আমতলা কাফে তে, বিকেলশেষে, কাজফেরত মানুষের এক পা, দু পা। কেউ চিনি ছাড়া লাল তো কেউ, (কিভাবে পারেন খেতে কে জানে) চিনি ছাড়া দুধ চা। সঙ্গে নানান আকৃতির বিষ-কূট। একটু দূরে, রাকেশ ফুচকা, যার বুদবুদ ফাটছে এ অঞ্চলের নারী ও পুরুষ টাগরাতে, বুদবুদ ফাটছে, ফুচকার, আয়া সেন্টারের কাজ ফেরত, লেডিজ সাইকেলটিও মন্থর হয় রাকেশের ডাকে, কী? খাবে না? এরই মধ্যে, রিনরিনে, ভরাট মন্দিরার গাড়ি ঢুকে আসে, ট্যাঙ্কের মত, অকস্মাৎ, হরিনামের জাল যেন স্পাইডারম্যানের আঙুলনিঃসৃত জালের মত, পাকে পাকে বেঁধে ফেলতে থাকে পুকুরপাড়ের চা দোকানকে, চা দোকানে বসে থাকা, দু একজন বলিষ্ঠ চেহারার, মানুষকে কেমন সিঁটিয়ে যেতে দেখি, কেন জানিনা, তারা হঠাৎ অনেক কথা, হাসি দিয়ে যেন এই গুনগুন করা নামকে কাটতে, কেটে ফেলতে চাইছেন, আমি সাইকেলটা নিয়ে, অন্যদিকে যেতে গিয়ে, একবার দেখি, তুলসীমালা, খান পঞ্চাশেক হবে বয়স, দেখে চল্লিশ মনে হচ্ছে। কিছু মূদ্রা এই নামধারীর হাতে দিয়ে, রাকেশের চুরমুর শব্দে বিকেল মুড়ে ফেলা দেখি আড়চোখে। অসুখের মত, রাকেশকে চিনি, এতবছর, আচ্ছা রাকেশ কি আপনার পাড়াতে যায়? কাকে জিজ্ঞেস করলাম, অনেকটা চলে এলাম, রুটির দোকানেও লাইন। স্টেশন রোড তো, ঘুমোয় না, কখনও, শুধু দোলের দিন দুপুরে, আর ভাসানের পর, কেমন ছেতরে পড়ে থাকে, মনুষ্যচিহ্নহীন, এ টি এমের বারান্দাতে পড়ে থাকে স্টেশন রোড, তখনই আবার শুনতে পাই, মন্দিরার হালকা টোকা, সেই গুনগুনে নাম, বাবা আজ কদ্দুর যাবেন, নাম দিতে? এই রাস্তা সোজা পল্লিশ্রীর দিকে উড়ে গেছে, টয়োটা করে টিয়াটি কখন যেন ঝুনো হয়ে গেল, কেউ বলে দেয়নি? মাথা উঁচু করে, শব্দটা খুঁজতে গিয়ে দেখলাম হ্যাঁ, বোষ্টম বাবা চলে এসেছেন হাঁটতে হাঁটতে, রুটির দোকানে দাঁড়ালেন, মূদ্রা পেলেন দুটি… ভাবলাম দুটি রুটি সবজি যদি বেঁধে দিতে বলি, রাস্তার জন্য, নেবেন কি? বলা আর হ’ল না তেমন, আমিও দাঁড়ালাম না। পরে, অনেক রাতে, ডাবিং শেষে বেরিয়ে রাণীকুঠি মোড়ে এসে দেখি, তিনি পরিত্যক্ত ট্রাফিক পুলিশের বেদীতে দাঁড়িয়ে, যেখানে কেউ আর দাঁড়ায় না তেমন। সেবা হয়েছে বাবা? হাসলাম, দুজনেই। বললেন সক্কালবেলা কাজ আছে, ঢালাইয়ের, এই কাছেই। তাই, রাতটা একটু বসে, ভোরে কাজের রাস্তা ধরবেন। গোঁসাই মথুরাপুরের মানুষ, চোখগুলো কেমন যেন, না তাকিয়েও দেখতে পাওয়া আর কি। একটা রিকশার খোঁজে, পাবো না জেনেও, এগোই, কানে এলো গুনগুন করছেন, বনে এসে হারালাম কানাই। কে জানে, কিসব। আর দেখিনি কোনোদিন। মাত্র একদিন, স্বপ্নে পেয়েছিলাম, একটা ভেজা ভেজা, নিদ্রিত বাসার লালচে উঠোনে, এক ঝুড়ি এঁটো বাসনের থেকে, ক্ষিপ্র হাতে কটা বাটি থালা বের করে মাজছেন, আর মুখে বলছেন আল্লার রহমত, আল্লার রহমত। মানে জানি না। পেশীগুলোও আজকাল, কথা শোনে না তেমন...