছর। এই কুড়ি বছরে কত কিছু ঘটে গেছে। দুই কাকারই মৃত্যু হয়েছে। কাকাতো ভাইরা ভিটে মাটি বিক্রি করে ঢাকায় পাড়ি দিয়েছেন, ওখানেই থিতু হয়েছেন। বিয়ে করেছেন, সন্তানের বাপ হয়েছেন। কাকাতো বোন একজনই, তিনি শ্যামনগরেই শ্বশুরবাড়িতে আছেন। মায়ের দিকের আত্মীয়রা কে কোথায়, ফিরোজ জানেন না। মামাতো ভাই বোনদের খবর একবার দিয়েছিলেন ফুয়াদ, ওঁদের কারো সঙ্গে নাকি খুলনায় দেখা হয়েছিল, ওঁরা নাকি একজন দুবাই থাকেন, আরেকজন জেদ্দায়। ওসব দেশে তো শ্রমিকের কাজ করেও ভালো টাকা উপার্জন করা যায়। প্রথম দিকে যোগাযোগে অসুবিধে হলেও মুঠো ফোন চলে এলে দেশের সঙ্গে যোগাযোগে আর অসুবিধে হয়নি ফিরোজের।
সবুরের টাকা কাকারা মিটিয়ে দিয়েছিলেন, তবে মেটাতে ওঁদের এক মাস নয়, ছ’মাস লেগেছিল। মামাশ্বশুর বলে কিস্তিতে টাকা নিয়েছেন। অন্য কেউ হলে সুদে আসলে নিতেন বলে দিয়েছিলেন। সবুরকে চিঠি লিখে অবশ্য ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন ফিরোজ। সবুরের শরীরও আজকাল ভালো নেই। হার্টের অসুখ। ওদিকে শ্বশুরও গত হয়েছেন। ফুয়াদ আর ফেরদৌসের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, বিয়েশাদি করেছে, নাতি নাতনিতে ঘর ভরেছে। ফিরোজের দেখা হয়নি কারও বড় হওয়া। পরিবারের কোনও অনুষ্ঠানাদিতেও থাকা হয়নি তাঁর। হরিশ শ্যামনগর ছেড়ে ইন্ডিয়ায় নয়, ঢাকায় চলে গিয়েছিলেন, ঢাকায় তাঁর এক আত্মীয়ের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে সুপারভাইজারের চাকরি করেছেন। আত্মীয়ের মৃত্যুর পর হরিশ সেই কোম্পানীর ম্যানেজার বনে যান। এখন ঢাকা শহরে হরিশ বাড়ি কিনেছেন, গাড়ি কিনেছেন। গাড়িতে পেছনের আসনে বসেন, ড্রাইভার তাঁকে আপিসে নিয়ে যায়, আপিস থেকে বাড়ি নিয়ে আসে। মালা এখন মিটফোর্ড হাসপাতালের ব্যস্ত ডাক্তার। ওই হাসপাতালের এক ডাক্তারের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছে মালার। হরিশ আর তার পরিবারের সুখ স্বচ্ছলতার খবর শুনে ফিরোজ খুশি হন। স্বস্তি পান ওঁরা নিরাপদে আছেন জেনে।
ধীরে ধীরে ফিরোজের টালমাটাল অবস্থা কেটেছে। সাতক্ষীরা থেকে নদীয়ায় এসেছিলেন। সবুরের লোকেরাই রেশন কার্ড আর ভোটার আইডির ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু নদীয়ায় কোনও কাজ জোটেনি। নদীয়া থেকে এলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার শ্যামনগরে। সেই থেকে শ্যামনগরেই। শ্যামনগর নামটির আকর্ষণেই ফিরোজ থেকে গেছেন শ্যামনগরে। প্রথমে জুটমিলে শ্রমিকের কাজ করেছেন কয়েক বছর। তারপর নিজেই ঠেলাগাড়িতে শাক সবজি ফল মূল বিক্রি করেছেন। সীমাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতক শিশুদের স্নান করিয়ে তেল মালিশ করার কাজ করেছেন। দুজনের উপার্জনে মাথা গোঁজার ঠাঁই জুটেছে, দু’বেলা ভাত জুটেছে। দোকানের ব্যবসা ভালো জানেন বলে দোকান শুরু করেছেন, খুব ছোট দোকান থেকে বড় দোকান। এ দোকান দেশের শ্যামনগরের চেয়ে বড়, লাভও এখানে বেশি। সংগ্রাম করেই তো এ জায়গায় এসেছেন। বছর পাঁচ হলো ভালো পাড়ায় ভালো একখানা বাসা ভাড়া নেওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় যে কাজটি ফিরোজ করেছেন বলে মনে করেন, সেটি ফৌজিয়াকে পড়ানো। ফৌজিয়া তো যতই হোক ইস্কুল মাস্টারের নাতনি। ফিরোজ না হয় কলম পেষার কাজ না নিয়ে দোকানের ব্যবসা করেছেন, তাই বলে তিনি কি পড়ালেখার প্রয়োজন কিছু কম বোঝেন!
শ্যামনগরের মন্ডলপাড়ার ইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে কলেজেও ভর্তি হয়েছে ফৌজিয়া। উচ্চ মাধ্যমিকও পাশ করেছে। ব্যারাকপুরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে এমকম পাশও করেছে। পাশ করে ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইণ্ডিয়ায় চাকরিও পেয়ে গেছে। গৌতম নামে এক সহকর্মীর সঙ্গে মধুর সম্পর্ক তার। বাড়িতেও আসে গৌতম। ফিরোজ আর সীমাকে কাকা কাকীমা বলে ডাকে। ফৌজিয়া ছেলেটিকে বিয়ে করতে চায়। ফিরোজের এতে আপত্তি নেই, সীমারও নেই। আপত্তি গৌতমের বাড়ি থেকেই ওঠে।
সংসারের চেহারা ফিরোজ যত না বদলে দিয়েছেন, তার চেয়ে বেশি দিয়েছে ফৌজিয়া। লোকে জিজ্ঞেস করে ঘরে পুত্র সন্তান নেই কেন। সীমা একখানা পুত্র সন্তানের আকাংক্ষা করেছিলেন। কিন্তু ছেলে পেটে ধরেও জন্ম দিতে পারেননি। পেটের ছেলে পেটেই মরে পড়ে ছিল। শেষে অপারেশন করে জরায়ু ফেলে দিতে হলো। পুত্রের আকাংক্ষা তখন তিনি বাধ্য হয়েই ত্যাগ করেন। ফিরোজ ফৌজিয়াকে নিয়েই খুশি। তিনি ভাবেন পুত্র সন্তান জন্ম দিলে কী এমন ঘটতো, যা এখন ঘটছে না? সেই পুত্র যে বখাটে হতো না, বেয়াদপ হতো না, অশিক্ষিত, নেশাখোর হতো না—তার তো কোনও নিশ্চয়তা নেই!
ফিরোজের দোকান কালিমন্দিরের খুব কাছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরেও ছিল যশোরেশ্বরী কালিমন্দির। সেই মন্দিরটিও ছিল তীর্থস্থান, আদি শক্তিপীঠ। কী আশ্চর্য মিল দুই শ্যামনগরে! এই কালিমন্দিরটিতে পুরো পৌষ মাস জুড়ে পুজো দেওয়ার উৎসব চলে। দূর থেকেও লোক আসে পুজো দিতে। পুরো এক মাস ফিরোজের দোকানের বিক্রিবাটাও বেশ জমে ওঠে। অথচ এই পৌষেই ফৌজিয়া গোঁ ধরেছে, আপিস থেকে সে ছুটি পেয়েছে দশ দিনের। এই দশ দিন বাপ মা’কে নিয়ে সে পাহাড়ে যাবে। পাহাড়ের চেয়ে পুজোর উৎসবে ফিরোজের আকর্ষণ বেশি। ফৌজিয়া, ফিরোজ লক্ষ করেছেন, দেশে যাওয়ার আবদার কখনও করে না। ফৌজিয়ার বয়স ছিল সাত যখন দেশ ছেড়েছে। তার স্মৃতি এমন কিছু নেই যে সে ফিরতে চাইবে। সীমাও দেশ দেশ করেন না। ফিরোজ নিজেও বোঝেন প্রথম দিকে হাহাকারের ঝাপ্টা এসে বুকটাকে শুকিয়ে ফেলতো। এখন সেই কষ্টগুলো ধীরে ধীরে উবে গেছে। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে তাঁর যে এক অতীত ছিল, তা মনে পড়ে, বিশেষ করে সীমা যখন দেশের রান্নাগুলো করেন। দেশের স্বজনেরা এই কুড়ি বছরে একদিনও বলেননি পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে, চলে আয়। এখন বাড়ি ঘর এই শ্যামনগরেই। দেশের শ্যামনগরে কিছু নেই আর। জায়গা জমি কিনে নিয়েছে কারা, ফিরোজ জানেনও না। ফুয়াদ আর ফেরদৌসের সঙ্গেও অন্তত পাঁচ বছর যোগাযোগ নেই। ফিরোজই সাধারণত ফোন করতেন, ওঁদের কাছ থেকে ফোন আসতো না বলতে গেলে। এক তরফা ব্যাপারগুলো ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে। সীমার বাপের বাড়িতেও ওই একই হাল। বাবা মা গত হওয়ার পর স্বজনদের সঙ্গে দূরত্ব ভয়াবহ রকম বেড়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে ফিরোজ এবং সীমার কোনও আত্মীয় নেই। কিন্তু পরিচিত লোক আছে, বন্ধু আছে। এখানে ফিরোজরা যে সংখ্যালঘু, এ কদাচিৎ অনুভূত হয়। তবে হরিশকে যতটা অনুভব করতে হয়, তার তুলনায় এ কিছুই নয়।
তবে শেষ দু’তিন বছর ফিরোজ টের পেয়েছেন পাড়ায় একটা অসহিষ্ণুতা স্ফুলিঙ্গের মতো এদিক ওদিক ছিটকে পড়ছে। ফিরোজ যে পাড়ায় থাকেন, সেখানে দশ বারোটি ঘর মুসলমানের, বাকি সব হিন্দুর। এই হিন্দুর অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে আসা। সাতক্ষীরা থেকেই এসেছে কয়েক পরিবার। তাদের কারও কারও সঙ্গে সখ্যও হয়েছে ফিরোজের পরিবারের। এই শ্যামনগরে বসে ফিরোজ তাদের সঙ্গে সেই শ্যামনগরের ভাষায় কথা বলেন। ফিরোজ যতক্ষণ নাম না বলেন, অচেনা কেউ তাঁকে মুসলমান বলে মনে করে না। ঘরে লুঙ্গি পরলেই, ফিরোজ লক্ষ করেছেন, তাঁকে মুসলমান ধরে নেয় কিন্তু লুঙ্গি তো এ পাড়ায় বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুও পরছে। কলকাতায় লুঙ্গি-পরা-হিন্দুর সংখ্যা কম, কিন্তু শ্যামনগর কলকাতা নয়। ফিরোজ গিয়েছেন কলকাতায় নানা কাজে। ফিরোজও জানেন কলকাতা শ্যামনগর নয়।
এর মধ্যেই একদিন পাড়ার গিয়াসউদ্দিন, রাশিদ আর শাকিল ফিরোজের বাসায় এসে জানান বাংলাদেশ থেকে যে মুসলমানেরা এ দেশে এসেছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। নতুন একটা নাগরিকত্ব আইন হয়েছে এ দেশে, সে আইন যাকে তাকে ছোবল দিচ্ছে। সবার নথিপত্র দেখতে চাইছে সরকার।
ফিরোজ শান্ত কণ্ঠে বলেন, কোনও আইনই আমাদের ছোবল দেবে না, আমরা এ দেশের নাগরিক।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, নাগরিক কবে থেকে সেটি দেখতে চাইছে।
ফিরোজ বুঝে পান না এই তালিকায় তাঁরা কেন পড়বেন। তাঁরা তো ভোটার কার্ড অনেক আগেই পেয়েছেন। আধার কার্ডও হয়ে গেছে সে অনেকদিন।
ফিরোজের কানে গরম সীসা পড়ে যখন রাশিদ বলেন, একাত্তরের পরে যারা এসেছে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
যুদ্ধের আগে কী করে আসবো, তখন তো জন্মই হয়নি! ফিরোজের এই মন্তব্য শুনে ওঁরা কী বলবেন বুঝে না পেয়ে এঁর ওঁর দিকে নিঃশব্দে তাকান।
ফিরোজের বিশ্বাস হতে চায় না এই শ্যামনগরে বাস করার তাঁর কোনও অধিকার নেই। তিনি কখনও হিন্দু আর মুসলমানকে আলাদা করে দেখেননি। রাস্তায় কেউ আহত হলে তিনি তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান, রক্তের দরকার হলে রক্ত দেন। সে হিন্দু কী মুসলমান কী বৌদ্ধ কী খ্রিস্টান জানতেও চান না। কালিপুজোয় শ্যামনগরে প্রচুর লোকের ভিড় হয়। ফিরোজ মন্দিরের সামনে একখানা টেবিল পেতে ওতে ফলমূল, রুটি বিস্কুট, জলের বোতল আর কাগজের গ্লাস রাখেন। যাদের ক্ষিদে তেষ্টা পায়, তাদের বিনামূল্যে বিলোন। এই কাজটা প্রতি বছর করেন ফিরোজ। পকেটে পাঁচশো টাকা থাকলেও করেন, পাঁচ হাজার থাকলেও করেন। কালিপুজো ফিরোজের জন্য লক্ষ্মী। এই সময় ভালো উপার্জন হয়। উপার্জন যাদের জন্য হয়, তাদের জন্য কিছু খরচ করতে তাঁর দ্বিধা হয় না।
গিয়াসউদ্দিনরা উদ্বিগ্ন। মুসলমানদের নাকি কোন এক ক্যাম্পে রেখে দেবে। হয় বাংলাদেশে ফিরে যাও, নয় ক্যাম্পে। গিয়াসউদ্দিনরা নিশ্চিত ক্যাম্পে অত্যাচার করবে। তো কী করা যায়, এই পরামর্শ নিতে ফিরোজের দ্বারস্থ হন। ফিরোজ বলে দেন, আমি আবার পরামর্শ কী দেব। চিরকাল অন্যের পরামর্শ মতো চলেছি। লোকেরা বললো, ভারতে চলে যা, ভারতে চলে এলাম। দুই দেশ, কিন্তু আমার কাছে পৃথক কিছু মনে হয়নি। এক শ্যামনগর থেকে আরেক শ্যামনগরে আসতে যতটা পথ, তার চেয়ে লম্বা পথ পেতাম শ্যামনগর থেকে যদি রাজধানী ঢাকায় যেতাম।
সীমার চোখে মুখে দুশ্চিন্তা। বলেন, কী বলছেন ওঁরা? আমার তো ভয় হচ্ছে। এইসব নাগরিকত্ব আইন চালু হলে আমাদের তো মহামুশকিল। জন্মের সার্টিফিকেট নাকি দিতে হবে। এ দেশে জন্মেছি তার প্রমাণ দেখাতে হবে। এই খবর কি সত্যিই যে আমাদের তাড়িয়ে দেবে এ দেশ থেকে? তাহলে কোথায় যাবো, যাওয়ার তো জায়গা নেই। দেশে তো তোমার আমার কিছুই নেই। সব তো গেছে। বাড়ি ঘর আত্মীয় পরিজন, সব।
ফিরোজ হাসির হাওয়ায় দুশ্চিন্তা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাড়িয়ে দেবে বললেই হলো। এই দেশের নাগরিক আমরা। পাসপোর্ট না থাক, ভোটার আইডি আছে, রেশন কার্ড আছে, আর কী চাই? এগুলোই তো প্রমাণ আমারা যে নাগরিক, তার। জীবনের কুড়িটা বছর এখানে কেটেছে। এ কী কম কথা, কুড়ি দিন, কুড়ি মাস নয়, কুড়ি বছর।
সীমা বলেন, এসব কেউ বুঝবে না। আশেপাশের সবাই জানে আমরা বাংলাদেশের, জানে আমরা মুসলমান। বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমানদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এরাই জানিয়েছে। এরাই হুমকি দিচ্ছে, যদি এ দেশ না ছাড়ি, তাহলে সারাজীবন ক্যাম্পে পড়ে থাকতে হবে। ওখানে কী হবে না হবে কে জানে! সংসারে যখন স্বচ্ছলতা, তখনই দুর্যোগ ঘনাচ্ছে! ঠিক যেরকম ঘটেছিল ওদেশের শ্যামনগরে। ফিরোজ সীমাকে যত দেখেন, তত মুগ্ধ হন। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সীমা ছিলেন একজন গৃহবধূ, এই উত্তর চব্বিশ পরগনার শ্যামনগরে সীমা এখন কর্মজীবী মহিলা। আগে বাচ্চাদের গায়ে তেল মালিশ করতেন, এখন তিনি নিজের হাতেই শাড়িতে নানা রকম এমব্রয়ডারির কাজ করে বিক্রি করেন। কালিবাড়ি বাজারে দুটো শাড়ির দোকানে দিয়ে আসেন, আবার চেনা অনেকে বাড়িতে এসেই কিনে নিয়ে যায়। কথায় বার্তায় চলায় ফেরায় আচার ব্যবহারে সীমা আধুনিক হয়েছেন। ফিরোজকে কলকাতায় যেতে হলে সীমাই দোকান চালান। দুজন সহকারী যেহেতু আছে, দিব্যি চালিয়ে নিতে পারেন ।
ফিরোজের কখনও মনে হয় না ভারত সরকার তাঁদের বহিষ্কার করবেন। তাঁরা তো কোনও খুন খারাবি করেননি। কাউকে মারেননি ধরেননি। তাঁর বিশ্বাস কিছুদিন পর এই ডামাডোল থেমে যাবে। কিন্তু না, দিন দিন মনে হচ্ছে তেজ বাড়ছে। কোথাও কোথাও মিছিল হচ্ছে। কিছু সিপিএমের সমর্থক হিন্দু, কিছু বাংলাদেশি মুসলমান, কিছু এদেশি মুসলমান, কিছু ছাত্র ছাত্রী মিছিল করছে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ ফিরোজকে ডেকেছিল। ফিরোজ যাননি। কোনওরকম দাঙ্গা ফ্যাসাদে, সরকারের বিরুদ্ধে কোনওরকম তর্জনী উঁচিয়ে ধরার মধ্যে ফিরোজ থাকতে চান না। তাঁর দেশ বলতে এই দেশ। পুরোনো যে দেশ ছিল সেটি নেই এখন, সেটি পূর্ব জন্মের স্মৃতির মতো। এই দেশ তাঁকে খাওয়াচ্ছে পরাচ্ছে, এই দেশ ফৌজিয়াকে শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমতী করেছে। এই দেশ সীমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। এই দেশ তাঁকে নিরাপত্তা দিয়েছে, আর কিছু চাই না তাঁর। তিনি মিছিল মিটিং এড়িয়ে চলেন। রাজশাহীর ওঁরা, গিয়াসুদ্দিন, রাশিদ আর শাকিল, তাঁর পেছনে পড়ে রইলেন। থেকে থেকে বলেন, চলে যেতে বললে কী করবেন, শুনি!
ফিরোজ একদিন বলেন, চলে যেতে বলবে না। গণতন্ত্রে এসব চলে না। ভারত কি আমাদের দেশের মতো যে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে? এটুকু বুঝবে না যে তাড়িয়ে দিলে মানুষগুলো যাবে কোথায়? ও দেশে সমস্যা হয়েছে বলেই তো এ দেশে আসা। তা না হলে কেউ নিজের ভিটেমাটি ছাড়ে? আত্মীয় স্বজন ছেড়ে আসে?
গিয়াসউদ্দিন বলেন, হিন্দু হলে তো অসুবিধে ছিল না।
গিয়াসউদ্দিনের কাঁধে হাত রেখে ফিরোজ বলেন, এত ভয় পেও না তো। ভয়ের কিছু নেই। পলিটিক্স করলে কত কিছুই তো বলে লোকে। সব কথায় কান দিতে নেই।
রাশিদ এবার মুখ খুললেন, সবচেয়ে ভয়ের হলো ক্যাম্প। ক্যাম্পের কথা ভেবে রাতে ঘুমোতে পারছি না। এ কি হিটলারের ক্যাম্পের মতো ক্যাম্প? ক্যাম্পে রাখা মানে কিন্তু জেলখানায় রাখা। শ্যামনগরের কয়েকজন মুসলমানকে তো ধরে নিয়ে গেছে। আপনি কুড়ি বছর থাকছেন। ওরা তিরিশ বছর ধরে ছিল। বাড়ি ঘরও করেছিল।
ফিরোজ বাড়ি ঘর করবেন বলে পনেরো লাখ টাকা জমিয়েছেন। শ্যামনগরেই একটি মনের মতো বাড়ির তিনি খোঁজ পেয়েছেন। শ্যামনগর ছেড়ে অন্য কোথাও যাবেন না, এখানেই তাঁর ঘুমিয়ে শান্তি, তাঁর জেগে শান্তি, হাঁটাচলায় শান্তি। যে বাড়িটি কিনবেন ফিরোজ, সেটি এই মহল্লায় না হলেও কাছাকাছি। সীমা অবশ্য বলেছেন, ওসব এলাকায় বাড়ি দেখে কোনও লাভ নেই। ওসব হিন্দু এলাকা। ওখানে আমাদের কাছে বাড়ি কেউ বিক্রি করবে না।
ফিরোজ বলেছেন, মুসলমান বলে বাড়ি ভাড়া পেতে অসুবিধে হয় মানছি। কিন্তু বাড়ি কিনলে যে কোনও এলাকায় বাড়ি কেনা যাবে। টাকা থাকলে মুসলমান বলে কেউ আপত্তি করবে না।
সীমা বলেন, তোমার এই হিন্দুপ্রীতি আর গেল না। দেশের হিন্দুরা অসহায়, এখানে হিন্দুরা অনেকেই হিংস্র। তোমাকে দেখলে কিছু ছেলে যে জয় শ্রীরাম বলে আওয়াজ দেয়, খেয়াল করো না? খেয়াল ঠিকই করো, কিন্তু মাইন্ড করো না।
মাইন্ড করবো কেন? ওদের যে ভগবানকে ডাকার ইচ্ছে ডাকবে।
এ ভগবানকে ডাকা নয়। তোমাকে ভয় দেখানো।
আমি ভয় না পেলেই হলো। হিন্দুই তো এ-দেশে বেশি। কই, সবাই তো ভয় দেখাতে চাইছে না। হাতে গোনা কয়েকজনের আচরণে অত মুষড়ে পড়ার কিছু নেই।
তোমাকে কিছু বোঝানো যাবে না।
ফিরোজ এইবার সীমার চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে বলেন, দেশে থাকলে করতে পারতে যা এইখানে করছো? ফৌজিয়া যে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করে, পারতো? আমিই বা এতটা টাকা পয়সা কামিয়ে এই জীবন পেতাম? ছিল একটা মুদির দোকান, লোকে ডাকতো ফিরোজের দোকান বলে। এখন আমার দোকানের একটা নাম আছে, নাম শ্যামনগর জেনারেল স্টোর। দু’জন কর্মচারী দিয়ে চালাতে হয়, এত বড়। দুটো দেশ তো একই জমির ওপর। কিন্তু ফারাক আছে। আমরা মাইনোরিটি হয়ে যে সুবিধে এই দেশে পাচ্ছি, বাংলাদেশে মাইনোরিটি হিন্দুরা সে সুবিধে পাচ্ছে না।
সীমা বললেন, বাংলাদেশে অনেক হিন্দুই বড় চাকরি করে, অনেক হিন্দুরই বড় ব্যবসা।
ফিরোজ হেসে বললেন, এ দেশেও মুসলমানদের মধ্যে বড়লোকে ভর্তি। শাহরুখ খানের বাড়ি দেখেছো তো?
সীমাও হাসেন, আমাদের বিপদ হলে শাহরুখ খান কিন্তু বাঁচাতে আসবেন না।
৩
বিপদ ঠিকই আসে একদিন।
নতুন যে বাড়িটা ফিরোজ কিনবেন, সেই বাড়ির মালিক ক্যাশ টাকা চেয়েছেন। ক্যাশ দিলেই বাড়ি ফিরোজের নামে হয়ে যাবে। নিজের নামে হয়ে যাওয়া বাড়ির স্বপ্নে বিভোর ছিলেন ফিরোজ। বাড়ি কেনার জন্য জমানো পনেরো লাখ টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে এলো ফৌজিয়া, পরদিন সকালেই বাড়ি ফিরোজের নামে রেজিস্ট্রি হবে। অথচ কী আশ্চর্য, সেদিনই কিছু লোক বাড়িতে ঢুকে বাড়ি তছনছ করে যা আছে ঘরে সব ভেঙেচুরে আলমারিতে রাখা টাকাগুলো নিয়ে চলে গেল। পরদিন সকালে ফিরোজ থানায় যাবেন এফ আই আর করতে, কিন্তু তার আগেই এল আবারও কিছু লোক। বললো তারা পুলিশের লোক। থানায় যেতে হবে সবাইকে। এ কেমন আবদার! পুলিশের পোশাক নেই পরনে, বলছে পুলিশের লোক। কাপড় বদলানোর সময়ও দেওয়া হয়নি। পথেই লোকগুলোকে ফিরোজ বললেন, তিনি থানাতেই যেতে চেয়েছিলেন, কারণ একটা এফ আই আর করা জরুরি, বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। যা কিছু সম্বল সব নিয়ে গেছে।
লোকগুলো সমবেদনার কণ্ঠে বললেন, টাকা নিশ্চয়ই ফেরত পাবেন। এ শহরে কারা লুটপাট করে, তা পুলিশের জানা।
হাঁফ ছাড়লেন ফিরোজ। সীমা আর ফৌজিয়ার মুখ অন্ধকার। কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। সীমা খানিক পর পর চোখ মুছছেন। ফৌজিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বসে আছে। ভ্যানে পাড়া থেকে শাকিলকেও তোলা হলো। পথে যেতে যেতে আরও দু’জন অচেনা লোককেও। সকলে ঘটনার আকস্মিকতায় বোবা হয়ে আছে। চোখের সামনে থানা পেরিয়ে চলে গেল ভ্যান। থামলো না। ফিরোজ এবার মুখ খুললেন, কী ব্যাপার, থানায় যাবেন বললেন। আমার তো থানায় দরকার ছিল। সীমা ইঙ্গিতে ফিরোজকে কথা না বলতে বললেন। ফিরোজ উদ্বিগ্ন হতে চাইছিলেন না, কিন্তু হতেই হলো তাঁকে। তাঁদের কি ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করে মেরে ফেলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? ড্রাইভারের সিটের পাশে লোহার রড রাখা, ফিরোজ আড়চোখে দেখেন।
ভ্যান গিয়ে থামলো বাংলাদেশের বর্ডারে। সবাইকে নামিয়ে বাংলাদেশের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে ভ্যানের লোকেরা চলে গেল। ফিরোজ দেখেন জায়গার নাম মেহেরপুর। ঝাঁক বেঁধে আরও মানুষ ঢুকছে মেহেরপুরে। ফিরোজ জানেন না তিনি কোথায় যাবেন। তাঁর তো কোথাও কেউ নেই। হরিশই অনেক বছর যোগাযোগ রেখেছিলেন, সেই হরিশই গত বছর সপরিবার কানাডায় চলে গেছেন। কারও ঠিকানা জানা নেই ফিরোজের। পরিচিত যারা ছিল, সবাই হয় বাড়ি বদল করেছে, নয় শহর বদল করেছে, নয় জীবন বদল করেছে। কেউ হয়তো ফিরোজকে এখন চিনতেও পারবে না। ফিরোজ শ্যামনগরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফৌজিয়া স্তব্ধ হয়ে আছে, তার কাছে এখনও মনে হচ্ছে না এই ঘটনাটি সত্যিই ঘটেছে।
কেন প্রতিবাদ করেনি কেউ ভ্যানের ভেতর! কেন ভ্যান থেকে নেমে পড়েনি! ওই লোকগুলো আসলে তো পুলিশের লোক নয়। থেকে থেকেই জয় শ্রীরাম বলে চিৎকার করছিল। সীমার ধারণা ওদের হাতে অস্ত্র ছিল। তর্ক করলে বলা যায় না মেরেও ফেলতে পারতো। ফিরোজের কাছ থেকে সীমাও সব সইতে শিখেছেন। জান তো বাঁচলো, ঘর বাড়ি ধুয়ে কি পানি খাবো? সীমা বলেন, চল শ্যামনগরেই যখন যাবো, কালিগঞ্জে একবার থামবো। বর্ডারের কাছাকাছি জায়গায় দিব্যি ভারতের রুপিকে টাকা করে নেওয়া গেল। কুড়ি বছর আগের দেখা দেশ অনেক বদলে গেছে। এখন আগের চেয়ে সহজে কঠিন কাজগুলো হয়ে যায়।
মেহেরপুর থেকে যশোর হয়ে সাতক্ষীরা, বাসে ট্যাক্সিতে ঠিক ঠিকই পৌঁছে গেলেন ফিরোজ শ্যামনগরে। ফিরোজের হাতে কোনও টাকা ছিল না। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় নিজের জমানো কয়েক হাজার টাকা সীমা অন্তর্বাসে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন। সেই টাকাই এখন সহায়। কালিগঞ্জের বাড়িতে পৌঁছে সীমা দেখেন বাড়িতে অচেনা লোক। সীমার ভাইয়েরা বাড়ি ভাড়া দিয়েছে। তারা থাকে কোথায়? থাকে সাতক্ষীরায়। সাতক্ষীরা শহরে কোথায় খুঁজবে সীমা ভাইদের। ওদের কাছে সীমা হয়তো মৃত। দীর্ঘশ্বাস ফেলে সীমা বেরিয়ে আসেন বাড়ি থেকে। কালিগঞ্জ থেকে অতঃপর শ্যামনগর। শ্যামনগর অনেক বদলে গেছে, উঁচু উঁচু বিল্ডিং-এ ছয়লাপ। এর মধ্যে নিজের ভিটে খুঁজে বের করে পেলো ছ’তলা দালান। ছোটবেলার খেলার মাঠটি নেই, সেখানেও উঁচু বাড়ি। মোজাফফরের বাড়িটি এখনও আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এক যুবক বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, সম্ভবত এর নামই সুজন! বিস্ময়-চোখে দেখছিল ফিরোজদের। ফিরোজের একবার ইচ্ছে করে জিজ্ঞেস করতে কেমন আছে সুজন, কেমন আছেন তার বাবা! হরিশের ভিটেতে এখন থাকে অন্যরা। এই শ্যামনগর ফিরোজ চেনেন না। এখানে থাকার ইচ্ছেও তাঁর হয়না। আসলে জায়গা আপন নয়, আপন হলো মানুষ। সেই মানুষই আর এখানে নেই। তাঁর বরং মন কাঁদছে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগরের জন্য। ওখানেই তাঁর সহায় সম্পদ, তাঁর বাড়ি ঘর, তাঁর রোজগার, স্ত্রী কন্যা নিয়ে তার সুখের সংসার। শ্যামনগরে এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে ফিরোজের নিজেকে অচেনা লাগে। পাড়ার কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করে না তিনি কে, কাউকে কি খুঁজছেন তিনি!
ফিরোজের মনে হতে থাকে তিনি একটি অচেনা কুয়োয় পড়ে গেছেন, এই কুয়ো থেকে বেরোনোর আর কোনও উপায় তাঁর নেই। বাজারে তার দোকানটিও নেই। অন্যরকম সব দোকান বসেছে। মোবাইল ফোনের, টেলিভিশনের। আগের চেয়ে বাজারে ভিড় বেশি, আগের চেয়ে বাজার ঝকঝকে। ফিরোজের মনে হতে থাকে বাপ দাদার ভিটেয় তাঁকে কেন সামান্য ভাগও দেওয়া হয়নি, দেওয়া হলে তো আজ এখানেই কুঁড়ে ঘর তুলেও মাথা গুঁজতে পারতো। সেই যে সবুরকে সাতাশ হাজার টাকা দিয়েছিলেন কাকারা, ওতেই কি তাঁরা ভেবে নিয়েছেন ফুরিয়ে গেছে উত্তরাধিকারের দাবি! আজ বড় দুই ভাইও দূরে চলে গেছেন । তাঁদের ঠিকানা পর্যন্ত জানেন না ফিরোজ। নিজের ভিটের সামনে মাটিতেই বসে পড়লেন তিনি। শরীরে কোনও শক্তি অনুভব করেন না।
ফৌজিয়া অস্থির পায়চারি করতে করতে বলে, এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। কিছু একটা করতে হবে। চল কাকাদের বাড়ি খুঁজে বের করতে হবে, চল। তোমরা যাও বা না যাও, আমাকে তো যত শীঘ্র সম্ভব ইন্ডিয়ায় যেতে হবে। আমাকে তো চাকরিটা করতে হবে।
শুনে ফিরোজ তৃপ্তিতে চোখ বোজেন। আবার একটু পরই ভাবেন ফৌজিয়া কি আসলেই বলেছে ও কথা, নাকি তাঁর নিজের ভেতর থেকেই কথাগুলো আওয়াজ করে উঠেছে?
19 January, 2024
বেশ ভালো লাগল । ভারতের সাম্প্রতিক সমস্যাটি এই গল্পে বেশ গুছিয়ে তুলে ধরা হয়েছে । তসলিমা নাসরিনকে ধন্যবাদ ।