আমাদের আবার গোড়া থেকে বলতে হবে…

লিখেছেন:পুরোগামী সম্পাদক-মন্ডলী

সেকুলারিজম শব্দটি উচ্চারণ করা ইদানীং এদেশে একটা গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।  যারা সেকুলার তারা নাকি অন্য দেশের, বিশেষ করে, বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় শাসিত দেশের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের দেশের অখণ্ডতাকে বিপন্ন করছে। কিছু সংখ্যাগুরু কন্ঠদল মাঝে মাঝে বলে উঠছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যারা বেশি মুখ খুলছেন, তারা নাকি, দেশদ্রোহী, আর্বান নকশাল ইত্যাদি। মানবতাবাদী, উদারপন্থী - এইসব শব্দ এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ঘৃণা এবং হঠকারিতার প্রতিশব্দ হিসাবে। 

সংখ্যালঘু, সে ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, আদি জনজাতি, লিঙ্গ, যাই হোক না কেন, তাদের হয়ে কথা বলাটা যেন অবৈধ। কথা যেন বলতে হবে কেবল সংখ্যাগুরুর পক্ষে, কারণ, শাসককে যেন আমরা বেছে নিয়েছি শুধু সংখ্যাগুরু হিসেবেই। 

তাহলে সংখ্যালঘু কী করবে? তারা কি সংখ্যালঘু হয়ে জন্ম নিয়ে কোনও অপরাধ করেছে?

এই একই অভিযোগ উঠছে প্রতিবেশি দেশের টালমাটালের সময়। ওই দেশের সংখ্যাগুরুদের সম্পর্কে সে-দেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠছে। সে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি সংবিধান থেকে বাদ পড়তে চলেছে। আবার আমাদের দেশেই বত্রিশ বছর আগে সংখ্যাগুরুরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে এক সংখ্যালঘু ধর্মস্থান এবং তাদের নানা সৌধর আশপাশ খুঁড়ে আজও খুঁজে চলেছে সংখ্যাগুরুর পুরাকীর্তিচিহ্ন। 

গণতন্ত্রে সেকুলারিজমের সবচেয়ে উন্নত ভাবনা হল সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা ও উন্নয়ন, এই ভাবনাকে বিপরীত মুখে চালিত করে সংখ্যালঘুর মনে ত্রাস সঞ্চার করে রাখাই এখন হয়ে দাঁড়াচ্ছে পবিত্র সংবিধানের ধারকবাহকদের একমাত্র কাজ।

আমাদের তাই বলে যেতে হবে, সেকুলারিজমের নিহিতার্থটি। বলতে হবে আদ্রেঁ জিদের ভাষায়, "বলেছি তো সবই; কিন্তু কেউ শোনেনি। তাই আমাদের আবার গোড়া থেকে বলতে হবে।"

 

1 Comments
  • avatar
    স্বপন পাড়িয়া

    31 January, 2025

    সংখ্যালঘু / সংখ্যাগুরু যেভাবে বলা হয় সেখানে মানুষের ধর্ম জাতি আদিবাসী অভিবাসী এই পরিচয়টুকু ধৃত হয়। আজকের বিশ্বায়িত পৃথিবীতে মানুষের এই খন্ডিত পরিচয় অপরিসর সংকীর্ণ। সেক্যুলারিজম এ টুকুই বলতে পারে। আমাদের বলতে হবে গনতন্ত্রের সামাজিক/ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিতে প্রসারের কথা। সেক্যুলারিজম ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয় ধর্ম থেকে মুক্ত করে না।আজকের কুম্ভ আতিশয্যের দিকে তাকালে মানুষের অসহায়তা এবং মুক্তির আকাঙ্ক্ষা একসাথে দেখা যায়। অন্যদিকে ইতিহাসের আজকের পর্বে মানবপ্রেক্ষিত অনেক ব্যাপক। তাকে ধারন করতে হবে। আমরা প্রস্তুত কি প্রস্তুত নই ইতিহাসের কর্তব্য সম্ভবত তা দিয়ে ঠিক হয় না। বলে যেতে হবে ঠিকই কিন্তু কেউ কেন শোনে না তা বিচারে রাখব না কেন!

Leave a reply