শাপলা ফুল
পুকুরের টলটলে ফরসা জলে ভেসে ওঠে
একটি কিশোরী মেয়ের মুখ
বিবস্ত্র খুবলানো দেহ তার
খোলা দু'চোখ
চুলের উপরে ফুটে আছে ভোরের শাপলা ফুল ;
কোথা থেকে এল এই মেয়ে ?
যদি তার কপালে জেগে উঠত আজ দেবী প্রতিমার ত্রিনয়ন
তাহলে অসুরেরা কী খুলে নিতে পারতো
তার পোশাক
খুবলে খেতে পারতো তার কিশোরী শরীর ?
ও আমার অচেনা কিশোরী মেয়ে
পুকুর জলের গভীর থেকে খড়্গ হাতে উঠে এসে
কুচি কুচি করে কেটে ফেলো
সেই সব কাপুরুষ অসুরের অন্ডকোষ ;
রণচন্ডী দেবীর মতন যদি তোমার হাতে ঝলসে উঠত
বেঁচে থাকার আয়ুধ !
ও আমার অচেনা কিশোরী মেয়ে
স্মৃতির ভিতর
এই যে হেলানো বট হিজল জারুল তমালের কুঞ্জছায়া
এই যে রুপোলি দুপুর রোদ্দুরে স্নান করা
ধূ... ধূ... মেঠো পথ, ধান মাঠ
তারপাশ দিয়ে নীরবে বয়ে যাওয়া ছোট নদী, পুরোনো কাঠের ভাঙা সেতু,
সাদা কাশবন
এই যে পাখির ডানার ধূসর রঙ মাখা
মেঘের আকাশ
তার নীচে পুতুল নাচের আসর,
চন্ডী মণ্ডপে অষ্ট প্রহর সংকীর্তন
সব কিছুই রয়ে গেছে আজও অবিকল
মাঝখানে হারিয়ে গেছে
ভোরের কৈশোর, কানামাছি খেলা,
গোল্লা ছুটের দুপুর
পুকুরের খিড়কি ঘাটে নাইতে আসা
বধূদের গল্পগুজব;
তবুও সবকিছু বেঁচে আছে অম্লান স্মৃতির ভিতর
মায়ের মুখ
প্রতিটি নির্মাণের পিছনে লেগে থাকে
শ্রম নুন ঘাম
প্রতিটি ভাতের দানায় ফুটে ওঠে
মায়ের বাসনমাজা অভাবী মুখ
প্রতিটি ভাঙনের গায়ে লেপ্টে থাকে
বিন্দু বিন্দু অশ্রু শিশির
আর প্রতিটি ভালবাসায়
জেগে থাকে রূপকথা স্বপ্ন