গুচ্ছ কবিতা

লিখেছেন:অনুরাধা মহাপাত্র

 

চলো চলো 

নদীয়ার দেবগ্রামে শিবমন্দিরে অচ্ছুৎ বলে 
           মুচিদের 
                         ঢুকতে দেওয়া হল না। 
বলি, ও মূর্খ বাঙালি, এভাবে কি আমরা সকলেই 
            অচ্ছুৎ হয়ে যাচ্ছিনা 
                           ধর্ম ও রাষ্ট্রের কাছে?
অথচ রয়েছি আমরা তীব্রতর গতিবেগের ভিতর। 
প্রশান্ত মহাসাগরে নামছে স্পেস এক্স ড্রাগন। 
ফিরে আসছেন সুনীতা, ফিরে আসছে মহাকাশ বিজ্ঞান পৃথিবীতে 
তবু এত ভ্রম।
মানুষে মানুষে জ্বলে গেল ইতিহাস শ্রম। 
তবে এও কি বলবে তোমরা - মহাকাশও অচ্ছুৎ হবে 
যদি মুচিরা বিজ্ঞানী হয়! 
ধরো শিবের শরীর এই মহাব্যোম—
মুচি, ডোম, চাঁড়াল, Y, X, সবাই কি অংশ নয়
এ-মহাকাশের? সকলের মাথায় নেই স্পেস?
সবার মস্তিষ্কে নেই লক্ষ অন্তরীক্ষ, লক্ষ নীহারিকা? 
এসবও কি মানুষেরই ধর্ম নয়?
অন্ধতার অন্ধকারে মানুষ হতেছ ক্রমে ক্ষান্তিহীন বোধহীন 
অন্ধ ধর্ষক। 
এভাবে এই রূপেই কি তুমি এই মহাকাশে স্পেসে থেকে যাবে?
মুছে গিয়েও হিংসা থেকে যাবে কোষের গভীরে!
চলো চলো, ভোলো এই কথা
চলো মহাসাগরে — অতলান্তিক থেকে প্রশান্ত সাগরে 
চলো, এগোই
কারণ এটাই জীবন — আর কিছু নয়।
 

জল দাও 

‘জল দাও আমায় জল দাও’ – চারপাশ জুড়ে বম্ব পড়ছে
উঠছে কান্নার পাগল করা স্বর
অপ্রেম লোভ পোড়ায় পৃথিবী 
মৃত্যু আগুন আজ অনন্ত অবাধ। 
দাঁড়ের শব্দও আজ মুষল ফেলার শব্দ বোধ হয়
বাঁচতে দাও, আমরা বাঁচতে চাই–
শিশুরা কান্নায় অন্ধ ও বধির হতে হতে বলে যাচ্ছে 
রাডারে কি সে কান্নার কম্পন অনুভূত হয়
দেশ পেরোনো কাঁটাতার ডিঙোনো সেই মৃত্যু ও জীবনের আর্তি কি 
মানুষের মাথায় হৃদয়ে পৌঁছয়? 
পুড়ছে শিশুর রক্ত
পুড়ছে বালিকার নাভি
পুড়ছে পুড়ছে চলন্ত পা 
‘জল দাও’ এই মর্মকথা এসে পৌঁছয় না তাহাদের ঘুমে 
পোড়ার মাত্রা এত বেশি!
আগুনের অন্ধকার ঘূর্ণি এতদূর।
 

#
‘জল দাও’
ধোঁয়া উঠুক
আগুন, আরও তীব্র হোক 
তবু জল দাও
পোড়া মাটি থেকে উঠছে তবুও অংকুর
কামশানবিলাসী ওহে ভবিষ্যৎহীন কামাতুর 
বে-আব্রু শুধু রাতদিন মহৎ যা কিছুর 
থামো, না থামো যদি তুমিই হবে তোমারই অভিশাপ। 
এই অংকুর আজ শুধু বলে ‘জল দাও’। 
তুমিও পুনরায় মিসাইল ছোঁড়ার আগে শোনো কান পেতে 
‘জল দাও’। ভাবো। 
ঘুরে দাঁড়িয়ে বলো এই কথা - ‘জল দাও’।   


 

হায়! সেই আগ্রাসন

খাদ্য খুঁজছে পাল পাল শকুন উপরে
হাঁসেরা মাটির রাস্তায় ডানা ঝাড়ছে
চলে যেতে যেতে শুভ্রতায় বলছে ; ‘সাবধান,
জানো না কি আল্লা মেহেরবান হলে গাধাও পাহেলবান হয়?’
তদ্রূপ এই সমাজ সত্তা সংসার। 
মুহুর্মুহু বদলে যাচ্ছে মহৎ যা কিছু 
দিকে দিকে এমনকী চরাচর ব্যেপে আজ শুধু আগ্রাসন। 
শকুনে শকুনে আজ কানাকানি
আকাশ মাটি সবটাই বর্জ্য করে নষ্ট করে
কীসে যে শকুন-অন্বেষণ 
হাঁস তবু ডানা ঝেড়ে, ডানা ঝেড়ে শুভ্র হয়
ততো তার অন্তরে বাড়ে শুদ্ধতা 
বাংলার মানচিত্র জলে স্থলে অন্তরীক্ষে ব্যাপ্ত হয় 
মন তার সাদাতেই আ-ভূমণ্ডন। 
তবু হাঁস ধূলায় জলে পা ফেলে পা ফেলে 
রুদ্রবীণার সুরে বলে যায় উদয়াস্ত - শোনো, সাবধান
অদৃশ্য ও অর্ধদৃশ্য চক্রের মতো ঘুরছে শকুন 
আগ্রাসনের কত রূপ, কত তার চোখের ঘোর রং
আজ মাটির মানুষের চরম দুঃখের, দারুণ শোকের অভিজ্ঞতা
কতভাবে তুচ্ছ হয়ে যায়!
বুঝছ না শুদ্ধতাও আজ
চরম সংগ্রাম? 

 

0 Comments
Leave a reply