পুরোগামী তৃতীয় সংখ্যা (নববর্ষ ১৪৩১)

লিখেছেন:পুরোগামী সম্পাদক-মন্ডলী

সম্পাদকের প্রতিবেদন

 

ভোট এসে গেছে। ভারতবর্ষ তাই সরগরম। দুর্নীতির জয়জয়কার, বাহুবলের দাপট, নৈতিকতাহীন রাজনীতিবাজদের আস্ফালন যতই থাকুক, আমরা ভোটকে উপেক্ষা করতে পারছি না। নির্বাচন প্রক্রিয়া আমাদের আশা, আবার হতাশাও।

আশা এ কারণে যে যতই ত্রুটিপূর্ণ হোক ধনতন্ত্রে সংসদীয় গণতন্ত্রের চেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থার দেখা অদ্যাবধি মেলেনি। অন্তত মন্দদের মধ্যে কম মন্দদের আমরা বেছে নিতে পারছি এখনো।

আর হতাশার কারণ এই, আভাস পাওয়া যায় যে আমাদের হাত ধরে আসা নির্বাচিত সরকার আমাদেরই হাত বেঁধে দেবে হয়ত একদিন, আমাদেরই মঙ্গলের অজুহাতে। সর্বগ্রাসী ক্ষমতার লোভে জনসাধারণকে ক্ষমতাহীন করবে।

শুধু ৫ বছরে একবার বোতাম টিপে তাই গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা যায়না। এই গণতন্ত্রে প্রার্থী হতে পারে না একজন মানুষ যার পেছনে ক্ষমতার আর অর্থের সমর্থন নেই। সাধারন মানুষ যা পারে তা হল প্রতিবাদ। অন্যায় দেখলে দল নির্বিশেষে রুখে দাঁড়ানো। সে ইতিহাস আমাদের দেশে এবং আমাদের প্রদেশে  কম নেই।

ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময়েও রেজা খাঁ নামক রাজস্ব আদায়কারীর তোলাবাজির বিরুদ্ধে বাংলার সন্ন্যাসী এবং ফকিররা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। সাঁওতাল বিদ্রোহ, ময়মনসিংহের কৃষক বিদ্রোহ, গারো হাজং বিদ্রোহ আজও ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। স্বাধীনতার সময়ের একটু আগে পিছে তেভাগা তেলেঙ্গানার কথা আমরা ভুলে যাব সে সাধ্য নেই। গ্রামবাংলার মানুষ, বার বার প্রমাণ করেছেন যে অত্যাচার সীমা ছাড়ালে তারা ছেড়ে কথা বলেন না। নকশালবাড়ি আন্দোলন ঠিক না বেঠিক এই নিয়ে যতই তর্ক থাকুক না কেন, জোতদারদের অত্যাচার যে তখন সীমা ছাড়িয়েছিল এই নিয়ে কারও অমত নেই। 

খাদ্য আন্দোলনের সময়ে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ আমাদের স্মরণে আছে। সিঙ্গুর নন্দীগ্রামে কৃষকদের জমি অধিগ্রহণের সময়ে সরকারের সবজান্তা ভাব ও নিপীড়ণের প্রাবল্য আমরা ভুলিনি। শাসকদলের দম্ভ এবং অত্যাচার সর্বত্রই সব কালেই সমান। আবার মানুষের রুখে দাঁড়ানোও চিরকালীন।

নানা সময় এইসব গ্রামীণ জনতার আন্দোলনকে অবলম্বন করে নানা রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় উঠে এসেছে এবং যথারীতি সেইসব আন্দোলনের মর্যাদা রাখেনি। প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছে। 

নির্বাচনে মানুষকে অংশগ্রহণ করতে হবে, আবার যাদের ক্ষমতায় পাঠানো হলো, তাদের প্রতি নির্মোহ দৃষ্টি রাখতে হবে। ৫ বছরে একবার নয় অন্তহীন সজাগ দৃষ্টি আর প্রতিবাদই টিকিয়ে রাখতে পারে এই দুর্বল গণতন্ত্রকে।

 

0 Comments
Leave a reply