ভালো থাকার পাসওয়ার্ড

লিখেছেন:পল্লব পত্রকার

 

- সারাদিন ঘরে বসে করটা কি! সামান্য একটা কাজ বলে গেলাম! জামা কাপড় কেচে সবিতা ছাদে দিচ্ছে। বিকেলে তুলে এনো। সেটাও পারলে না?

- বলছি তো ভুলে গেছি।

- সব কাজই তো ভুলে যাও! আমার থাইরয়েডের ওষুধটা ক'দিনের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে। এনে রাখতে বলেছিলাম! এনেছ? 

- কেন যে আজকাল এরকম হয়!

নিজের মনে বিড় বিড় করতে করতে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ান নির্মাল্য। 

দরজার মুখ থেকে এক প্রকার জোর করে তাঁকে সরিয়ে দেন আনন্দী। 'থাক! তোমায় আর যেতে হবেনা! আমিই যাচ্ছি! যত দিন যাচ্ছে বুড়োটে মেরে যাচ্ছ! ...' গজ গজ করতে করতে জামাকাপড় তুলতে ছাদে যান তিনি।

চুপ করে থাকেন নির্মাল্য। অসহায়ভাবে সোফার এক কোণে কুঁকড়ে বসে পড়েন। সারাদিন কি করেন সেই কৈফিয়ত দেওয়াই যায়! এটা ওটা সারানো বা বদলানোর ঝামেলা তো লেগেই থাকে। তার ওপর অনলাইনে জিনিসপত্র এলে বুঝে নেওয়া। টাকা মেটানো। দোকান বাজার। সেসব গুছিয়ে রাখা! কি না করতে হয় তাঁকে!

যাই হোক। কথায় কথা বাড়ে। পরিবেশ আরও উত্তপ্ত হয়। প্রায় আট বছরের ছোট গিন্নির সঙ্গে ঝাঁজ দেখিয়ে কোনও দিন পেরে ওঠেননি। আজও পারবেন না। টিভির নিউজ চ্যানেলে সাম্প্রতিক একটা বিষয়ে তীব্র বাদানুবাদ চলছিল। একটু আগে টিভি খুলে দেখা শুরু করেছিলেন। সেটায় আর মন বসাতে পারছেন না। বরং বিষাদের গভীর খাদে তলিয়ে যাচ্ছেন ক্রমশ।

ইদানিং কিছুই তাঁর ভালো লাগে না! কিচ্ছু না! কেন যে ছাই বেঁচে আছেন, মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন করেন নিজেকে।  তিনি না থাকলেও তো সংসারের কিছু যাবে আসবে না! ছেলেমেয়েদের হয়ত মন খারাপ হবে দু একদিন। বউ অফিস ছুটি করে কয়েক দিন ঘরে থাকবে। তারপর যথারীতি শুরু হবে তার মুক্ত বিহঙ্গের জীবন। সংসার চলবে নিজের মতো। চিরকাল যেমন চলে। কারোর অপেক্ষা না করে, তোয়াক্কা না রেখে!

এক সময় কত স্বপ্ন দেখতেন নির্মাল্য! খুব ছোটবেলায় সাধ হত বড় ফুটবলার হবার। কিন্তু দক্ষতার অভাবে সে সাধ মেটেনি। একটু বড় হয়ে ইচ্ছে করত লেখক হবার। তখন প্রচুর গল্প উপন্যাস কবিতা পড়তেন। কিন্তু অচিরেই বুঝলেন লেখালেখির জগতটা তাঁর জন্য নয়। তিনি নিতান্তই একজন পড়ুয়া মাত্র। যাই হোক।  প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে রাজ্য সরকারের কেরানি হিসেবে কর্মজীবন শুরু। চাকরির অন্তিম পর্বে প্রমোশন পেয়ে ছোট মাপের অফিসার। ইতিমধ্যে আর পাঁচজনের জীবনে যা যা ঘটে – সাতপাকে বাঁধা পড়া, মিষ্টি মধুর তিক্ত কষায় অভিজ্ঞতা-লাভ, উথাল পাথাল জীবন-সমুদ্রে যেন-তেন-প্রকারেন তরী বেয়ে চলা।

সন্তানরা বড় হল। প্রতিষ্ঠা পেল। ছেলে ব্যাঙ্গালোরে চাকরি নিয়ে সেখানেই সংসার পাতলো। স্বামীর হাত ধরে মেয়ে গেল বিদেশে। তার কিছুদিন পরেই বাবা-মা ইহলোক ছাড়লেন। সেটাও প্রায় বছর পাঁচেক হয়ে গেল। নির্মাল্যর অবসর গ্রহণ মাস ছয়েক আগে। কর্তা গিন্নির সচ্ছল জীবন নিরুপদ্রবেই কাটার কথা। তবু তাঁর জীবনে হতাশার ধূসর ছায়া। দিনে দিনে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। কে জানে কেন! আর সমাধানই বা কোন পথে! এখন তো তাঁর হাতে অখন্ড অবসর। পাড়ার লাইব্রেরি থেকে বই এনে সারাদিন প্রচুর পড়াশোনা করতে পারেন! চাকরি ছাড়ার সময় সেটাই করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, পড়াশোনা করতে আর ভালো লাগে না! ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসা দৃষ্টিশক্তির কারণে হয়ত! অথবা পড়াশোনার ইচ্ছেটাই মরে গেছে বহুদিন।

একসময় ছেলে-মেয়ে বউকে নিয়ে কাছে-দূরে কত বেড়িয়েছেন! এখন আর বেড়াতেও ইচ্ছে করে না। বাইরে যাবার শারীরিক ধকল সহ্য হয় না। বউ তার বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সময় সুযোগ মতো পাহাড় বা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। কাছাকাছি সমুদ্রের ধারে হলে নির্মাল্য তাঁকে সঙ্গ দেন।

বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানে আনন্দী চাকরি করছেন খুবই কড়াকড়ি সেখানে। সকাল দশটার মধ্যে অফিসে ঢুকতে হয়। বেরতে পারেন সন্ধ্যে ছটার পর। সাড়ে সাতটা আটটা নাগাদ বিধ্বস্ত হয়ে যখন বাড়ি ফেরেন মুড তাঁর পুরোপুরি অফ থাকে। আজও ছিল। তাতে ঘৃতাহুতি পড়েছে ছাদ থেকে কাপড় না তুলে আনার ব্যাপারটায়। 

নির্মাল্য তাঁর দোষ দেন না। বরং দোষী করেন নিজেকে, নিজের অদৃষ্টকে। তাঁর অবসাদগ্রস্ত এই বয়সটাকে।

জামা কাপড়ের বোঝা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে আনন্দীকে নামতে দেখে উঠে দাঁড়ান নির্মাল্য। রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যান। দু কাপ চায়ের জল বসান। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আনন্দী চা খান। তার সঙ্গে সামান্য জলযোগ। তারপর কম্পিউটার বা সেলফোন নিয়ে খানিকক্ষণ ঘাঁটাঘাঁটি। দশটার আগেই তাঁরা রাতের আহার সারেন। 

সেসব মিটিয়ে বিছানায় যাবার আগে পর্যন্ত আনন্দী প্রায় কোনও কথাই বললেন না। ঘুমোবার আগে শুধু বললেন, 'সরে শোও।'

এরকম মুহূর্তে বউয়ের অনেক কথাই ইঙ্গিতপূর্ণ। 'সরে শোও' মানে 'কাছে এসো'ও হতে পারে। বুকে সাহস সঞ্চয় করে নির্মাল্য তাই স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে গেলেন। কোনও কাজ তিনি পারেন না – বউয়ের দেওয়া এই অপবাদ এক্ষুনি ভুল প্রমাণিত করবেন। খুশির হিল্লোল বইয়ে দেবেন তাঁর দেহে, মনে! আনন্দী কিন্তু ঝটিতে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন তাঁকে। 'আদিখ্যেতা কোরোনা। ঘুমাতে দাও!' বলে মুখ ঘুরিয়ে নিতম্ব দুলিয়ে পিছন ফিরে শুলেন।

রাতে যথারীতি অনিদ্রায় ভুগলেন নির্মাল্য। প্রায় গোটা রাত এপাশ-ওপাশ। ভোরের দিকে সামান্য ঘুম। তাও পাঁচটার মধ্যে ঘুম ভেঙে গেল।   

প্রাতঃকৃত্য সেরে মর্নিং ওয়াকে বের হলেন। আগে এসব করতেন না। রোগ বালাই তেমন কিছু নেই তাঁর। তবে সম্প্রতি রক্তে সুগার বেড়েছে। ওষুধ চালু না হলেও ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন হাঁটাহাঁটি করার। পাড়ার সমরেশ, আদিত্যদের সঙ্গে নির্মাল্য তাই রোজ সকালে হাঁটতে বের হন। টুকটাক গল্প গুজব হাসি ঠাট্টা চলে। মন্দ লাগে না এই সময়টুকু। বন্ধু-বান্ধব বলতে তো এখন এঁরাই। অফিস ছাড়ার পরও অনেকে নিয়মিত অফিস যান। পুরানো কোলিগদের সঙ্গে দেখা করেন, কথাবার্তা বলেন। নির্মাল্যর সেটা একদম ভালো লাগে না। প্রাক্তন সহকর্মীকে কেউ ততটা পাত্তা দেয় না। নিজেকে কেমন ফেকলু ফেকলু মনে হয়। তাঁদের সঙ্গে ফোনাফুনির সম্পর্কও ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসছে। 

সাতটার আগেই নির্মাল্য বাড়ি ফিরে এলেন। সবিতা ঠিক সাতটায় চলে আসে। তাকে দরজা খুলে দেওয়া, কাচাকাচি হবে কিনা জানানো। হকার দুধ দিতে এলে নেওয়া।…

সাড়ে সাতটা নাগাদ আনন্দীর ঘুম ভাঙে। তার আগেই সবিতার বাসন মাজা, ঘর মোছার কাজ হয়ে যায়। কাচাকাচি থাকলে সেটাও সে শুরু করে। ততক্ষণে নির্মাল্য তিন কাপ চা রেডি করে ফেলেন। দু কাপ ট্রেতে নিয়ে খাবার টেবিলে আনেন। আর একটা সবিতার জন্য নির্দিষ্ট করা জায়গায় রেখে দেন। কাজ শেষ করে সে খেয়ে নেয়। 

চা খেতে খেতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সাংসারিক বিষয়ে কিছু কথোপকথন। নির্মাল্যই মূলত বক্তা। সেলফোন ঘাঁটতে ঘাঁটতে আনন্দীর 'হুঁ' 'হ্যাঁ' গোছের সঙ্গত। রান্নার মেয়ে কাজল চলে আসে পৌনে আটটা নাগাদ। মাছ, বাজার ইত্যাদি আগের দিন কেনা থাকে। কি কি রান্না হবে আনন্দী বুঝিয়ে দেন কাজলকে। তারপর তিনি সংসারের টুকটাক অন্যান্য কাজে হাত লাগান। মসলাপাতি বা খাবার-দাবার ঢালাঢালি করার থাকলে করেন। জামাকাপড় গোছানো। ছোট্ট ব্যালকনিতে তাঁর শখের বাগান দেখাশোনা। গাছে জল দেওয়া।…

খবরের কাগজ এলে প্রথমে নির্মাল্য, তারপর আনন্দী হেডলাইনগুলোয় চোখ বুলিয়ে নেন।

আজও কাগজে চোখ বোলাচ্ছিলেন নির্মাল্য। হঠাৎ চোখ আটকে গেল এডিটোরিয়াল পেজের একটা কলমে। হেডলাইনে লেখা, 'অবসরকালে ভালো থাকার পাসওয়ার্ড'। এই পাতাটা সাধারণত দুপুরের দিকে পড়েন নির্মাল্য। কি মনে করে কলমটা আজ পড়তে শুরু করলেন। লেখক বিশিষ্ট একজন মনস্তত্ত্ববিদ। জানাচ্ছেন, একমাত্র কর্মব্যস্ততাই মানুষকে সুখী করতে পারে। অনিদ্রা, অবসাদ-মুক্ত এক সুন্দর জীবন দান করতে পারে। যাঁরা চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন অবশ্যই তাঁদের কাজ ছাড়া উচিত নয়। নতুন করে জীবিকা-নির্বাহ যদি দরকার না হয় তাহলে স্বেচ্ছাশ্রম দেওয়া উচিত। সেবামূলক কোনও সংগঠনে যুক্ত হওয়া যায়। পাড়ার বাচ্চাদের পঠন-পাঠনে সাহায্য করা যায়। জমি জায়গা থাকলে ফুল-ফলের বাগান করা যেতে পারে। আর যাঁরা সৃজনমূলক কাজ নিয়ে থাকতে চান, তাঁদের তো নিজস্ব জগত আছেই!... 

আজ মর্নিং ওয়াকের সময় এই বিষয়টা নিয়েই বলছিলেন সমরেশ। ব্যাংকের তিনি অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। উত্তরাধিকার সূত্রে এবং চাকরি করে প্রচুর টাকা জমিয়েছেন। তবে ধীর-স্থির, নাদুস-নুদুস, মধ্য উচ্চতা, মধ্য ভাব-ভাবনার আদিত্য বা নির্মাল্যর মতো ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ্ দিয়ে বসে খাবার পাত্র নন। লম্বা ফর্সা ছিপছিপে শরীরের সমরেশ সবসময় ব্যস্ত। সামাজিক নানা কাজে যুক্ত। সারাক্ষণ বকবক করেন। নির্মাল্য সব সময় যে তাঁর কথায় কান দেন, তা নয়।  কিন্তু আজ যে অমূলক কিছু বলেননি, তার প্রমাণ এই লেখাটা। সত্যিই তো তাঁর যত সমস্যার মূলে বোধহয় এই কর্মহীনতা। সংসারে কতটুকুই বা কাজ! এই তো একটু পরে ব্রেকফাস্ট সেরে বাজার যাবেন! দরকারি জিনিসের তালিকা আগে মনে রাখতেন। এখন লিখে রাখেন। সেসব ঠিকঠাক কিনে এনে নিজের মতো সময় কাটানো। খবরের কাগজটা আর একবার নেড়েচেড়ে দেখা। স্নান, খাওয়া, দিবানিদ্রা ইত্যাদি। মিস্ত্রি-টিস্ত্রির ব্যাপার তো আর রোজ থাকে না!

সমরেশের মতোই নির্মাল্যর নতুন করে আয় করার প্রয়োজন বা লোভ একদম নেই। অবসরকালীন যে টাকা পেয়েছেন তার ইন্টারেস্ট এবং পেনশনের টাকায় ভালোই চলে যাচ্ছে। এর ওপর আনন্দীর আয় তো আছেই। সংসারে তেমন কিছু কন্ট্রিবিউট না করলেও নিজেরটুকু সে ভালোভাবে চালিয়ে নেয়। পোশাক আশাক, গয়না-গাঁটি, প্রসাধন, বেড়াতে-টেড়াতে গেলে হাত খুলে খরচ করা…

সৃজনমূলক যেসব কাজের কথা নিবন্ধকার বলেছেন, গান আবৃত্তি বা নাটক এসবের সঙ্গে নির্মাল্য কোনও দিন যুক্ত ছিলেন না। এই বয়সে সেসব নতুন করে শুরু করা সম্ভব নয়। ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হয়ে বাগান করা বা ছাত্র-ছাত্রী পড়ানোর বিষয়টা ভাবাই যায় না। তিনি যেটা পারেন তা হল কোনও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছাশ্রম দান। সেটা করলে মন্দ হয় না। 

কি মনে করে সেলফোনটা তুলে নিয়ে সমরেশকে ফোন করলেন নির্মাল্য। 

প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোন ধরলেন। 'কি ব্যাপার! তাড়াতাড়ি বল। অনেক কাজ পড়ে আছে। সারতে হবে!' 

 ‘তুই আজ সকালে তোদের শ্রমিকসদনের কথা বলছিলি! তখন মন দিয়ে শুনিনি। আর একবার বল তো!’     

নির্মাল্যর কথা শুনে সমরেশের কণ্ঠস্বর বদলে গেল। ব্যস্ততা নিমেষে ভ্যানিশ! ধীর-স্থির ভাবে বলা শুরু করলেন। 'একটু অন্যরকম ভাবনা। বলতেই পারিস, বিকল্প ভাবনা। আমরা অবশ্য বলি এটাই মূলধারার ভাবনা। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিবেকবান মানুষদের উদ্যোগ। পিছিয়ে থাকা অংশের জন্য প্রিভিলেজড্‌ ক্লাসের সহযোগিতা ও সহানুভূতি। যাদের হাতে অতিরিক্ত সময় বা অর্থ আছে সেটার কিছুটা দান। এই দান করলে সে নিজেও কম কিছু পাবে না। বেঁচে থাকার একটা মানে খুঁজে পাবে। প্রতি মুহূর্ত হয়ে উঠবে তার আনন্দময়…' 

‘এত ভারী ভারী কথা মাথায় ঢুকবে না। তুই সহজ করে বল।’ 

একটু চুপ করে যান সমরেশ। তারপর বলেন, 'বাজারে আসছিস তো! ওখানেই কথা হবে।'

‘ঠিক আছে’, বলে ফোনটা কেটে দেন নির্মাল্য। তারপর ব্যস্ত হয়ে ব্যাগপত্র, পার্স নিয়ে বাজার যাবার উদ্যোগ নেন। 

ততক্ষণে কাজল রান্না সেরে বাড়ি চলে গেছে। আনন্দীর স্নানপর্ব মিটেছে। বাথরুম থেকে বের হয়ে তিনি বলেন, 'ফলগুলো কেটেছ?' 

‘হ্যাঁ, এই যে কাটছি।’ বলতে বলতে নিজের দায়িত্বে তৎপর হন নির্মাল্য। আসলে সমরেশের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বিষয়টা ভুলে গিয়েছিলেন। এই কাজটা আগে আনন্দীই করতেন। নির্মাল্য স্বেচ্ছায় এটার দায়িত্ব নিয়েছেন।

‘আমার সঙ্গে তো ব্রেকফাস্ট করে নিতে পারতে!’ আনন্দী বলেন। 

'এখনও খিদে পায়নি। তাছাড়া দেরি করে বাজার গেলে মনের মতো মাছ পাব না।' নির্মাল্য জানান।

অগত্যা একাই খেতে বসলেন আনন্দী। ফল কেটে টেবিলে ঢাকা দিয়ে নির্মাল্য পা বাড়ালেন বাজারের দিকে। 'আসছি আমি। ঠিকঠাক সবকিছু গুছিয়ে নিও। সাবধানে যেও…'  বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন।

 

বাজার থেকে ফিরে খুব চটপট স্নান খাওয়া সারলেন নির্মাল্য। সমরেশের সঙ্গে তাঁর অনেক কথাই হয়েছে। শ্রমিকসদনে কি কি কাজ হয়, বিস্তারিত বলেছেন সমরেশ। সেসবের সঙ্গে যুক্ত হবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন নির্মাল্য। তখন সমরেশ বলেছেন, 'তোর উচিত আমাদের ওখানে একদিন ঘুরতে যাওয়া, নিজের চোখে সবকিছু দেখা।' 

আজই যাবার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন নির্মাল্য। সমরেশ রাজি হয়েছেন। 

দুজনে এগারোটায় বের হবেন।  

তাঁদের উদয়পুর মোড় থেকে জায়গাটা এমন কিছু দূরে নয়। বাসে মিনিট পনের লাগল। বাস স্টপের নামও শ্রমিকসদন। নেমেই চোখে পড়ল বিশাল পাঁচতলা একটা বাড়ি। গায়ে বড় বড় করে লেখা 'শ্রমিকসদন'। গেটের মুখে সিকিউরিটি। সমরেশকে সে চেনে। তাই মুখের দিকে একবার তাকিয়ে পথ ছেড়ে দিল। নির্মাল্যকে সঙ্গে নিয়ে সমরেশ ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন চারপাশ। তিনি অ্যাকাউন্টস্‌ সেলে স্বেচ্ছাশ্রম দেন। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য কয়েকজন সাধারণ কর্মীর যে সম্মানদক্ষিণা সেইটা বন্টনের ব্যবস্থা করেন। মাসের প্রথমে সেটা হয়ে গেছে। এখন কাজ কম। তাই বন্ধুর সঙ্গে বেড়াবার অবকাশ।

ঘুরতে ঘুরতে শ্রমিক সদনের ইতিহাস শোনাচ্ছিলেন সমরেশ। ‘বেশ কিছুদিন আগে পুরো এলাকাটা একটা জুটমিল ছিল। তারপর সেটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও মালিক রাজি হয় না কারখানা খুলতে। বরং শ্রমিকদের সমস্ত পাওনা-গন্ডা মেরে দেয়। শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মণিভূষণ গাঙ্গুলী তখন শ্রমিকদের জানান, - মালিক টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেছে যাক! কারখানার জিনিসপত্র প্রাণ থাকতে আমরা নিয়ে যেতে দেব না। আর জমিটা যাতে বিক্রি করা না যায় সে ব্যাপারে অতন্দ্র প্রহরায় থাকব! শ্রমিকরা তাঁকে সমর্থন করে। তাঁরই উদ্যোগে কলকাতা মেডিকেল কলেজের কিছু আদর্শবান ডাক্তারের সহযোগিতায় ইউনিয়ন ঘরে শুরু হয় আউটডোর চিকিৎসা। বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে ধীরে ধীরে এখন তা হসপিটালের রূপ নিয়েছে। অতি স্বল্প খরচে মানুষ এখানে চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রায় একশোর মতো বেড। এছাড়া আই সি ইউ। বিভিন্ন অপারেশনের অতি আধুনিক ব্যবস্থা।

‘শুধু তাই নয়, শ্রমিক কল্যাণে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। একটা সম্পূর্ণ আলাদা বিভাগ করা হয়েছে, নাম দেওয়া হয়েছে 'শিল্পকুঞ্জ'। সেখানে থাকছে গ্রামীণ কারিগর ও শ্রমিকদের উৎপাদিত দ্রব্যাদি সরাসরি বিক্রির সুযোগ। এছাড়া আছে লাইব্রেরি, সেমিনার হল। আর আছে 'পাঠশালা', সহকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের ট্রেনিং-এর সুযোগ।…' 

আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর এই যুগে এরকম ব্যবস্থা যে থাকতে পারে নির্মাল্য ভাবতেই পারছিলেন না। মানুষের লক্ষ্য এখন শুধু রোজগার। 'খাও পিও মৌজ করো'। বেসরকারি শিক্ষা-স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির প্রায় সবই মুনাফা-সর্বস্ব। তাদের ধ্যান-জ্ঞান হলো যেন তেন প্রকারেণ অর্থ উপার্জন। উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে সরকারি সংস্থাগুলিও ধুঁকছে। অথচ পুরোপুরি বিপরীত পথে হাঁটছে শ্রমিকসদন। সত্যিই অবাক হতে হয় ব্যাপারটায়!

সমরেশ তখনও বলে চলেছেন। ‘দেখ, এরকম উদ্যোগ যে আর কোথাও নেই তা নয়। বহু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মানুষের সেবায় অজস্র কাজ করছে। কিন্তু তার বাইরে, জাতপাত ধর্মের ঊর্ধ্বে গিয়েও তো কাজ করা যায়! সেই পথটাই বা কেন উৎসাহ পাবে না! আমার মনে হয় শ্রমিকসদনের অজস্র শাখা দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া দরকার…’ 

সবশেষে সমরেশ ঢুকলেন মণিভূষণ বাবুর চেম্বারে। স্মিত হেসে মণিবাবু স্বাগত জানালেন। নির্মাল্যর প্রতি দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন। তারপর সামনের চেয়ারে বসতে বললেন। কি সুন্দর দেখতে ভদ্রলোককে! বয়স সত্তর-পঁচাত্তর হবেই। বলিষ্ঠ, ঝকঝকে শরীর। সৌম্যমূর্তি। চুল দাড়ি সমস্ত সাদা। দীর্ঘকায়। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। হাসতে হাসতে বললেন, 'আপনি নিশ্চয়ই সমরেশের কাছে আমাদের শ্রমিকসদনের ইতিহাস শুনেছেন। বলুন কেমন লাগল?' 

নির্মাল্য তো আপ্লুত। এত বড় একটা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার এত আন্তরিকভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি ভাবতেই পারছেন না। হাসতে হাসতে বললেন, 'খুব ভালো লেগেছে। আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।' 

‘এত ব্যস্ততার কিছু নেই। আরও কয়েকদিন আসুন। দেখুন আমাদের অ্যাক্টিভিটি। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন।’  

একটু দমে গিয়ে নির্মাল্য বললেন, 'ঠিক আছে পরে তাহলে কথা হবে।' 

‘চা খান’, বলতে বলতে একজনের নাম ধরে ডাকলেন। ইঙ্গিতে চায়ের কথা বললেন তাকে। একটু পরে তিন কাপ চা এলো। সঙ্গে বিস্কুট। চা পান শেষ হলে সমরেশ আর নির্মাল্য 'আসছি' বলে উঠে পড়লেন। 

‘আচ্ছা। আবার আসবেন’, বলে মণিবাবু হেসে তাঁদের বিদায় জানালেন।

ফেরার পথে নির্মাল্য প্রায় কোনও কথাই বলছিলেন না। সমরেশ যথারীতি বকবক করে চলেছিলেন। 'তুই কি জানিস এই হসপিটালের সমস্ত যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র মানুষের দানে গড়ে উঠেছে! তবে হ্যাঁ, সর্বত্রই দাতাদের নাম স্বীকার করা হয়। কোনও সরকারি সাহায্য বা বহুজাতিক পুঁজি এখানে নাক গলাতে পারে না। নিজস্ব আইনে সবকিছু চলে। কোনও ব্যাংক থেকে লোন নেবার চেষ্টাও করা হয় না! লোন নিলেই তার সুদ গুনতে হবে! শ্রমিকদের পকেট থেকেই তো সেটা কাটা যাবে! আমাদের আদর্শের সঙ্গে এটা মেলে না। আর একটা ব্যাপার। কর্মীদের স্থায়ী কোনও অ্যাটেনডান্স রেজিস্টার নেই। তারা নিজেদের মধ্যে অ্যাডজাস্ট করে চলে। কেউ কোনও ছুটি নিলে অন্য সহকর্মীরা তার কাজটা দায়িত্ব নিয়ে করেন। এখানে বাঁধা বেতনেরও কোনও ব্যবস্থা নেই। যখন যেমন আয় হয়, কর্মীদের সম্মান-দক্ষিণা হিসেবে সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। সবাইকে নয়, যাদের অন্য কোনও আয় নেই…'

 

বাড়ি ফিরে নির্মাল্যর বারবার মনে হচ্ছিল আজ রাতেই তিনি আনন্দীকে সবকিছু জানাবেন। এত সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা! বউয়ের সঙ্গে শেয়ার না করে থাকবেন কি করে! আবার পরক্ষণেই মনে হল, এক্ষুনি কিছু বলার দরকার নেই। আগে ওদের সঙ্গে যুক্ত হোন। তারপর দেখা যাবে। 

পরের দিন সমরেশের সঙ্গে আবার গেলেন শ্রমিকসদনে। আজ আর ঘোরাঘুরি নয়। মণিবাবুর চেম্বারে ঢুকলেন সরাসরি। কিন্তু সেখানে তিনি ছিলেন না। গতকাল চা দিয়েছিল যে ছেলেটা সে জানাল, 'মণিদা সেমিনার হলে আছেন। ডাক্তার আর হেলথ ওয়ার্কারদের একটা মিটিং চলছে।' 

অগত্যা শিল্পকুঞ্জে ঘোরাঘুরি, লাইব্রেরিতে যাওয়া। সেখানে খবরের কাগজে চোখ বোলাতে বোলাতে নির্মাল্য বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলেন, 'লাইব্রেরির দায়িত্বে কে আছেন?' সমরেশ বললেন, 'যে ভদ্রলোক থাকেন তিনি বেশ কিছুদিন অসুস্থ। অনেকটা বয়স হয়েছে। আর বোধহয় থাকতে পারবেন না। নতুন লোক খোঁজা হচ্ছে। তুই তো এখানকার দায়িত্ব নিতে পারিস!' 

চোখ দুটো নেচে উঠল নির্মাল্যর। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন, আজই মনিভূষণের সঙ্গে কথা বলবেন। এখানে যাতে কাজ করা যায়, সেই অনুমতি নেবেন।

একটু পরে দুই বন্ধু আবার গেলেন মণিবাবুর চেম্বারে। ততক্ষণে তিনি ফিরে এসেছেন। নির্মাল্য জানালেন তাঁর আর্জি। 'আমি সপ্তাহে পাঁচদিন সোম থেকে শুক্র এখানে কাজ করতে চাই। সমরেশের সঙ্গেই সময় মতো চলে আসব। বিকেল পর্যন্ত থাকব।'  

মণিবাবু বললেন, ‘ঠিক আছে। এ তো খুব ভালো কথা! আপনাকে আমরা কিন্তু কোনও পারিশ্রমিক দিতে পারব না।’ 

নির্মাল্য সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘না না, সেসব দরকার নেই। সমরেশের মতোই আমি ফ্রি সার্ভিস দেব। আজ থেকেই কি আমি কাজ শুরু করতে পারি?’  

‘আমাদের কোনও আপত্তি নেই। তবে কদিন আলমারি না খোলায় বেশ ধুলো জমেছে। কাউকে একটু ডেকে পরিষ্কার করিয়ে নিন। আর সমরেশের কাছে বুঝে নিন সবকিছু।’ বলতে বলতে ড্রয়ার থেকে এক গোছা চাবি বের করে নির্মাল্যর হাতে দিলেন। ‘দেখে নিন কোন আলমারিতে কোন চাবিটা লাগে।’  

খুশি মনে দুই বন্ধু আবার গেলেন লাইব্রেরিতে। সমরেশ একজনকে ডেকে আনলেন। সে সব ঝেড়েঝুড়ে সাফ করতে লাগল। আর একে একে আলমারির দরজা খুলতে লাগলেন নির্মাল্য। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বইপত্রই বেশি। তবে সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্র, ধর্ম, সংস্কৃতি, এমনকি গল্প উপন্যাস কবিতার বইও কিছু আছে। খুব ভালো লাগল নির্মাল্যর। প্রথম দিনেই বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত থাকলেন লাইব্রেরিতে। 

যাবার সময় সব ঠিকঠাক বন্ধ করে চাবির গোছা দিয়ে গেলেন মণিবাবুর হাতে। ভদ্রলোক খুব খুশি হয়েছেন। নির্মাল্যর হাত দুটো ধরে বললেন, 'আপনার মতো মানুষদের জন্যই আমাদের এই শ্রমিকসদন বেঁচে আছে। আগামী দিনেও থাকবে।' নির্মাল্য কি উত্তর দেবেন ভেবে না পেয়ে বারবার ঘাড় নেড়ে 'হেঁ হেঁ' করে  হাসতে লাগলেন।

সপ্তাহ তিনেক এভাবেই কাটল। 

এখনও নির্মাল্য সমস্ত কথা বাড়িতে গোপন রেখেছেন।  শ্রমিক সদনের কাজে তিনি যে যোগ দিয়েছেন ঘূণাক্ষরেও সেটা বুঝতে দেননি স্ত্রীকে। মিস্ত্রি-টিস্ত্রি লাগাবার থাকলে শনি রবিবার ডেকে নেন। আর দোকান বাজার আগের মতোই সকালে করে ফেলেন। আনন্দী অফিস যাবার পর নিয়ম করে স্নান খাওয়া সেরে নেন। এগারোটার মধ্যে বাসস্টপে এসে বাসে চড়ে দুই বন্ধু শ্রমিকসদনে যান। ওখানেই লাঞ্চের ব্যবস্থা হয়েছে। নির্মাল্য সেজন্য কিছু টাকা দেবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মণিবাবু রাজি হননি।

খাবার ঘরে প্রথম দিন গিয়েই তো নির্মাল্য অবাক! এম.বি.বি.এস, এম.ডি, এফ.আর.সি.এস ডাক্তাররাও ঝাড়ুদারদের সঙ্গে এক টেবিলে খাচ্ছেন। খুবই সাধারণ খাবার! ডাল ভাত সবজি। তার সঙ্গে এক পিস মাছ অথবা একটা ডিম। কালেভদ্রে দু পিস চিকেন। এভাবে যে কিছু হতে পারে চোখে দেখেও অবিশ্বাস্য মনে হয় নির্মাল্যর। ছাত্রাবস্থায়, তাঁর একটা সাবজেক্ট ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। তখন সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ ইত্যাদি নিয়ে কিছু কিছু পড়াশোনা করেছিলেন। এখানে যেন সেই মিনি সাম্যবাদী ব্যবস্থা! এই দেশের বুকেই আর একটা অন্যরকম দেশ! সবাই সবাইকে সম্মান করে। সহজ সরল জীবন-নির্বাহে বিরক্ত হয় না।

যাই হোক। লাইব্রেরির দায়িত্ব পেয়ে নির্মাল্য যে কী খুশি হয়েছেন! পোশাক আশাক সম্পর্কে আগে যতটা অসচেতন ছিলেন, এখন আর তা নেই। সব সময় ফিটফাট, চনমনে।  নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কাজ করায় যে কত আনন্দ, এতদিন জানতে পারেননি। এখন পারছেন। পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা আসে। তাদের প্রয়োজনীয় বই-পত্র খুঁজে দিতে হয়। তারাও খোঁজাখুঁজির কাজে মাঝে মাঝে হাত লাগায়। নির্মাল্যবাবু গ্রাহকের নাম, বইয়ের নাম খাতায় এন্ট্রি করে নেন। সময় মতো বই ফেরত না দিলে ফাইন করার ব্যবস্থা আছে। সেটাও ছেলেমেয়েদের থেকে আদায় করতে হয়। কদিন এসেই নির্মাল্য বুঝতে পেরেছেন, শ্রমিকসদনের নিয়ম-কানুন কর্মী বা সাধারণ মানুষের কাছে শৃংখল নয়, শৃঙ্খলা মাত্র। এবং সেই শৃঙ্খলাভঙ্গ কিছুতেই ঘটতে দেওয়া যাবে না।

 

সেদিন রাতে শুতে যাবার আগে আনন্দী বললেন, ‘তোমায় ইদানিং খুব ঝকঝকে লাগছে। চোখে মুখেও জেল্লা দেখছি। নতুন নতুন জামা প্যান্ট জুতো কিনছ! কি ব্যাপার বল তো! কোথাও প্রেম-ট্রেম করছ নাকি!’ 

নির্মাল্য গম্ভীরভাবে বললেন, 'বলব কেন? তুমি কি আমায় সব কথা বলো?' 

আনন্দী অভিমান করে বললেন, 'ঠিক আছে। বলো না। তুমি ভালো থাকলে তোমারই ভালো। আমার কি!' তারপর শুয়ে পড়লেন দুজনে। 

আজকাল আর ঘুমের জন্য সাধ্যি-সাধনা করতে হয় না নির্মাল্যকে। সেদিনও করতে হয়নি। শোওয়া মাত্রই তন্দ্রা মতো এসে গিয়েছিল। বুকের উপর স্ত্রীর স্পর্শ পেয়ে সেটা ভেঙে গেল। বুঝতে পারলেন আনন্দী এখনও ঘুমাননি।  বললেন, 'কি ব্যাপার! তোমার ঘুম আসছে না?' 

- না, আসছে না! তুমি আজেবাজে কার সঙ্গে প্রেম করে বেড়াবে! আর আমি মেনে নেব ভেবেছ! 

- তার মানে! ভালো লোকের সঙ্গে প্রেম করলে মেনে নেবে তো! 

- না তাও মানবো না! 

- মেন না! 

- তাই বুঝি! 

- হ্যাঁ তাই! 

আনন্দী তখনও নির্মাল্যর বুকে হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাল্য বউয়ের হাতটা আস্তে আস্তে সরিয়ে দিলেন। তারপর পিছন ফিরে শুয়ে বললেন, 'প্লিজ ঘুমাতে দাও।'

 

2 Comments
  • avatar
    সুকুমার রুজ

    24 April, 2024

    সত্যিই গল্পটা খুব ভালো লাগলো। তবে একটা অন্য কথা বলি। অবসর নেওয়ার পর এরকম একটা সংস্থার খপ্পরে আমি পড়েছিলাম। সেটা শান্তিনিকেতন থেকে একটু দূরে একটা গ্রামে। খুব ভালোবেসে কাজ শুরু করেছিলাম। কিছুদিন যেতেই বুঝতে পারলাম, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার কালো টাকা সাদা করার সংস্থা। কোনো কাজ করতে হয় না। খাওয়া দাওয়া দেয়। মাইনের কোনো নামগন্ধ নেই। দুনম্বরী ধান্দার ডিপো। পালিয়ে এলাম।তবে এ গল্পের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। ওটা আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বললাম। এ গল্পের শেষ টা আমার অভিজ্ঞতা মাফিক ও হতে পারতো। এই আর কী!

  • avatar
    পল্লব পত্রকার

    25 April, 2024

    থ্যাংক ইউ দাদা অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য

Leave a reply