যন্ত্রমেধা ও শ্রেণিসংগ্রাম

লিখেছেন:সৌমিত্র বসু

যন্ত্রমেধা (Artificial Intelligence)  নিয়ে কথা শুরু করা যাক।  

যন্ত্রমেধা নিয়ে আজকাল দুটো শিবির হয়ে পড়েছে। এক দল পক্ষে, এক দল বিপক্ষে। এখানেই ঘাপলার শুরু। কোনো শাসনব্যবস্থাই শুধু মাত্র সামরিক শাসন বা সামরিক বাহিনীর ওপরে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না। পৃথিবীতে বোধহয় একমাত্র মায়ানমার ছাড়া তা সম্ভব হয়নি। এমন কি আফ্রিকাতেও হয় নি, যতই টুটসি আর হুটুরা পারস্পরিক গণহত্যা করুক, তবুও তাদের কোনো সরকার বেশিদিন ক্ষমতায় টিঁকতে পারে নি। আর টিঁকতে না পারার মানে হচ্ছে, এই সব সামরিক নেতারা নিজেদের ছেলে মেয়ে পরিবারকে মার্কিনদেশে পাঠিয়ে দিয়ে (যা কিনা প্রকৃতপক্ষে ওদের কাছে নিজেদের পরিবারকে গচ্ছিত রাখা; ওদের যখন প্রয়োজন পড়বে, তখন রাজনৈতিক কারনে এই সরকার বা, ওই সরকার বদলে কাজে লাগবে, যেমন লেগেছে সোমালিয়াতে) নিজেরা ততদিনের জন্যে অপেক্ষা করা যতদিন না গণেশ ওল্টাতে তাদের ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড়াতে হয়। এর মধ্যেই যা পারো টাকা লোটো আর যেরকম ইচ্ছে বেঁচে থাকো। পাকিস্তানেও তাই।  কিন্তু মায়ানমারের পরিস্থিতি একটু আলাদা, কারণ দেশটির চতুর্দিকে বনাঞ্চল থাকায়, সে দেশের মানুষ কোথাও কোনো বিশেষ পথে পড়শি দেশে সরে পড়তে পারে না, আর তাই বাধ্য হয়ে ওখানেই মরতে হয়। তাই রেঙ্গুনের সারস্বত সমাজ মূল্যহীন হয়ে পড়ে; আর তারপর মায়ানমারে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থা বা পরিকাঠামো না থাকাতে কেউ বিদেশেও সহজে ঘাঁটি গাঁড়তে পারে না; এমনকি থাইল্যান্ডেও নয়। এই ভাবে সে দেশটিকে একেবারে উত্তর কোরিয়া বানিয়ে রাখা সহজ। উত্তর কোরিয়াতে অবশ্য চৈনিক শিক্ষা ব্যবস্থা বেশি না হলেও ছিঁটেফোঁটা চলে, বাইরের পৃথিবী জানতে না পারলেও তারা উত্তর কোরিয়ার প্রতিশ্রুতিবান ছাত্রছাত্রীদের চিনে পড়াশুনো আর প্রশিক্ষণের জন্যে পাঠায়। এইটুকুন কথা মায়ানমার এর বিশেষ অবস্থা বোঝানোর জন্যে। মূল কথা, সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে শুধুই সামরিক শাসন দিয়ে দীর্ঘদিন দেশ চালানো যায় না, বরং একটা অসামরিক ব্যবস্থা বানাতে হয়। এই অসামরিক ব্যবস্থা একটা মুখোশ, যা আসলে মানুষকে একটা অলীক শিবিরে বিভাজিত রেখে শোষণের একটা স্থায়ী ব্যবস্থা চালু করে। ভারতে একেবারে অপোগন্ড ব্যবস্থাপনার (ম্যানেজমেন্ট) গুরুদের দিয়ে AI  বা যন্ত্রমেধার কাল্পনিক প্রাসাদ বানানো হয়, আর সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর দৌলতে সাধারণ অল্পমেধা কিন্তু প্রগাঢ় ইঞ্জিরি বাকপটু নাগরিক পয়সাওয়ালাদের মাথা মুড়িয়ে দীক্ষা দেওয়া হয়। আর এর বিপরীতে আছে প্রচুর "সচেতন সারস্বত সমাজ" বা সমালোচক সমাজ যারা পুরোটাই AI এর বিরোধিতা করে AI সম্বন্ধে একটা ভয়ের আবহাওয়া তৈরী করে। এই দুই চূড়ান্ত দ্বানুক চিন্তার মধ্যেই বাস্তবতা লুকিয়ে থাকে, কারন 'চূড়ান্ত চিন্তা' কখনো বাস্তব হয় না, সেগুলো দিয়ে একটা 'মডেল' খাড়া করা হয় মাত্র। বাস্তবতা সবসময়েই কিছুটা এর থেকে, কিছুটা ওর থেকে নেওয়া একটা মধ্যবর্তী পরিসর এর মধ্যে থাকে, যা আবার স্থানু নয়, বরং দোদুলের চলমান।  

আসলে এগুলো যে বাস্তবতা কে দেখায় না, তা হচ্ছে প্রযুক্তি যার হাতে সেই 'কেন্দ্র'ই তাকে চালায়; সে কিন্তু এই দুই দ্বানুক অবস্থানের সঙ্গে একই সমতলে নেই, তাই সহজে চোখে পড়ে না। এই দূরবর্তী অন্য সমতলে (তৃতীয় একটি মাত্রা বা ডাইমেনশন এ অবস্থিত) থাকা 'কেন্দ্র' টিই হচ্ছে পুঁজির ব্যবস্থাপনা। পুঁজিটাই চালিকা শক্তি, পুঁজিপতি শ্রেণীই তার পরিচালক। তারা এই প্রযুক্তিকে আরো বেশি সম্পদ ও পুঁজি একত্রীকরন এবং তির্যকিকরন বা skewness এর দিকে ধাবিত করবে। পুঁজি সম্পদের একটা মানক মাত্র, যা কারো কাছে বেশি থাকা মানে কোথাও না কোথাও সেই একই সময়ে কারো কাছ থেকে পুঁজি উবে যাওয়া। এই তির্যকিকরন তাই পুঁজিবাদে কিছু মানুষকে অতিধনী আর একই সাথে প্রচুর মানুষকে ক্রমে ক্রমে নিঃশেষিত করবেই। ক্ষমতার সুতোটা কিন্তু এদের হাতেই থাকে অর্থাৎ 'জলে জল বাঁধে', প্রযুক্তি সবসময়েই পুঁজির দাস, তার নিজের কোনো নিজস্ব গতিধারা (eigenvector) নেই। সুতরাং AI  নিয়ে আলোচনা এই পুঁজিপতিদের পুঁজিগঠনের প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো স্বয়ং গতিসম্পন্ন নয়। প্রশ্নগুলো এবার পরিষ্কার করে রাখা যায়। 

গত শতাব্দী থেকে এখনো পর্যন্ত প্রযুক্তি বিপ্লব কোনটি এবং কেন? 'বিপ্লব' মানেই হচ্ছে জনগণের হাতে ব্যাপক গণতান্ত্রিকায়ন, অর্থ ব্যাপক থেকে ক্রমশ ব্যাপক মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারে যা মানুষের প্রয়োজন মেটায়। এই কিছু মানুষের ব্যবহারের মাপকাঠিতে এক কুক্ষিগত ক্ষুদ্র থেকে ক্রমশ কুক্ষিগত হয়ে পড়া প্রযুক্তি কে প্রযুক্তি বিপ্লব বলা যায় না, যেমন লজিস্টিকস বা যাতায়াত ব্যবস্থা যতই জনগণের কাজে লাগুক তার মালিকানার নিরিখে তা কিন্তু কিছুতেই কোনো গণতান্ত্রিকিকরণ নয়। তাই মালিকানার নিরিখে মোটরগাড়ির সংখ্যাবৃদ্ধি বা প্রাচুর্য প্রযুক্তির গণতান্ত্রিকিকরন  নয়, তাই মোটর গাড়ির উৎপাদনকে এক সময়ে (কয়েক দশকের বেশি নয়) একটা মোড় ঘোরানোর মুহূর্ত হিসেবে যা ধরা হয়েছিল তা কিন্তু আজকে মুখ থুবড়ে পড়েছে। পৃথিবীতে এখন ক'টি এরকম হাব টিঁকে আছে? কিন্তু জনপরিবহনের প্রয়োজন প্রচুর বেড়েছে। কিন্তু তাকে বহুল ব্যবহার করলে ব্যক্তি মানুষের থেকে সম্পদ হরণের হার কমতে থাকবে, আর তাই পুঁজিপতি এবং আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদ চাইবে বেশি সংখ্যক মানুষকে কম সংখ্যক বাহনে গুঁতিয়ে ঢুকিয়ে প্রতি যাত্রায় বেশি মুনাফা হাসিল করা। এই পদ্ধতি বাধাহীন উন্নতিতে চলতে পারে না, এক জায়গায় সে আর এগোতে পারবে না। সেটাই তার চূড়ান্ত বিকাশ। আর তাই হয়েছে। জনপরিবহন এখন আর তার মুনাফার হার কে আগের মতো রাখতে পারছে না; উদাহরনস্বরূপ ভাঙাচোরা পুরোনো রেলশকট গুলোকে বাইরে রংচং করে বাহ্যিক নয়া রেলগাড়ি বলে চালানো হচ্ছে যা একটা দুটো যাত্রার পরেই এই নয় সেইকারনে আবার অকেজো হয়ে পড়ছে, আর তাদের মেরামতির পেছনে যে খরচ তা সেই রেলগাড়িকে পুনরায় এবং খুব দ্রুত ব্যবহার করার পক্ষে অন্তরায়। সর্বোপরি জ্বালানির অপ্রতুলতার কারণে  রেলভাড়া বেড়েই চলেছে এবং ক্রমশই তা মানুষের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর অর্থ জনপরিবহন এখন আর কোনো বৈপ্লবিক প্রতিশ্রুতি কে বাস্তবায়িত করতে পারছে না। কিন্তু যে শেষতম 'প্রযুক্তি বিপ্লব' সংগঠিত হয়েছে তা হচ্ছে টেলিকম্যুনিকেশন। যত বেশি তা যত দ্রুত প্রায় প্রত্যেক কর্মীমানুষের হাতে চলে এসেছে আর ততই তার বাজার মূল্য কমছে এবং কমবেও আরো দ্রুত হারে। অর্থাৎ প্রযুক্তি কোনো 'বিপ্লব' আনবে কিনা তা নির্ধারিত হবে মানুষের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সংখ্যাবৃদ্ধির হারের দ্বারা।  ঠিক এই দুটো বিবদমান উপমা তাই কাজে লাগবে আমাদের AI  বনাম অন্য আসন্ন প্রযুক্তির কাজিয়া বুঝতে। 

প্রযুক্তি ব্যবহারের গণতান্ত্রিকতা যে 'প্রযুক্তি বিপ্লব' আনে, তাই দীর্ঘদিন টিঁকে থাকে। টেলিকম্যুনিকেশন গাড়ি শিল্পের আগেই শুরু হয়েছিল, আজ তা নিত্য নতুন রূপে আরো পরিসর বাড়াচ্ছে। এবার দেখা যাক কোন অন্য প্রযুক্তিগুলো নতুন দিগন্ত খুলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই  প্রযক্তিগুলোকেই আমরা দেখবো একেকটা শ্রেণী সংগ্রাম হিসেবে।  

১) উর্জা বা শক্তি: আমরা এতদিন চালাচ্ছি খনিজ জ্বালানির ওপর নির্ভর করে উর্জা বা শক্তি নিষ্কাশনে। বহু দিন আগে থেকেই নবায়নযোগ্য উর্জার উন্মেষ ঘটেছিলো। অন্তত: ১০০ বছর আগে, কিন্তু তখন মানুষকে ভাবতে বাধ্য করা হয়েছিল (একেবারেই সমস্ত রকমের কৌশল প্রয়োগ করে) যে খনিজ জ্বালানি মাটির তলায় আছে অঢেল এবং তা বহু শতাব্দী ধরেই লাগামহীন ভাবেই সুলভে পাওয়া যাবে। এটা অনেক বিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীরা বুঝে ছিলেন যে সসীম বা সীমাবদ্ধ (পৃথিবীর আয়তন দ্বারা সীমিত) জ্বালানি কখনো অসীম হতে পারে না, আর তা নবায়নযোগ্য নয় যেহেতু, তা আরোই সীমাবদ্ধ। তারা এবং পুঁজিপতিরা এবং পুঁজিপতিদের পেটোয়া সমাজনিয়ন্ত্রকরা খুবই ভালো করেই তা বুঝেছিলো, তাহলে তারা কেন প্রথম থেকেই নবায়নযোগ্য অসীম উর্জার ব্যবহার কে নিয়ে তাদের কার্যকলাপ কে সেই পথে বাড়িয়ে তোলে নি? এখানেই রাজনীতি, এখানেই শ্রেণিসংগ্রাম।  সসীম সম্পদ এবং অনবায়নযোগ্য উর্জা তো কুক্ষিগত করা যায়, তাই কারো কাছে থাকবে আর কারো কাছে থাকবে না। অর্থাৎ যাদের কাছে নেই বা কম আছে তাদের থেকে যাদের কাছে আছে তারা সম্পদ ছিনতাই করতে পারবে বর্ধমান হারে। পুঁজির অসম কেন্দ্রীভবন হবে অর্থাৎ পুঁজি গঠন বা capital formation হবে। নবায়িত, নবায়নযোগ্য অসীম শক্তি বা উর্জা কখনোই কিছু পুঁজিপতির হাতে সম্পদ কে কুক্ষিগত করতে দেবে না। নবায়নযোগ্য সম্পদ মানুষের কাছে অঢেল থাকবে এবং মানুষ ইচ্ছেমতো তা ব্যবহারও করতে পারবে, যা সবার জন্যে সব সময়ে সুলভ তার কোনো বাজার মূল্য বা ভ্যালু থাকে না। পুঁজিবাদ সেটা একদম প্রারম্ভিক দিন থেকেই বোঝে। তাই সমস্ত বৃহৎ পুঁজিগোষ্ঠীরা সব সময়েই এই খোলা উর্জা এবং তার ব্যবহার ও তার বিকাশকে রুদ্ধ করে এসেছে (এ নিয়ে বিখ্যাত কয়েকটি সিনেমাও বেরিয়েছিল এবং তা যথেষ্ট জনপ্রিয়ও হয়েছিল, কিন্তু পরে মার্কিন দেশে আদালত এর সাহায্য নিয়ে সেই চলচিত্র কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো)। পুঁজিবাদের স্বার্থ স্পষ্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল তৈল খনিগুলোর অধিকার কাদের হাতে থাকবে। এবার আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, কুর্দিস্তান এবং ইউক্রেনের তৈলকূপগুলোর ক্ষমতা কার হাতে থাকবে সেটাই প্রায় একমাত্র উদ্দেশ্য। এই খনিজ জ্বালানি যেহেতু সসীম এবং প্রত্যেকটি দেশে সমান ভাবে পাওয়া যায় না, তাই তা 'মূল্য' বা value তৈরী করে।  অস্ট্রেলিয়াতে তো জল বিক্রি হচ্ছে।  সেটাই এখন ও দেশে সবচেয়ে বড়ো  ব্যবসা। অর্থাৎ নবায়নযোগ্য সুলভে পাওয়া অঢেল উর্জার বিকাশ কিছুতেই পুঁজির স্বার্থসম্মত নয়। উর্জা তাই একটা হাতিয়ার। আগে ছিল "দাস", এখন হলো সীমিত উর্জা। দাসের সুলভ্যতা পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদ আর উপনিবেশবাদ এনেছিল। সেই উপনিবেশবাদ বিস্তৃত হলো ফসল এবং বিশেষ করে খাদ্য শস্য উৎপাদনকে কুক্ষিগত করে তাকে হস্তগত করার মধ্যে দিয়ে। আজকের নয়া উপনিবেশবাদের যুগে সাম্রাজ্যের আর প্রয়োজন নেই কারন পণ্যপরিবহনের সুলভতার কারনে এখন তৃতীয় বিশ্ব বা উৎপাদিকা দেশগুলোতে সরকার গুলোকে কিনে রাখলে অর্থাৎ মুৎসুদ্দি রাজনৈতিকদের আর মুৎসুদ্দি আমলাদের ধরে রাখতে পারলেই সেই সব উৎপাদিকা দেশ থেকে পণ্য সুড়সুড়  করে প্রথম বিশ্বের শোষক দেশ গুলোতে চলে যাবে। এটা করতে গেলে উৎপাদিকা দেশসমূহের শাসকদের খুব সীমিত কিছু 'স্বাধীনতা' দেওয়াই না হয় গেলো। তাতে মুত্সুদ্দিরা স্বাধীন হয়ে যায় না। টিকি সাম্রাজ্যবাদের বা প্রত্যক্ষ উপনিবেশের আমলে একটি দেশের হাতে থাকতো, আর এখন এই টিকি সবাই মিলে ধরে রাখে, এই যা ফারাক।  

২) উর্জার গণতান্ত্রিকিকরণের সাথে সাথেই তার বিতরণের ক্ষেত্রেও এই ধরণের শ্রেণিসংগ্রাম চলছে। পুঁজিপতিরা চাইবে যাতে এই বিতরণকে একচেটিয়াকরন করা যায়। তাই তারা যদিও উর্জার উৎপাদনকে সম্পূর্ণ কুক্ষিগত না করতে পারে (যখন এবং যদি তা খোলা এবং নবায়িত হয়) তবে তার বিতরণ যেন পুরোপুরি সবার কাছে সুলভ না হয়ে পরে অর্থাৎ কোনো না কোনো কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে তা করা যায়, এবং মানুষের শ্রমের উদ্বৃত্তকে কুক্ষিকরন করা যায়। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি কিন্তু আছে, মোটেই তা কষ্টসাধ্য নয়। একে বলে Power-over-IP, যেমন আছে Voice-over-IP (VOIP)। আজকে যে উপগ্রহগুলোতে সিগন্যাল বা সংকেত পাঠিয়ে উপগ্রহের বিভিন্ন কাজগুলো করা হয় এই পৃথিবীতে বসে, ঠিক সেই প্রযুক্তিকেই আর একটু ঘষেমেজে নামালেই প্রতিটি ঘরের বিদ্যুৎ বা উর্জার চাহিদা মেটানো যায়, কোনো খনিজ জ্বালানি র প্রয়োজনই পরে না। সিগন্যাল প্রসেসিং বা সংকেত পরিচালন খুবই সস্তা। ইতিমধ্যেই ড্রোন চালাতে POIP মানুষ ব্যবহার করেছে। এমনকি সমুদ্রের অতি গভীরেও তা ব্যবহার করছে কিংবা বর্জ্য নিষ্কাশনে এর ব্যবহার রয়েছে। 

৩) সিগন্যাল বা সংকেত পরিচালনার মধ্যে দিয়ে খুব অচিরেই ডিজিটাল সিটির প্রত্যেকটি কাজকেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে  ডিজিটাল avatar ("অবতার" নয়) দিয়ে চালানো যায়। IOT  দিয়ে  একসঙ্গে অনেক সম্মিলিত বা সমষ্টিগত কাজ করা যায়। কিন্তু সেগুলো কখন কোথায় কতটা ব্যবহার করা হয় বা হবে তা নির্ধারণ করে এখনো পুঁজিপতিরা, আগামীতে সেই অধিকার ধরে রাখার সমস্ত প্রচেষ্টা তারা করেই যাবে। শ্রেণিসংগ্রামটা সেখানেই। প্রযুক্তির গণতান্ত্রিকিকরনের বিরুদ্ধে পুঁজি 'বানানোর' কুশীলবদের সংগ্রাম তাই আগামী দিনের সংগ্রাম। 

এগুলোই হবে আগামীদিনের 'প্রযুক্তি বিপ্লব', যা আদ্যন্ত রাজনৈতিক। উৎপাদিকা শক্তির শ্রেণী সংগ্রামে যে এলিয়েনেশন আছে, যে উৎপাদক আর পরস্বত্বভোগী পরস্বাপহারীর পুঁজির বিনিময়ে শ্রম চুরি এবং শ্রমলব্ধ বস্তূর দ্বারা শ্রমশক্তি শোষণের শ্রেণী সংগ্রাম উৎপাদনের প্রতিমুহূর্তে চলে, যেরকম প্রকৃতি এবং পরিমণ্ডল কে শোষণ করে নিঃশেষিত করার লড়াই চলে পুঁজির বিরুদ্ধে, সেইরকম সহজ সুলভ অসীম উর্জা বা শক্তির সঙ্গে পুঁজির সংগ্রাম একই সূত্রে গাঁথা। আগামী বিপ্লব অন্তত এই তিনটে মাত্রা বা ডাইমেনশনে চলবে। সামাজিক সমষ্টিগত সচেতনতা এরই মধ্যে দিয়ে আরো উন্নত ধী ও বোধ নির্মানে বাস্তবায়িত হবে।

 

0 Comments
Leave a reply