প্রকৃতির অপার রহস্যের সমাধানকল্পে বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে কোন শক্তি যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় আমরা তাকে স্বাগত জানাতে পারি না। ধর্ম যে মাঝেমাঝেই বিজ্ঞানের অগ্রগতির পথে বেড়া তোলার চেষ্ঠা করেছে ইতিহাসে এমন অভিজ্ঞতার অন্ত নেই। ডারউইনের মতবাদ বনাম খ্রিস্ট ধর্ম, গ্যালেলিও বনাম ধর্মযাজক, ইত্যাদি আরো অনেক উদাহরণ উপস্থিত করা যায়। তবু পাশাপাশি আমাদের এও স্মরণে রাখতে হয় যে মধ্যযুগান্তে বিজ্ঞানচর্চার প্রসার হয়েছিল চার্চের ছত্রছায়ায়। আজও অগণিত বিজ্ঞানী ঈশ্বর-বিশ্বাসে অবিচল। এতে তেমন কোন ক্ষতি নেই। ধর্মের বিপজ্জনক দিকটি হল কুসংস্কার, তা বিজ্ঞান-ভিত্তিক মননের পরিপন্থী ঠিকই, তবে ধর্মের সবচেয়ে ভয়ংকর আরেকটি দিক রয়েছে, সে হল সাম্প্রদায়িকতা।
ধর্মের শুভদিকগুলি সবসময় অস্বীকার করা যায় না, বস্তুবাদের বাইরে গিয়েও বিশ্বের সঙ্গে ব্যক্তি মানুষের যোগাযোগের নিবিড় সাধনা যদি থেকে থাকে, তাতে বিশ্ব-সমাজের কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু ধর্মেকে আশ্রয় করে প্রশ্রয় পায় মৌলবাদ এবং এর পেছনে থাকে অর্থনৈতিক লোভ যা সম্প্রদায়ের নামে অর্থ নৈতিক ভেদাভেদকে ঢাকা দিয়ে রাখে।
যে বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ করে দেয়, সুখ ও আরাম দেয়, গবেষণার প্রেরণাকে শাণিত করে সেই বিজ্ঞানই আবার সমরাস্ত্র তৈরি করে। সাম্প্রদায়িক বুদ্ধি যখন আমাদের চালিত করে, তখন বিরোধিতা আর হননেচ্ছা আমাদের একমাত্র হাতিয়ার হয়ে ওঠে। আর কোন রাষ্ট্র যদি সাম্প্রদায়িক নীতি নেয় তবে সে রাষ্ট্র অথবা সে রাষ্ট্র মদতপুষ্ট সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি, বিজ্ঞানের প্রধান কথা ‘যুক্তি’ ভুলে বিজ্ঞানের ফসল সমরাস্ত্র দিয়ে অন্য জনগোষ্ঠীকে নিকেশ করতে চায়।
সম্প্রতি পহেলগামে পাকিস্থান রাষ্ট্রর মদতে এরকম এক উগ্রগোষ্ঠী বেশ কিছু অপর ধর্মীয় গোষ্ঠীর নিরীহ ভারতীয় নাগরিকের জীবন নিয়েছে। জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের হাতে প্রতিহিংসা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না, এবং অন্য ভাষা বোঝার মানসিকতাও অপর রাষ্ট্রের থাকে না। তাই বার্তা দিতে হয় অস্ত্রের আঘাতেই, নিরীহ মানুষকে হত্যা না করে, জঙ্গিদের উপর আক্রমন শানিয়ে। যার নাম দেওয়া হয়েছিল, ‘অপারেশন সিঁদুর’।
এবারের পুরোগামী সংখ্যায় আমারা এ বিষয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ ছাপিয়েছি। পাঠকদের স্মরণে রাখতে অনুরোধ করব, এই নামকরণের বিরুদ্ধেও আমাদের আপত্তি থাকা প্রয়োজন, কেননা, ভারতের সংবিধান এখনো ধর্ম নিরপেক্ষ। যদি আক্রমণই একমাত্র রাস্তা হয়, তবে সেটির নামকরণেও আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। ভারতীয় রমণীরা সকলে সিঁদুর পরে না।
09 August, 2025
সংবিধানে লেখা থাকলেই ভারতে তা যে মেনে মেনে চলা হয়নি এর ভুরিভুরি উদাহরন আছে। কেন? উত্তর আছে সম্পাদকমন্ডলীর কাছে? যদি থাকে সেটা বলুন। না থাকলে এ সত্যকে এড়িয়ে গিয়ে কিছু বলাটা সমস্যার। সংবিধানে আছে সুতরাং মেনে চলতে হবে এই দাবী খুব দুর্বল এবং অবাস্তব। অভিনভ চন্দ্রচূড় এর Republic of Religion পড়ে দেখুন । বুঝবেন ভারতের "ধর্মনিরপেক্ষতার" প্রকৃত অর্থ কী। এসব না বুঝে ,জেনে জাতীয় প্রোগ্রামের নাম সিন্দুর কেন এ প্রশ্ন তোলা অজ্ঞানতার পরিচয়। হিন্দুত্বের ধ্বজাধারীরা চরম এগ্রেসিভ সেখানে এই ধরনের আপত্তি শুধু আপত্তি রেজিস্টার করা ছাড়া আর কী। নিজেকে প্রবোধ দেওয়া- আমি তো আপত্তি করেছি- কি লাভ? যারা এসব বলেন তারা হিন্দু ধর্মের অনেক কিছুই মানেন - জানেন- প্রিচ করেন। আগে নিজেকে মুক্ত করুন না হলে পুরোটাই আত্মপ্রবঞ্চনা। আলোচনা অভিনন্দনযোগ্য।