পুরোগামী দ্বিতীয় সংখ্যা (জানুয়ারি, ২০২৪)

লিখেছেন:পুরোগামী সম্পাদক-মন্ডলী


সুধী পাঠকমন্ডলী,


পুরোগামী দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ পেলো। ইতোমধ্যে প্রথম সংখ্যার মূল্যায়ন কোনো কোনো নিবিড় পাঠক আমাদের জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মন্তব্যটি হলো, "এই সংখ্যা যে প্রথম সংখ্যা, সেটি বোঝাই যায়নি। মনে হল, অনেক পথ পেরিয়ে এসেছেন আপনারা।" ফলত, দ্বিতীয় সংখ্যার দায়িত্ব বাড়ল এই অনুভবকে ধরে রাখবার এবং আরো ছড়িয়ে দেওয়ার। আমাদের ধারণা, এই সংখ্যার লেখক লেখিকারাও তাদের সেরা লেখাটি মেলে ধরেছেন আপনাদের জন্য। বাকি যা মন্তব্য, তা আপনারা অবশ্যই জানাবেন।

সবাই কে কেমন ভাবে মরশুমের দিনগুলো কাটাচ্ছেন জানিনা। হয়ত উৎসব মুখর এই সময়ে সারা দুনিয়ার মানুষ সেই ক্ষমাশীল মেষপালকের জন্মদিন মহা ধূমধামের সঙ্গে পালন করেছেন। কিন্তু একটা কাঁটা গলার কাছে কি খচখচ করছে না? এই মুহূর্তে মধ্য এশিয়ায় গাজা ভূখণ্ডে যা ঘটছে, যে ভিডিওগুলো ছড়িয়ে পরে চলে আসছে আমাদের মোবাইলে সেগুলোকে কত আর এড়িয়ে থাকা যায়! ধ্বংসের এত নির্মম দৃশ্য আমরা কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিংবা ভিয়েতনাম ওয়ারের পর আর একবারও দেখেছি? ভাবলে অবাক লাগে, এই তো সেদিন ভিয়েতনাম নিয়ে আমাদের দেশ তথা সারা দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষ আন্দোলিত হয়েছিলেন। কিন্তু আজ কি সেইভাবে আমরা রাস্তায় নেমেছি বা নামতে পেরেছি? উত্তর হল, না।

আমরা কম্বলের নিচে হাত গরম করে নিয়ে তারপর ভিডিওগুলো দেখছি। ভাবছি, উফ, কি ভয়ংকর সুন্দর এই ধ্বংসের দৃশ্য ! ইমারতের পর ইমারত ভেঙে পড়ছে। শিশু কিশোর নারীর রক্তাক্ত শরীর নিয়ে ছুটে চলেছে তাদের বাবা মা কি আত্মীয় পরিজন হাসপাতালের দিকে। সেখানে বসে আছে ইজরায়েলি সৈন্য। তারা জল আলো বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে হামাসকে দমনের নামে চালাচ্ছে নির্বিচারে গুলি। আমরা ভিডিওয়ে দেখছি হামাসের সুড়ঙ্গ আর মনে মনে ভাবছি শেষ হোক এই সন্ত্রাসবাদীরা। অথচ মরছে কিন্তু সাধারণ নিরীহ মানুষ। তার সঙ্গে জুড়েছে এক বিশেষ ধর্মের মানুষদের সবাইকে সন্ত্রাসবাদী বলে দাগিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। আমাদের দেশও এই প্রবণতার ব্যাতিক্রম নয়। চলছে কূটনীতির আরও কুটস্য কূট চাল। না আমারা ইজরায়েলের পক্ষে, না আমরা প্যালেস্টাইনের পক্ষে, এইরকম একটা দু নৌকায় পা দিয়ে চলছে রাষ্ট্রনীতি। পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে চলছে লক্ষ কণ্ঠে সরকারি মদতে গীতাপাঠ। যাতে এই দেশের ওই বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষগুলো কুঁচকে থাকে, ট্যাঁ ফোঁ না করতে পারে, টাইট থাকে সবাই, তা নিশ্চিত করার উৎকট এক উল্লাসে মত্ত বেশির ভাগ মানুষ। খেতে পাই না পাই, চাকরি পাই না পাই, কাজ থাকুক না থাকুক, মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে। শাবাশ, আফিমে বুঁদ আমার সহনাগরিকগণ।

কিন্তু নগর পুড়লে মন্দির কতক্ষণ নিরাপদ? এখনও সময় আছে মুখ খোলবার। আসুন আমার দাঁড়াই আক্রান্ত মানুষের পাশে সোচ্চার হয়ে। আসুন আমরা দাঁড়াই বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর সন্দেহের তীর নিক্ষেপ যাতে বন্ধ হয়, সেই প্রতিবাদে। ধর্মের নামে আমরা যেন নিজেরা না পাল্টে যাই।

 

- সম্পাদকমণ্ডলী, পুরোগামী 

 

1 Comments
  • avatar
    Samirendra Nath Pande

    18 January, 2024

    শুধু নয় ধর্ম ওটা তো এক বর্ম লুকিয়ে আছে দূরবৃত্তায়ন তার নিধনই কর্ম

Leave a reply