বর্তমানে হিন্দুরাষ্ট্র নিয়ে চর্চা - বিতর্ক অনেক বড় মাত্রায় দেখা দিয়েছে। বি জে পি, আর এস এস বাহিনীর প্রচার আস্ফালন কম দেখা যাচ্ছে না। যে গতিতে ঘটনাক্রম এগোচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে অচিরেই হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। আশংকা উদ্বেগও বাড়ছে জনমানসে এবং তা অমূলকও নয়। আবার হিন্দুরাষ্ট্রের বিরোধিতাও যে খুব গভীরতায় হচ্ছে এমনটাও নয়।
হিন্দুরাষ্ট্রের চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা কেন? মনে হয় প্রশ্নটিকে আজকাল খুবই সরলভাবে বিচার করা হচ্ছে। ভারতে ১৯৪৭ সালে যে সংবিধান তৈরি হয়েছিল তাকে বদলে ফেলার বিরোধিতা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে - বিজেপি আর এস এস এর যে সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ব সেটাই হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার কারণ। আর এস এস এবং জনসংঘ হিন্দুরাষ্ট্রের ওকালতি তার জন্মলগ্ন থেকেই করে আসছে। আর এস এস এর প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়লে হিন্দুরাষ্ট্র তৈরি হবে, না হলে পেছনে চলে যাবে। অর্থাৎ আর এস এস এর সাথে যুক্ত হিন্দুরাষ্ট্রের ভবিষ্যত। এই রাষ্ট্র তৈরি হলে তুঘলকি কান্ড চালাবে সংঘপরিবার। এই বিরোধিতা সমস্ত বিরোধী দলগুলি করছে, বুদ্ধিজীবিরা করছে, সমস্ত বামেরাও করছে। কিন্তু আজ যে হিন্দুরাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা সামনে আনা হচ্ছে তা ধর্মীয় হিন্দুত্ব নয় ,তা হল রাজনৈতিক হিন্দুত্ব এবং এ কোনও ধর্মীয় মতবাদ নয়। এ হল চরম কর্তৃত্বকারী রাষ্ট্রের পক্ষে এক রাজনৈতিক মতবাদ। ধর্মীয় হিন্দুত্ব ও রাজনৈতিক হিন্দুত্বের পার্থক্য আমাদের বুঝে নিতে হবে। ধর্মীয় কর্তৃত্ব এবং বি জে পি'র কর্তৃত্বকে এক করে দেখাটাও ঠিক নয়। রাম মন্দিরের ঘটনায় হিন্দুধর্মের শংকরাচার্যদের মোদির বিরোধিতা থেকে, বেনারসের মন্দির ভেঙ্গে রাস্তা বানানোয় আর এস এস এর এক অংশের বিরোধিতা থেকেও বোঝা যায় এই পার্থক্য বাস্তব। আমাদের রাজনৈতিক হিন্দুত্বের বিরোধিতা করতে হবে। এবং তা আজকের সহজ সরলভাবে যে ধর্মের নামে রাজনীতি করার বিরোধিতা করে ধর্মীয় হিন্দুত্বের বিরোধিতা হচ্ছে সেটা দিয়ে হবে না। বরং এই ধরনের বিরোধিতা ভারত রাষ্ট্রের মধ্যেই হিন্দুরাষ্ট্রের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তার অন্তর্নিহিত সত্যকে আড়াল করে।
ধর্মীয় রাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলেও দেখা যাবে হিন্দুরাষ্ট্র কোনও ধর্মীয় রাষ্ট্র নয়। বিজেপি সে দাবীও করে না। ইসলামিক রাষ্ট্রের মতও নয়। আমরা দেখেছি মধ্যযুগের ইউরোপে ধর্মীয় কর্তৃত্ব সমগ্র সমাজকে শাসন করত। সামাজিক সমস্ত বিষয়ে ছিল ধর্মীয় অনুশাসন। কিন্তু ইতিহাসের গতিতে ধর্মীয় পোষাকে রাজনৈতিক শাসনের যুগের অবসান ঘটেছে। সমাজে ধর্মীয় কর্তৃত্বের অস্তিত্ব থাকলেও রাষ্ট্রের রাজনৈতিক শাসন থেকে ধর্মীয় কর্তৃত্বের পার্থক্য দেশে দেশে মাত্রার বিভিন্নতা থাকলেও রাখতেই হয়। ইতিহাসের গতিপথে ধর্মীয় কর্তৃত্বের সাথে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের এই বিচ্ছেদ কিন্তু ভাবনার জগতে নয়, এ হল বস্তুগত বিচ্ছেদ। একে আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। এ কারনে বুঝে নিতে হবে যে, হিন্দুরাষ্ট্র একটি রাজনৈতিক প্রকল্প, এর সাথে ধর্মের যোগ থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু সেই যোগ নির্ধারক নয়। আসলে হিন্দুরাষ্ট্রের বিচারের জন্য আমাদের বিজেপি বা সংঘপরিবারের চক্রান্ত-ভাবনা-তত্ত্ব ইত্যাদিকে একপাশে সরিয়ে রেখে এগোতে হবে।
এখন প্রশ্ন হল হিন্দুরাষ্ট্রের সাথে ভারতীয় সংবিধানের কি কোনও বিরোধ আছে ? ১৯৪৭ পরবর্তী কালে ভারতে রাষ্ট্রশাসনের এবং সমাজবিকাশের যে মডেল গ্রহণ করা হল সেই সমন্বয় অনেকদিক থেকেই নতুন। কেন এমন মডেল নেওয়া হল ? সে সময়ের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় অবস্থার কিছু বৈশিষ্ট্যকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। যেমন সোভিয়েত বিপ্লবের প্রভাব, ১৯৩০ এর দশকের অভূতপূর্ব আর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় সোভিয়েত মডেলের কার্যকারিতা, এবং চীন বিপ্লবের ঘটমান ঘটনাবলী। এ অবস্থায় উপনিবেশ-উত্তর ভারতকে গড়ে তোলার জন্য সোভিয়েত মডেল এবং রাষ্ট্রশাসনের জন্য পশ্চিমী মডেলে পার্লামেন্টসহ সাংবিধানিক গণতন্ত্র গ্রহণ করা হল। নেহেরুর এই সমন্বয়কারী পন্থা একদিকে তার বিরুদ্ধমতের আম্বেদকার-প্যাটেল প্রভৃতিদের, অন্যদিকে মহলানবিশ-মেঘনাদ সাহা’র মতো প্রতিভাবানদের ভারত গড়ার কাজে ঐক্যবদ্ধ করল। কমিউনিজমের প্রভাবকে অনেকাংশে খর্ব করা এবং ভারতের বিকাশের (অবশ্যই পুঁজিবাদী) পথে অগ্রসর হওয়া গেল। অনেকেই ভেবেছিলেন এ ভারত বেশীদিন টিকবে না ভেঙ্গে যাবে । তা কিন্তু হল না উপরন্তু ‘সমাজতান্ত্রিক শিবির এর সাহায্য’ পাওয়া গেল এবং পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলিরও বিরোধিতা এড়ানো তো গেলই বরং কিছুটা সমর্থনও জুটে গিয়েছিল। এ অবস্থায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা – হিন্দুত্বের প্রচার - ইসলাম বিদ্বেষের প্রাবল্য থাকলেও তা আধিপত্যের স্থান নিতে পারেনি। ভারত এগিয়েছে, অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছে, সমাজ বদলেছে, রাষ্ট্রের মানগরিমা প্রসারিত হয়েছে অনেকখানি। রাজ্যসমূহের ইউনিয়ন হিসাবে রাজ্যগুলির স্বাতন্ত্র্য বজায় থেকেছে – কেন্দ্রের ক্ষমতা ততখানি কেন্দ্রীভূত নয়। কিন্তু প্রথম ১৯৫৯ সালে কেরলের নির্বাচিত সরকারকে ভারতের সংবিধানের ৩৫৬ ধারা প্রয়োগে ভেঙ্গে দেওয়া দিয়ে কেন্দ্রের কর্তৃত্ববাদী ঝোঁকের প্রকাশ দেখা গেলেও প্রথম ইন্দিরা গান্ধীর আমলেই ভারতরাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীয়করণের সর্বগ্রাসী রূপ দেখা গেল। জোরাল প্রতিবাদ উঠল বাম এবং আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষ থেকে – জনপ্রিয় স্লোগান ছিল 'রাজ্যের হাতে অধিক ক্ষমতা'র দাবী। ইন্দিরা স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাক – এই আওয়াজ দিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেস পার্টিকেই স্বৈরতান্ত্রিকতার পান্ডা বলে চিহ্নিত করা হল। সুপ্রীম কোর্টের রায়ের ধাক্কায় তখনকার রাষ্ট্রীয় স্বৈরতন্ত্র কায়েমের প্রচেষ্টা আটকে গেল এবং তারপর উনিশ'শ সাতাত্তরের নির্বাচন। কিন্তু ইন্দিরাকেই স্বৈরতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে আড়াল করা হল বা আড়ালে থেকে গেল ভারতরাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক চাহিদার গুরুত্বপূর্ণ দিকটি। কংগ্রেস বিজেপি ইত্যাদি পার্টির কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসনের চাহিদা এবং অন্যদিকে সাংবিধানিক গণতন্ত্রের মধ্যেই রাষ্ট্রের যাত্রাপথে কর্তৃত্ববাদী, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরনের বা স্বৈরতন্ত্রের চাহিদা - এই দুইকে পৃথক করে আমাদের দেখা দরকার। এখন আবার হিন্দুরাষ্ট্রের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের স্বৈরশাসনের অভিমুখে গতি প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। একে কেবলমাত্র বিজেপি আর এস এস এর সাম্প্রদায়িক চরিত্রপ্রসূত বলে দেগে দিলে, রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের চাহিদা প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে কোন জমির ওপরে সে প্রশ্নের বিচার হয় না ।
রাষ্ট্রের মৌলিক কাজ হল শাসন করা। তা সেই রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক, উদারতাবাদী বা রাজতন্ত্র যাই হোক না কেন। রাষ্ট্রের অস্তিত্বের যৌক্তিকতা, মৌলিক চাহিদা হল সমাজকে শাসন করা। রাষ্ট্র সমস্ত সামাজিক কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। সমাজ যে অর্থনীতিকে ধারণ করে – পরিবারসহ চালু সামাজিক যে কাঠামোর মধ্যে সমাজ চলাফেরা করে, সমস্ত সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ, শিক্ষাসহ যাবতীয় সামাজিক সমস্ত কার্যকলাপ। সামাজিক কার্যকলাপের মূল দুই ভাগ, এক অর্থনৈতিক আর বাকি অর্থনীতি-বহির্ভূত। অর্থনীতি, বিশেষত পুঁজিবাদী অর্থনীতির ওপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। রাষ্ট্র বা সমাজ কেউ অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না। কিন্তু সোভিয়েত মডেলের মূল কথা হল আবার অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। রাষ্ট্রের স্বার্থে অর্থনীতির সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করলে সে রাষ্ট্রকে কেন্দ্রীভূত স্বৈরতান্ত্রিক হতেই হবে। সে কারনে বিরূদ্ধবাদী একদলের বক্তব্য হল বাজারের ওপর অর্থনীতির সবকিছু সঁপে দিলে স্বৈরতন্ত্রের পথ এড়ানো যায়। কিন্তু অভিজ্ঞতা আবার দেখিয়েছে বাজারের পথ মানেই সে কেবল মুনাফা বোঝে, যা ডেকে এনেছিল ২০০৮ এর বিশ্বজোড়া পুঁজিবাদী সঙ্কট। আবার রাষ্ট্রের ভূমিকার দাবী সজোরে সামনে এনে দিয়েছে এবং সেই দাবী উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রকে সেই চাহিদা পূরণ করতেই হবে তা সে রাশিয়া বা চীনের মতো চরম স্বৈরতান্ত্রিক হোক বা মধ্যপ্রাচ্যের ইস্লামিক রাষ্ট্র কিম্বা পশ্চিমী পার্লামেন্টারী- সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক যে ধরনের রাষ্ট্রই হোক না কেন। শাসনপদ্ধতি এখানে গুরুত্বপূর্ণ নয় । রাষ্ট্রের কাছে অর্থনীতির চাহিদা বা দাবী হল - অর্থনীতি বিপদগ্রস্ত হলে তাকে উদ্ধার করা - নেতৃত্ব দেওয়া - সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে মসৃণ ভাবে চালু রাখাকে নিশ্চিত করা। এই কাজ থেকে রাষ্ট্র হাত গুটিয়ে নিতে পারবে না।
অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ক্ষেত্র ছাড়িয়ে এলে পড়ে থাকে সামাজিক মানুষ বা জনসাধারণ। অর্থনীতির চাহিদা সামাজিক চাহিদা, কিন্তু মানুষের চাহিদার সাথে তা কিন্তু এক নয় অনেক পৃথক। সামাজিক মানুষ চায় না কেউ তার ওপর শাসন করুক। তার চাহিদা - নিজের ইচ্ছেমত যাতায়াত, পছন্দমত মানুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা, সম্পর্ক প্রেম বিবাহ ইত্যাদি। বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের ভৌগলিক সীমানা পেরিয়ে যাতায়াতের সুযোগ স্বাধীনতা এই চাহিদাকে বিশ্বজনীন করে তুলেছে। রাষ্ট্রের কাছে তার চাহিদা হল এই স্বাধীন কর্মকান্ডের পথে যেন বাধাস্বরূপ কিছু না আসে, কেউ যেন তাকে আক্রমন না করে। আর রাস্তাঘাট যাতায়াত শিক্ষা ইত্যাদি সেবামূলক সবকিছু সরবরাহ করুক রাষ্ট্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বা আর্থিক সমস্যায় সংগঠিতভাবে পাশে দাঁড়াক রাষ্ট্র। তাহলে রাষ্ট্রের কাজ হল অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করা এবং সামাজিক মানুষকে সেবাপ্রদান করা। কিন্তু রাষ্ট্রের অস্তিত্বের শর্ত যে শাসন করা তার কী হবে? এটাই বড় প্রশ্ন।
শাসনের মৌলিক চাহিদার কারনে রাষ্ট্র শক্তিশালী এবং কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার আধার হতে চায়। সে চায় রাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক অঙ্গগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে, আরও তীক্ষ্ণ ধারালো করতে। কিন্তু মানুষের চাহিদা রাষ্ট্রশাসন নয়, সেবা প্রদান – অর্থনীতির চাহিদা রাষ্ট্র সুস্থিত মসৃণ পথে অর্থনৈতিক কার্যকলাপের প্রসারে নেতৃত্ব প্রদান করুক। রাষ্ট্রের কথা হল – আমার কাজ তো শাসন করা, যুদ্ধ করা, মানুষকে সেবা আর অর্থনীতির চাহিদা পূরণ করা আমার মূল কাজ নয়। এদিকে নরওয়ে সুইডেন ডেনমার্ক এর মতো কিছু দেশ জনগনকে সেবাপ্রদান এবং অর্থনীতির চাহিদাপূরণের জন্য নিজেদের দেশকে অনেকটাই সাজিয়ে নিয়েছে, যেখানে রাষ্ট্রের চেহারা অনেকখানি মিউনিসিপ্যালিটির মতো। কিন্তু ভারতের মতো একশ চল্লিশ কোটির দেশে মানুষের সেবার চাহিদাপূরণ প্রায় অসম্ভব। ভারতে কৃষকরা দাবী করেছিল ফসল বিক্রীর জন্য এম এস পি কে আইনে পরিনত করো। এ দাবীর মানে একটা দরের নীচে ফসল বিক্রী করা যাবেনা। তাহলে মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রকে তাহলে কর্মসংস্থান বাড়াতে হয়। রাষ্ট্র এ কাজ করতে পারবে না কেননা অর্থনীতি তাহলে বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। এটা ভারতরাষ্ট্রের স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার একটা জমি। আবার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে একদিকে চীন রাশিয়া আর অন্যদিকে আমেরিকার আধিপত্য নিয়ে টানাপোড়েনে এই অঞ্চলে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। ভারতের ওপর চাপ বেড়ে চলেছে এক শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ক্ষমতাধর রাষ্ট্র নির্মাণের। রাষ্ট্রের জীবনচক্রের মধ্যেই জন্ম নিচ্ছে এক সমরাস্ত্র সজ্জিত দানবীয় শক্তির চাহিদা। হিন্দুরাষ্ট্রের নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠা এই চাহিদাপূরণের উপায়মাত্র। রাজনৈতিক হিন্দুত্ব স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে সামাজিক বৈধতাপ্রদানের হাতিয়ার। মুসলমান-বিদ্বেষ , নাগরিকপঞ্জী, বিদেশী প্রশ্নের চর্চা এই জমি প্রস্তুতির জন্য।
সে কারণে আমাদের প্রাথমিকভাবে দাঁড়াতে হবে যেমন রাজনৈতিক হিন্দুত্বের বিরূদ্ধে। যদি আগামী নির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হয় তাহলেও রাষ্ট্রের স্বৈরশাসনের চাহিদা প্রয়োজনীয়তা আবার অন্য পথে অন্য কোনও শক্তির হাত ধরে মাথা তুলে দাঁড়াবে ভবিষ্যতে। রাষ্ট্রের এই চাহিদার জমিকে বুঝে নিতে হবে । সংবিধানরক্ষা দিয়ে একে প্রতিহত করা যাবে না। দাঁড়াতে হবে সামাজিক মানুষের চাহিদার পক্ষে যা রাষ্ট্রের কেন্দ্রীকৃত স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিপরীত মেরু।